যশোরে ৩৫ ফুটবলারকে নিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের ক্যাম্প
Published: 17th, April 2025 GMT
সাধারণত বয়সভিত্তিক দলগুলোর ক্যাম্প ঢাকাতেই হয়ে থাকে। তবে এবার ভিন্ন পথে হেঁটেছে বাফুফে। প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে যশোরে শুরু হলো জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলের প্রস্তুতি ক্যাম্প।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে যশোর শামস-উল-হুদা একাডেমিতে এই ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম।
দেশসেরা কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের অধীনে দুই সপ্তাহের ৩৫ ফুটবলারকে নিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্প। দলে জায়গা করে নিতে বাফুফের ট্রায়াল দিতে আসা তিন প্রবাসী ফুটবলারও যোগ দিয়েছেন। এলিট একাডেমির ফুটবলারদের সঙ্গেই অনুশীলন করছেন তারা।
প্রথম দিন শারিরিক অনুশীলনের সঙ্গে সেরে ফেলেছেন প্রস্তুতি একটি ম্যাচও। সংশ্লিষ্টরা জানালেন, উন্নত সুযোগ-সুবিধা ও নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশের কারণেই অনুশীলনের জন্য শামস-উল-হুদা একাডেমিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে এই ক্যাম্পটি আগামি সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে ভূমিকা রাখবে।
জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলের খেলোয়াড় নাজমুল হুদা ফয়সাল বলেন, ‘‘শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির মাঠের কথা অনেক শুনেছি। আসলেই অনেক সুন্দর একটি মাঠ। টিমে না থাকলে এমন সুন্দর মাঠে খেলার সুযোগ হতো না। ধন্যবাদ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে।’’
অপর এক খেলোয়াড় আব্দুল কাদির বলেন, ‘‘যশোরে এমন সুন্দর পরিবেশে আশা করছি সুন্দরভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করতে পারব এবং দেশের জন্য ভালো কিছু উপহার দিতে পারব। এ একাডেমি থেকে অনেক খেলোয়াড় জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বে দিচ্ছে। সেদিক থেকে অবশ্যই এমন একটি একাডেমিতে ন্যাশনাল ক্যাম্পে আসতে পারাটাও অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।”
কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘‘সবসময় ক্যাম্প ঢাকাতে হয়। সেখানে নানা প্রতিবন্ধিকতা থাকে। মাঠে যাতায়াত, মাঠ সংকট থাকে। এখানে পর্যপ্ত মাঠ রয়েছে। একই সাথে নিরিবিলি ট্রেনিং করতে পারব। ফোকাসটা ট্রেনিংয়ে থাকতে পারবে। প্রথম দিনে খেলোয়াড়দের চাঞ্চল্যতায় মানসিকভাবে ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে। এ ধরনের ক্যাম্প আগামি সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে ভূমিকা রাখবে।’’
ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ শফিকুউজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহান এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন।
এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির পরিচালক শেখ শামস্-উল-বারী শিমুল ও অনুষ্ঠানের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান।
একাডেমির পরিচালক শেখ শামস্-উল-বারী শিমুল বলেন, ‘‘গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাতে ৩৮ সদস্যের জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দল সদর উপজেলার হামিদপুরস্থ শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিতে পৌঁছায়। তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন একাডেমির শিক্ষার্থীরা। আর ৩৮ সদস্যের জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলে মধ্যে ৩১জন খেলোয়াড় ৫ জন অফিসিয়াল ও দুইজন বল বয় রয়েছেন। চার জন খেলোয়াড় যোগ দেবে আগামিকাল শুক্রবার। সবমিলিয়ে ৩৫ জন ক্যাম্পে অংশ নেবে। টিমের জন্য তিনটি মাঠ প্রস্তুত আছে।”
তিনি আরো বলেন, “ঢাকার বাইরে এ প্রথম যশোর শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিতে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলে’র দুই সপ্তাহব্যাপী প্রস্তুতি ক্যাম্প শুরু হয়েছে। এর আগে ঢাকা বাইরে জাতীয় দলের কোনো আবাসিক ক্যাম্প হয়নি।’’
ঢাকা/রিটন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল এক ড ম র এক ড ম ত প রস ত ত উল হ দ টবল র
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।