ফরিদপুরে মধুখালীতে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে আমিনুল ইসলাম ওরফে আপন খান (৩১) নামে এক যুবককে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। তিনি কখনো সেনাবাহিনীর মেজর, কখনো র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারীদের টার্গেট করে প্রতারণা করে আসছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী মাহমুদা খাতুন (৩০) জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে আপনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আইডিতে সেনাবাহিনীর পোশাকে ছবি ও মেজর পদবির বিস্তারিত তথ্য থাকায় তিনি সরল বিশ্বাসে তাকে বিশ্বাস করেন। বন্ধুত্বের একপর্যায়ে ‘আপন খান’ জমি কেনার কথা বলে আর্থিক সহযোগিতা চান। মাহমুদা বিভিন্ন সময় বিকাশের মাধ্যমে তাকে মোট ৯০,০০০ টাকা পাঠান।
পরে আরও ২ লাখ টাকা চাইলে তার সন্দেহ হয়। বিষয়টি তিনি সরাসরি ফরিদপুর সেনা ক্যাম্পে গিয়ে জানালে সেনা কর্মকর্তারা তাকে মধুখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেন। ৭ এপ্রিল থানায় জিডি করার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফরিদপুর সেনা ক্যাম্পের মেজর সোহেল ও কোতোয়ালী থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ফরিদপুর শহরের জনতার মোড়ের একটি রেস্টুরেন্ট থেকে আপন খানকে আটক করা হয়। আটককালে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি সামান্য আহত হন। পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কোতোয়ালী থানায় নেওয়া হয়।
পরে মধুখালী থানার পুলিশ তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। এ সময় অভিযুক্তের দেহ তল্লাশিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর র্যাঙ্ক ব্যাজসহ পোশাক পরিহিত ছবি, র্যাবের মনোগ্রামে তৈরি একটি ভুয়া আইডি কার্ড, তিনটি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড, দুটি মোবাইল ফোন ও নগদ ৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম নুরুজ্জামান বলেন, সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ধারী ওই প্রতারককে সেনাবাহিনী ও কোতোয়ালী থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে আটক করে থানায় হস্তান্তর করা হয়। শুক্রবার তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা রুজু করে ফরিদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।