‘রাক্ষুইস্যা যমুনা সবকিছু গিইল্লা খাইছে’
Published: 17th, April 2025 GMT
‘রাক্ষুইস্যা গাঙ্গ সবকিছু গিইল্লা খাইছে। একটা সময় ঘরবাড়ি, জমিজমা, গরু-ছাগলসহ সব ছিল। সহায়সম্বল সব গিইল্লা খাইলো গাঙ্গে। এই জীবনে ৩০ বার ভিটা ভাঙছে। মনে করছিলাম, এই ভিটাতে মরব। কিন্তু তা আর হইল না। শেষ বয়সে আইস্যা নতুন কইরা আবার ভিটা হারা হইলাম।’ নদীভাঙনে ভিটেমাটিসহ অবশিষ্ট জমিজমা হারানোর আশঙ্কায় আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বললেন ৬২ বছর বয়সী রহিমা বেগম। তিনি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরডাকাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
সম্প্রতি যমুনা নদী ভাঙনকবলিত এলাকাটিতে তাঁর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর প্রতিবেদকের। রহিমা বেগমের সাত সন্তান। সন্তানদের কাছেই থাকেন তিনি। দেখা যায়, যমুনা নদীর ভাঙনে এক সন্তানের ঘরসহ ভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে বাকি ছয় সন্তানের বসতভিটা। ভাঙনের একদম কাছেই খোলা আকাশের নিচে তাঁর এক পুত্রবধূ দুপুরের রান্না করছিলেন। তাঁর অন্য স্বজনেরা ঘরবাড়ি সরাতে ব্যস্ত। নদীর তীর থেকে কিছুক্ষণ পরপর ভাঙনের শব্দ কানে ভেসে আসছিল। তীরের কাছে গিয়ে দেখা গেল, বিশাল আকার ধরে পাড় ভেঙে পড়ছে।
তীরের কাছে আকা মিয়ার বসতভিটা। তবে কোনো ঘর নেই। সব স্থাপনা ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পড়ে আছে বসতবাড়ির ভিটার জমি। হয়তো অল্প সময়ের মধ্যে নদীগর্ভে চলে যাবে সেটি। কয়েক মাস ধরে ভাঙন চললেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভাঙন রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়নি, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।
কয়েক মাস ধরে ভাঙন চললেও ২৮ মার্চ থেকে ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করে। রহিমা বেগমের বড় ছেলে মো.
বসতভিটাটিতে সাত ছেলেসহ নাতি-নাতনিদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন বৃদ্ধা রহিমা বেগম। এক যুগ আগে সর্বশেষ বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। এর আগে ৩০ বার তাঁর বাড়ি গ্রাস করে নেয় যমুনা। তিনি বলেন, কম বয়সেই বিয়ে হয়। তাঁর স্বামী শরাফ উদ্দিনরা সাত ভাই ছিলেন। ওই গ্রামের মধ্যে তাঁদের পরিবারটিই ধনাঢ্য ছিল। বিয়ের পর থেকে এই পর্যন্ত প্রায় ৩০ দফা নদীভাঙনে তাঁদের জমি বিলীন হয়েছে। যেটুকু ভিটে টিকে ছিল, সেটুকুও বিলীন হওয়ার পথে। কোথায় যাবেন, এই মুহূর্তে কোনো উপায় দেখছেন না তিনি।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় যমুনা নদীর ভাঙনের মুখে অনেক পরিবার বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর ডাকাতিয়াপাড়া গ্রামেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বসতভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।