Prothomalo:
2025-11-03@06:14:41 GMT

হারিয়ে যাওয়া ময়ূর

Published: 17th, April 2025 GMT

বাংলাদেশ বন বিভাগের সহযোগিতায় আইইউসিএন-বাংলাদেশ ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বারের মতো প্রাণীদের বর্তমান অবস্থান নির্ধারণের জন্য লাল তালিকা প্রকাশ করে। এ তালিকায় ১৯ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে উল্লেখ করা হয়। এগুলোর মধ্যে স্থলজ পাখির সংখ্যাই বেশি। ময়ূরও রয়েছে এর মধ্যে।

গত ৩ মার্চ বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবসে ময়ূর বনে ফিরিয়ে আনার পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের আলোচনা আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। যদিও দেশ থেকে অনেক বছর আগেই ময়ূর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বন বিভাগ আমাদের বন ও বন্য প্রাণীর জিম্মাদার। বিভাগটি দীর্ঘদিনের ‘উৎপাদন বনায়নের’ জায়গা থেকে সরে এসে ইদানীং ‘সংরক্ষণ বনায়নের’ অনুশীলন করছে, এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ। ময়ূর বিলুপ্তির অবসান ঘটিয়ে বন বিভাগ ‘সংরক্ষণবিদ’ হিসেবে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি। তবে কিছুটা অনিশ্চয়তা তো থেকেই যায়। যেমন গাজীপুরে যদি ময়ূর অবমুক্ত করা হয়, তবে সেখানকার আবাসস্থলের উপযুক্ততা মূল্যায়ন করা জরুরি। যে পাখিগুলো ছাড়া হবে, তাদের জিনগত বৈশিষ্ট্য মূল্যায়ন করা দরকার এবং যে স্টক থেকে নেওয়া হচ্ছে, প্রয়োজনে ভবিষ্যতে সেই একই স্টক থেকে আনা যাবে কি না, সেটি যাচাই করে দেখতে হবে। যে এলাকায় অবমুক্ত করা হবে, সেখানকার স্থানীয় জনগণকে এ কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।

ময়ূর ‘ধুলাবালি গোসল’ করে থাকে পালকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং শরীরের বাইরের অংশ পরজীবীমুক্ত রাখতে। তাই এদের বসবাসের এলাকায় বেশ কিছুটা খোলা জায়গা রাখতে হবে।

ভারতবর্ষে ময়ূর একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় নৃত্যপরায়ণ পাখি। মোগল সম্রাটেরা ‘মম তনুর ময়ূর সিংহাসনে’ বসে দীর্ঘ বছর ভারতবর্ষ শাসন করেছেন। সুধীন দাশগুপ্তের লেখা ও সুরে সম্ভবত ১৯৫৯ সালে আশা ভোসলে গাইলেন, ‘নাচ ময়ূরী নাচ রে, রুম ঝুমা ঝুম নাচরে।’ ময়ূরী কিন্তু নাচে না, প্রজননকালে ময়ূর নাচে তার হেরেমের ২-৫টি ময়ূরীকে আকর্ষণ করার জন্য। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় গীত, সুধীন দাশের ‘ময়ূরীকণ্ঠী রাতেরও নীলে আকাশে তারাদের ঐ মিছিলে’ গানটিও অনেক ভালো লাগার মতো একটি গান। শাহ আবদুল করিমের লেখা ও সুরে ‘ময়ূরপঙ্খি নাও’ গানটিও বহুল শ্রুত একটি গান। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে।’ বিদ্রোহী কবি নজরুলও অবাক বিস্ময়ে জানতে চেয়েছেন, ‘ওরে বনের ময়ূর কোথায় পেলি এমন চিত্রপাখা।’

ময়ূর মানুষের মধ্যে এক অতি অলৌকিক স্বর্গীয় অনুভূতির জন্ম দেয়। অনেকের কাছে এটি সত্যের প্রতীক।

আজ থেকে বহু বছর আগে আমি দিল্লি থেকে ট্যাক্সিতে রাজস্থানে যাই। দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় দেয়ালে, গাছে ময়ূর দেখেছি। রাজস্থানের কাছাকাছি যেতেই দেখলাম, সব গাড়ি দুই পাশে থেমে যাচ্ছে ময়ূরের রাস্তা পারাপারের কারণে। রাজস্থানের কৃষিনির্ভর একটি গ্রামের আশ্রমে থাকার ব্যবস্থা হলো। ঘুম থেকে উঠে অসহ্য গরমে নির্ঘুম রাতের ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল এতগুলো ময়ূর একসঙ্গে দেখে—নির্ভয়ে ঘুরছে, গ্রামটি যেন ওদেরই।

এর কয়েক বছর পর মহারাষ্ট্রের পুনেতে যাই বন্ধুদের নিমন্ত্রণে। শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে এক গ্রামে বেড়াতে গেলাম একদিন। গাড়ি দূরে রেখে হেঁটেই গ্রাম দেখতে গিয়ে চারপাশে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ানো ময়ূরের ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারছিলাম না। ক্যামেরা বের করতেই এক ভদ্রমহিলা মাঠের কাজ রেখে আমার কাছে দৌড়ে এসে অনুরোধ করলেন আমি যেন ময়ূরদের বিরক্ত না করি। এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হলো সেদিন। ওই গ্রামের নাম রাখা হয়েছে ময়ূরেরই নামে। মারাঠি ভাষায় ‘মোর’ অর্থ ময়ূর এবং ‘চিনচ’ অর্থ তেঁতুল, এই নিয়ে ‘মোরাচি চিনচোলি’, অর্থাৎ ময়ূরের জন্যই তেঁতুলগাছ। মনে হলো, ভারতের লক্ষাধিক ময়ূরের অর্ধেকই এখানে বাস করে। এ গ্রামে কোনো কৃত্রিম রাসায়নিক ব্যবহার না করেই উৎপাদিত হয় কৃষিপণ্য। ওখানে সবকিছুই মাঠ থেকে সরাসরি খাবার টেবিলে আসে গ্রামবাসী ও পর্যটকদের জন্য।

আমরা দীর্ঘদিন শুধুই আমাদের বন্য প্রাণী বিলুপ্তির আক্ষেপ পুষে রেখেছিলাম। এদের ফিরিয়ে আনার তেমন কোনো উদ্যোগ গৃহীত হয়নি। ময়ূর ফিরিয়ে আনার উদ্যোগটি সে কারণেই প্রশংসার দাবি রাখে। আগামী যেকোনো বর্ষায় আমাদের চিরচেনা ময়ূর প্রকৃতিতে পেখম মেলে নাচবে, আমরা বন্য প্রাণী সুরক্ষার এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখব—এ স্বপ্ন তো দেখতেই পারি।

মো.

আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন য প র ণ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা

রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।

উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।

সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।

তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।

মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।

রাজশাহী কালেক্টরেট মাঠে বইমেলা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা। গতকাল রোববার সন্ধ্যায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ