‘আমার পরিবার আতঙ্কে আছে, শিল্পীসত্তাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে’
Published: 18th, April 2025 GMT
ভবিষ্যতে পরিবারের নিরাপত্তা ও স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চারুশিল্পী (ভাস্কর) মানবেন্দ্র ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আমার যে ক্ষতি হয়েছে, তা অনেক বড় ক্ষতি। আমার পরিবার যেমন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে, তেমনি আমার শিল্পীসত্তাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আমি জানি না, ভবিষ্যতে সচেতনভাবে বা স্বাধীনভাবে শিল্প চর্চা করতে পারব কি না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা চান্দইর গ্রামে পুড়ে যাওয়া বাড়িতে মানবেন্দ্র সাংবাদিকদের এই শঙ্কার কথা জানান। পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার মুখাবয়ব তৈরির অভিযোগ তুলে ফেসবুকে হুমকি দেওয়ার পর গত মঙ্গলবার রাতে তাঁর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। তবে মানবেন্দ্র জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার মুখাবয়ব নয়, তিনি আনন্দ শোভাযাত্রায় বাঘের ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন।
মানবেন্দ্র স্থানীয় গড়পাড়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করে ২০০৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হন। চারুকলার তৃতীয় সেমিস্টার থেকেই বৈশাখী শোভাযাত্রার জন্য মোটিফ তৈরি করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ভাস্কর্য, চিত্র আঁকাসহ বিভিন্ন প্রাণী ও ব্যক্তির মোটিফ তৈরি করেছেন। চারুকলা থেকে পাস করার পর কিছুদিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেছেন তিনি। চারুকলার সব শাখাতেই তাঁর বিচরণ থাকলেও ভাস্কর্য তৈরিই তাঁর প্রধান কাজ। তাঁর কাছ থেকে ভাস্কর্য তৈরি করে নেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি।
পরিবারে স্ত্রী, বাবা ও মা এবং চাচা ও চাচি রয়েছে মানবেন্দ্র ঘোষের। তাঁরা চান্দইর গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। স্ত্রীকে নিয়ে মানবেন্দ্র ঢাকাতে থাকলেও সেখানে স্থায়ী নন। অগ্নিসংযোগের দিন তিনি, তাঁর স্ত্রীসহ পরিবারের সাত সদস্য গ্রামের বাড়িতে ছিলেন।
মানবেন্দ্রর এসব সৃষ্টিকর্ম চান্দইর গ্রামের বাড়িতে যে ঘরটিতে সংগ্রহ করে রেখেছিলেন, সেই ঘরেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাড়ির দক্ষিণ পাশের এই ঘরটি ছিল মূলত তাঁর সৃষ্টিকর্মের সংগ্রহশালা। কিন্তু দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে তাঁর এসব চিত্রকর্মের প্রায় সবই পুড়ে গেছে এবং আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানিতে নষ্ট হয়েছে। পিতলের তৈরি কিছু শিল্পকর্ম রয়েছে, তা-ও বিনষ্ট হয়ে গেছে।
আক্ষেপ করে চারুশিল্পী মানবেন্দ্র বলেন, ‘এই ঘরটিতে অনেক স্মৃতি ছিল। আমার তৈরি অর্ধশত ভাস্কর্য ঘরটিতে ছিল। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তৈরি সব চিত্রকর্মই ঘরটিতে সাজিয়েছিলাম। বিভিন্ন আয়োজনে প্রদর্শনের পর এসব ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম আবার এই ঘরটিতেই রেখে দেওয়া হয়।’
শেখ হাসিনার মুখাবয়ব তৈরির অভিযোগ এনে পয়লা বৈশাখের আগের দিন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্বৃত্তরা মানবেন্দ্রকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে তিনি খুব একটা চিন্তিত না হলেও পরে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই দিন রাতেই তাঁর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর পর থেকে তিনি ও তাঁর পরিবার উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় চারুশিল্পী (ভাস্কর) মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চান্দহর গ্রামে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ সদর ভ স কর য চ র কল পর ব র ঘরট ত
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।