মিষ্টি ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন অভিযোগ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, তিনি নিজেও বহু দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছেন। কেউ ভ্যাটের রিসিট দেন না। তারা ইলেক্ট্রনিক্স ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি ব্যবহার করেন না। ভবিষ্যতে মিষ্টির দামের সাথেই ভ্যাট যুক্ত করা হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব বোর্ড ভবনে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

বর্তমানে মিষ্টির ওপর ১০ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। গত বছর এই ভ্যাট ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এই ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব দেন বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শ্রী ননী গোপাল ঘোষ। তিনি বলেন, মিষ্টির ওপর যখন সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ছিল তখন অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ভ্যাট বাড়ার কারণে বিক্রি কমছে, রাজস্বও কমছে। তাই ভ্যাট ১০ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হোক।

এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাট ফ্রি করে দিলে রাজস্ব বাড়বে- এটা একটা আজগুবি কথা। মিষ্টি ব্যবসায়ীরা ১৫ শতাংশের ওপর অঙ্ক করে দেখলেন রাজস্ব আদায় কম, সাড়ে ৭ শতাংশ হলে বেশি হয়- এ রকম জাদুকরি দেশে বাস করলে তো হবে না।

নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আব্দুর রহমান খান জানান, তিনি বহু মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছেন। কোনো দোকানদারই তাঁকে ভ্যাটের রিসিট দেননি। তারা ইএফডি মেশিনও ব্যবহার করেন না। ভ্যাট দেন জনগণ। তিনি নিজেও যতবার মিষ্টি কিনেছেন সব জায়গায় ভ্যাট দিয়েছেন। কিন্তু সেই ভ্যাট সরকারের কোষাগারে যায়নি।

ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে মিষ্টিতে সুপারশপের মতো ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, মিষ্টির দামের সঙ্গে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভ্যাট আলাদা করে ধরা হবে না। ক্রেতা ভ্যাট দেখে চমকে উঠবে না। এমন একটা আদেশ প্রস্তুত করা হয়েছে। মোট মূল্যের ওপর ভ্যাট ধরা হবে। ক্রেতার জানার দরকার নেই যে তিনি কত টাকা ভ্যাট দিয়েছেন। এই একই পদ্ধতি এখন সুপারশপে রয়েছে। 

সভায় স্থানীয় সোলার প্যানেল উৎপাদকদের ৫০০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। যাত্রীবাহী নৌযানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ওপর মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়ে অ্যাসোসিয়েশন। 
এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) জেট ফুয়েলের ওপর আমদানি শুল্ক ও মূসক অব্যাহতি, উড়োজাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ওপর কর হ্রাসের প্রস্তাব করেছে। এছাড়া ৬৫ শতাংশ কাঁচামালের ওপর সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রান্সফরমার অ্যান্ড সুইচগিয়ার।

যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্সের ব্যাপারে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো তাদের টিকিটের দামের সঙ্গে যোগ করে নিয়ে নেয়। এই ট্রাভেল ট্যাক্সের টাকা সরকারের টাকা, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই টাকা সরকার পায় না। অনেক ক্ষেত্রেই এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো সরকারি কোষাগারে এটা জমা দেয় না বা কখনও কখনও কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়, তারা ব্যবসা বন্ধ করে চলে যায়। সরকারের কোটি কোটি টাকা পাওনা থাকলে সেটা দেয় না। এসব কারণে এনবিআরের পরিকল্পনা হচ্ছে- যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স যাত্রী নিজে দেবে। তারা টাকা জমা দিয়ে চালান নেবে এবং সেটা দেখিয়ে বিমানে উঠবে। 

তিনি বলেন, এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ট্রেন্ড ফ্যাসিলিটেড করা হবে। লুফ হোলগুলো বন্ধ করা হবে। যতটা সম্ভভ বৈষম্য কমানো হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প রস ত ব দ ব যবস র ওপর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।

শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।

২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।

আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।

সূত্র: এনবিসি নিউজ

আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ