নাগরিক ও ডিজিটাল পরিসর সুরক্ষায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে
Published: 17th, April 2025 GMT
নাগরিক ও ডিজিটাল পরিসর সুরক্ষায় সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আয়োজিত ‘সেইফগার্ডিং ভয়েস: সিভিল ও ডিজিটাল স্পেস শক্তিশালীকরণের কৌশল’ শীর্ষক এক কর্মশালায় তারা এই আহ্বান জানান। কর্মশালাটির আয়োজন করে ভয়েসেস ফর ইন্টারঅ্যাকটিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস)।
কর্মশালায় সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম, আইন ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং নাগরিক পরিসর শক্তিশালীকরণে একটি জাতীয় কৌশলপত্র পর্যালোচনা করে মতামত প্রদান করেন। কৌশলপত্রটিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জেন্ডার ডিসইনফরমেশন বা লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য ছড়ানোর বিষয়ে।
অ্যাকটিভিস্ট ও গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, আমাদের সমাজ এখনো নাগরিক পরিসরে লিঙ্গভিত্তিক বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিষয়টিকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতে পারেনি। এই ফাঁকটি দূর করতে প্রচলিত আইনগুলোকে সংস্কার করতে হবে।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল আর্টিকেল ১৯, মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, নিজেরা করি, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নন-প্রফিট ল, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, এঙ্গেজ মিডিয়া, স্পার্ক, সাঙ্গাত এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম।
ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, কীভাবে আইন ব্যবহার করে ভিন্নমত দমন করা হচ্ছে এবং কিভাবে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, ডিজিটাল হয়রানি এবং প্রযুক্তিনির্ভর হুমকি যেমন ‘ডিপফেইক’ ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
ভয়েসের ডেপুটি ডিরেক্টর মুশাররাত মাহেরা বলেন, নাগরিক ও ডিজিটাল পরিসর সংকুচিত হচ্ছে। এই অবস্থায় সিভিল সোসাইটিকে এমন আইন প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, যা মানুষের কণ্ঠকে রোধ করে না, বরং অধিকার ও ডিজিটাল মর্যাদাকে সমর্থন করে।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তরুণ ও সরকার—সবার সম্মিলিত চেষ্টাতেই নাগরিক ও ডিজিটাল পরিসরকে উন্মুক্ত, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা সম্ভব। তারা গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সিভিল সোসাইটি ও গণমাধ্যমের মধ্যে সংযোগ বাড়ানো ও জোরদার করার আহ্বান জানান।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গম অঞ্চলে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এখনো পিছিয়ে
বাংলাদেশের চর, হাওর, পাহাড় ও সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকার নারী ও কিশোরীরা এখনো পর্যাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা, বাজেট ও জনবলের ঘাটতি এবং সচেতনতার অভাবে এসব অঞ্চলে প্রজনন অধিকার বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (ডিজিএফপি) ২০২৫-৩০ মেয়াদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সমন্বিত কৌশলপত্রের মোড়ক উন্মোচন করেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত কর্মশালায় ‘দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য পরিবার পরিকল্পনা কৌশল’ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। কর্মশালার আয়োজন করে স্বাস্থ্য ডিজিএফপির ‘ক্লিনিক্যাল গর্ভনিরোধক পরিষেবা ডেলিভারি প্রোগ্রাম’। কারিগরি সহায়তায় ছিল মেরি স্টোপস বাংলাদেশ।
কর্মশালায় কৌশলপত্রটি উপস্থাপন করেন মেরি স্টোপস বাংলাদেশের পার্টনারশিপ অ্যান্ড ফান্ডরাইজিং প্রধান মনজুন নাহার। তিনি জানান, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০১৭-১৮-এর তথ্য অনুযায়ী, দুর্গম এলাকায় পরিবার-পরিকল্পনার ‘অপূর্ণ চাহিদার হার’ উচ্চ, যা মা ও শিশু উভয়ের ঝুঁকি বাড়ায়। পাহাড়, চর ও হাওর অঞ্চলে অধিকাংশ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায় না। নিয়মিতভাবে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাম্প হয় না। ফলে সচেতনতার অভাব ও যোগাযোগব্যবস্থার দুর্বলতায় সেবার গতি স্থবির হয়ে পড়েছে।
কী আছে ২০২৫-৩০ কৌশলে?
ডিজিএফপি ও মেরি স্টোপস বাংলাদেশ যৌথভাবে প্রণীত এই কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, দুর্গম এলাকার জন্য সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে; প্রতিটি সেবাকেন্দ্রে কমপক্ষে ৪ জন প্রশিক্ষিত ধাত্রী/এফডব্লিউভি থাকবেন; ওষুধ, গর্ভনিরোধক ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে; সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব জোরদার করা হবে; স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা কর্মসূচি বাড়ানো হবে এবং কিশোর-কিশোরী ও দম্পতিদের মধ্যে এসআরএইচআর সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছানো হবে।
কৌশল বাস্তবায়নে সমতা, প্রজনন অধিকার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পছন্দের স্বাধীনতা ও গুণগত যত্ন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নমুনা হিসেবে ভোলা, কয়রা, বাগেরহাট, কক্সবাজার, বান্দরবান, পটুয়াখালী, বরগুনা, সুনামগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলায় প্রাথমিকভাবে এ কৌশল বাস্তবায়ন করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সারওয়ার বারী বলেন, পরিবার পরিকল্পনা সেবার ক্ষেত্রে কৌশলপত্রটি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফী আহমেদ বলেন, ‘এই প্রস্তুতি আমাদের আগেই থাকা উচিত ছিল, কিন্তু আমরা এখন করেছি। এখন বাস্তবায়ন করাটাই জরুরি।’
স্বাগত বক্তব্যে মেরি স্টোপস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিশওয়ার ইমদাদ বলেন, ২০২৩ সালে এই কৌশলের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজিএফপির যৌথ বৈধতা কর্মশালায় এটি অনুমোদন লাভ করে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব আলম, এমসিএইচ সার্ভিসেসের পরিচালক মো. সুলতান আহম্মদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।