বড় পরিসরে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় বসবাসকারী শত শত বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন এমনটা করা হয়েছে, তা অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই জানা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্রদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাথীদের তথ্যভান্ডার স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেমে (এসইভিআইএস) দেশটির ১৩০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ও সম্প্রতি স্নাতক সম্পন্নকারীদের ভিসা বা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধতা বাতিল করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি অঙ্গরাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ও দেশটিতে থাকার বৈধতা বাতিলের খবর সিএনএনকে নিশ্চিত করেছে।

মিডল টেনেসি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র জিমি হার্ট জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ছয় শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এ পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানে না। শুধু জানে, শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণকারী ফেডারেল তথ্যভান্ডারে পরিবর্তন আনা হয়েছে।’

একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার তাদের এ পদক্ষেপের ক্ষেত্রে কোনো কারণ জানায়নি। শুধু অল্প কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, কেন তাদের শিক্ষার্থীদের ভিসা বা কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার এসইভিআইএসের অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়েছে, তা তারা জানে।

ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র এরিক হাওয়াল্ড বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ অজ্ঞাত অপরাধের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। অভিযোগের ধরন সম্পর্কেও কিছু জানানো হয়নি।’

যাঁদের ভিসা বাতিল হয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে কি না, নাকি তাঁরা পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবেন—তা এখনো স্পষ্ট নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসীবিরোধী অভিযানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তার মতো গুরুতর অভিযোগ থেকে শুরু করে অনেক বছরের পুরোনো ছোটখাটো অভিযোগে তাঁদের নিশানা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে শিক্ষার্থীরা কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করছেন, কারণ কী১৬ এপ্রিল ২০২৫

কেন অনেক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হলো, তার নির্দিষ্ট কোনো কারণ মার্কিন কর্মকর্তারা জানাননি। তবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বারবার বলেছেন, বিক্ষোভে অংশ নেওয়াসহ কিছু আচরণ সহ্য করা হবে না।

মার্কো রুবিও বলেন, ‘তাঁরা এখানে ক্লাস করতে এসেছেন। আন্দোলন করতে এখানে আসেননি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে।’

লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সিএনএনকে বলেছে, তাদের ১২ জন বর্তমান বা সদ্য স্নাতক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হুলিও ফ্রেঙ্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাতিলের নোটিশে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করায় তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।’

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা

শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল বন্ধ এবং বাতিল হওয়া ভিসা পুনর্বহাল চেয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে নতুন একটি মামলা হয়েছে।

আটলান্টার নর্দার্ন জর্জিয়া আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ভারত, চীন, কলম্বিয়া, মেক্সিকো এবং জাপানের ১৩৩ বিদেশি শিক্ষার্থীর ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মামলার এক আইনজীবী সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

আরও পড়ুনবিদেশি ছাত্র ভর্তির অনুমতি হারাতে পারে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়: ট্রাম্প প্রশাসনের হুমকি১৭ এপ্রিল ২০২৫

তবে শিক্ষার্থীরা যাতে বিপদে না পড়েন, সে জন্য ওই মামলায় তাঁদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে। মামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের তিন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম এবং অভিবাসন ও শুল্ক বাস্তবায়ন সংস্থার (আইসিই) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লায়ন্স।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আইসিই বেআইনিভাবে শিক্ষার্থীদের আইনি বৈধতা বাতিল করেছে, যা তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা এবং সেখানে কর্মসংস্থানের সক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। তাঁদের আটক, গ্রেপ্তার ও বিতাড়নের ঝুঁকিতে ফেলেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ত ল কর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটন সফর করবেন শারা

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল–শারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন সফর করবেন। গতকাল শনিবার দামেস্কে নিযুক্ত বিশেষ মার্কিন দূত টম ব্যারাক এ ঘোষণা দেন। এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে কোনো সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম সফর।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ১০ নভেম্বরের দিকে এ সফর অনুষ্ঠিত হতে পারে।

গতকাল বাহরাইনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতিবিষয়ক সম্মেলন ‘মানামা ডায়ালগ’-এর ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন টম ব্যারাক। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, শারার এ সফরে সিরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইসলামিক স্টেটবিরোধী জোটে যোগ দেবে।

আরও পড়ুনযে মার্কিন জেনারেল একদিন গ্রেপ্তার করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে এক মঞ্চে বসে সাক্ষাৎকার দিলেন আল-শারা২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ বিষয়ে অবগত এক সিরীয় সূত্র জানায়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শারা ওয়াশিংটন সফরে যেতে পারেন।

কোন কোন বিদেশি নেতা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন, তার একটি ঐতিহাসিক তালিকা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে সংরক্ষিত আছে। সে তালিকায় দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়াশিংটন সফর করেননি। গত সেপ্টেম্বরে শারা নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে শারার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যরা একাধিক বিদেশ সফর করেছেন। আসাদ আমলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সিরিয়ার সঙ্গে বিশ্বশক্তিগুলোর সম্পর্ক পুনর্গঠন করাই এসব সফরের লক্ষ্য।

গত বছরের ডিসেম্বরে স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর শারার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যরা একাধিক বিদেশ সফর করেছেন। আসাদ আমলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সিরিয়ার সঙ্গে বিশ্বশক্তিগুলোর সম্পর্ক পুনর্গঠন করাই এসব সফরের লক্ষ্য।

ব্যারাক বলেন, ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হলো ২০১৪ সাল থেকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাতে সিরিয়াকে যুক্ত করা। আইএস তাদের উত্থানের সময় ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সিরিয়া ও ইরাকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল দখল করে রেখেছিল।

ব্যারাক বলেন, ‘আমরা সবাইকে এ জোটের অংশীদার করার চেষ্টা করছি, যা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

শারা একসময় আল-কায়েদার সিরীয় শাখার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে এক দশক আগে তাঁর নেতৃত্বাধীন আসাদবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠী ওই নেটওয়ার্ক থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং পরে আইএসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। আল–কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ওসামা বিন লাদেন।

আরও পড়ুনসিরিয়ার নেতা শারাকে গ্রেপ্তারে ১ কোটি ডলার পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহার করল যুক্তরাষ্ট্র২১ ডিসেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা ২০১৯ সালে সিরিয়ায় আইএসের সবশেষ শক্ত ঘাঁটি দখলমুক্ত করে। তবে বিভিন্ন সূত্র গত জুনে রয়টার্সকে বলেছে, আইএস আসাদ সরকারের পতনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সিরিয়া ও প্রতিবেশী দেশ ইরাকে নতুন করে ফিরে আসার চেষ্টা করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটন সফর করবেন শারা