যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ও স্নাতকের ভিসা বাতিল
Published: 18th, April 2025 GMT
বড় পরিসরে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় বসবাসকারী শত শত বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন এমনটা করা হয়েছে, তা অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই জানা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্রদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাথীদের তথ্যভান্ডার স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেমে (এসইভিআইএস) দেশটির ১৩০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ও সম্প্রতি স্নাতক সম্পন্নকারীদের ভিসা বা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধতা বাতিল করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি অঙ্গরাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ও দেশটিতে থাকার বৈধতা বাতিলের খবর সিএনএনকে নিশ্চিত করেছে।
মিডল টেনেসি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র জিমি হার্ট জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ছয় শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এ পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানে না। শুধু জানে, শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণকারী ফেডারেল তথ্যভান্ডারে পরিবর্তন আনা হয়েছে।’
একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার তাদের এ পদক্ষেপের ক্ষেত্রে কোনো কারণ জানায়নি। শুধু অল্প কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, কেন তাদের শিক্ষার্থীদের ভিসা বা কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার এসইভিআইএসের অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়েছে, তা তারা জানে।
ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র এরিক হাওয়াল্ড বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ অজ্ঞাত অপরাধের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। অভিযোগের ধরন সম্পর্কেও কিছু জানানো হয়নি।’
যাঁদের ভিসা বাতিল হয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে কি না, নাকি তাঁরা পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবেন—তা এখনো স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসীবিরোধী অভিযানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তার মতো গুরুতর অভিযোগ থেকে শুরু করে অনেক বছরের পুরোনো ছোটখাটো অভিযোগে তাঁদের নিশানা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে শিক্ষার্থীরা কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করছেন, কারণ কী১৬ এপ্রিল ২০২৫কেন অনেক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হলো, তার নির্দিষ্ট কোনো কারণ মার্কিন কর্মকর্তারা জানাননি। তবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বারবার বলেছেন, বিক্ষোভে অংশ নেওয়াসহ কিছু আচরণ সহ্য করা হবে না।
মার্কো রুবিও বলেন, ‘তাঁরা এখানে ক্লাস করতে এসেছেন। আন্দোলন করতে এখানে আসেননি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে।’
লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সিএনএনকে বলেছে, তাদের ১২ জন বর্তমান বা সদ্য স্নাতক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হুলিও ফ্রেঙ্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাতিলের নোটিশে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করায় তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা
শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল বন্ধ এবং বাতিল হওয়া ভিসা পুনর্বহাল চেয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে নতুন একটি মামলা হয়েছে।
আটলান্টার নর্দার্ন জর্জিয়া আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ভারত, চীন, কলম্বিয়া, মেক্সিকো এবং জাপানের ১৩৩ বিদেশি শিক্ষার্থীর ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মামলার এক আইনজীবী সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়ুনবিদেশি ছাত্র ভর্তির অনুমতি হারাতে পারে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়: ট্রাম্প প্রশাসনের হুমকি১৭ এপ্রিল ২০২৫তবে শিক্ষার্থীরা যাতে বিপদে না পড়েন, সে জন্য ওই মামলায় তাঁদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে। মামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের তিন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম এবং অভিবাসন ও শুল্ক বাস্তবায়ন সংস্থার (আইসিই) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লায়ন্স।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আইসিই বেআইনিভাবে শিক্ষার্থীদের আইনি বৈধতা বাতিল করেছে, যা তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা এবং সেখানে কর্মসংস্থানের সক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। তাঁদের আটক, গ্রেপ্তার ও বিতাড়নের ঝুঁকিতে ফেলেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ত ল কর
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।