ভবিষ্যতে পরিবারের নিরাপত্তা ও স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চারুশিল্পী (ভাস্কর) মানবেন্দ্র ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আমার যে ক্ষতি হয়েছে, তা অনেক বড় ক্ষতি। আমার পরিবার যেমন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে, তেমনি আমার শিল্পীসত্তাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আমি জানি না, ভবিষ্যতে সচেতনভাবে বা স্বাধীনভাবে শিল্প চর্চা করতে পারব কি না।’

গতকাল বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা চান্দইর গ্রামে পুড়ে যাওয়া বাড়িতে মানবেন্দ্র সাংবাদিকদের এই শঙ্কার কথা জানান। পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার মুখাবয়ব তৈরির অভিযোগ তুলে ফেসবুকে হুমকি দেওয়ার পর গত মঙ্গলবার রাতে তাঁর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। তবে মানবেন্দ্র জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার মুখাবয়ব নয়, তিনি আনন্দ শোভাযাত্রায় বাঘের ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন।

মানবেন্দ্র স্থানীয় গড়পাড়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করে ২০০৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হন। চারুকলার তৃতীয় সেমিস্টার থেকেই বৈশাখী শোভাযাত্রার জন্য মোটিফ তৈরি করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ভাস্কর্য, চিত্র আঁকাসহ বিভিন্ন প্রাণী ও ব্যক্তির মোটিফ তৈরি করেছেন। চারুকলা থেকে পাস করার পর কিছুদিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেছেন তিনি। চারুকলার সব শাখাতেই তাঁর বিচরণ থাকলেও ভাস্কর্য তৈরিই তাঁর প্রধান কাজ। তাঁর কাছ থেকে ভাস্কর্য তৈরি করে নেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি।

পরিবারে স্ত্রী, বাবা ও মা এবং চাচা ও চাচি রয়েছে মানবেন্দ্র ঘোষের। তাঁরা চান্দইর গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। স্ত্রীকে নিয়ে মানবেন্দ্র ঢাকাতে থাকলেও সেখানে স্থায়ী নন। অগ্নিসংযোগের দিন তিনি, তাঁর স্ত্রীসহ পরিবারের সাত সদস্য গ্রামের বাড়িতে ছিলেন।

মানবেন্দ্রর এসব সৃষ্টিকর্ম চান্দইর গ্রামের বাড়িতে যে ঘরটিতে সংগ্রহ করে রেখেছিলেন, সেই ঘরেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাড়ির দক্ষিণ পাশের এই ঘরটি ছিল মূলত তাঁর সৃষ্টিকর্মের সংগ্রহশালা। কিন্তু দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে তাঁর এসব চিত্রকর্মের প্রায় সবই পুড়ে গেছে এবং আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানিতে নষ্ট হয়েছে। পিতলের তৈরি কিছু শিল্পকর্ম রয়েছে, তা-ও বিনষ্ট হয়ে গেছে।

আক্ষেপ করে চারুশিল্পী মানবেন্দ্র বলেন, ‘এই ঘরটিতে অনেক স্মৃতি ছিল। আমার তৈরি অর্ধশত ভাস্কর্য ঘরটিতে ছিল। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তৈরি সব চিত্রকর্মই ঘরটিতে সাজিয়েছিলাম। বিভিন্ন আয়োজনে প্রদর্শনের পর এসব ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম আবার এই ঘরটিতেই রেখে দেওয়া হয়।’

শেখ হাসিনার মুখাবয়ব তৈরির অভিযোগ এনে পয়লা বৈশাখের আগের দিন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্বৃত্তরা মানবেন্দ্রকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে তিনি খুব একটা চিন্তিত না হলেও পরে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই দিন রাতেই তাঁর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর পর থেকে তিনি ও তাঁর পরিবার উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছেন।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় চারুশিল্পী (ভাস্কর) মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চান্দহর গ্রামে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ সদর ভ স কর য চ র কল পর ব র ঘরট ত

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ