কৃষিগুচ্ছভুক্ত ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণ আবেদন শুরু
Published: 17th, April 2025 GMT
কৃষিগুচ্ছভুক্ত ৯ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) শুরু হওয়া এ কার্যক্রম চলবে ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত। আবেদন বাবদ ফি এক হাজার টাকা।
ফল ও পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে কৃষিগুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘সাইন ইন’ পৃষ্ঠায় নিজের পিন নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে। এরপর ড্যাশবোর্ডে গিয়ে ‘ফলাফল’ অপশনটি নির্বাচন করলে ফল দেখা যাবে। সেখান থেকেই ‘ফল পুনর্নিরীক্ষণ’ অপশনটি নির্বাচন করে আবেদন সম্পন্ন করা যাবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার কৃষিগুচ্ছভুক্ত ৯ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। মেধাতালিকায় মোট উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩ হাজার ৮৬৩ জন। সাধারণ মেধাতালিকায় ৩ হাজার ৭৯৪ জন, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ৫, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ৩৭ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ২৭ জন মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা, উপজাতি বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বা পার্বত্য অঞ্চলের অ–উপজাতি কোটা ও প্রতিবন্ধী কোটার জন্য নির্ধারিত আসনে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ১৩৫টি আসন সাধারণ মেধাতালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
মেধাতালিকার পাশাপাশি দ্বিগুণ অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। মেধাতালিকার ফল কৃষিগুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। এবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ৯৬ হাজার ৮৪১ জন আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৯৪ হাজার ২০ জন ভর্তি পরীক্ষার ফি দিয়েছেন আর প্রবেশপত্র ডাউনলোড করেছেন ৯১ হাজার ৩৭ জন। তা ছাড়া ৮০ হাজার ৮৯০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে সরকার, আবেদন শুরু১৫ এপ্রিল ২০২৫বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৯টি কেন্দ্র ও ১৩টি উপকেন্দ্রে ১২ এপ্রিল একযোগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক আসনসংখ্যা হলো—বাকৃবিতে ১ হাজার ১১৬টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩৫, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০৫, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭৫, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৮০, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫০, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪২৩, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৯ ও কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০টি।
আরও পড়ুনকানাডায় অভিবাসনে নতুন উদ্যোগ: বাড়তি সুযোগ ফ্রেঞ্চ ভাষা জানলেই১৬ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’