সিকৃবিতে ‘ম্যানার’ শেখানোর নামে গভীর রাতে ডেকে নিয়ে র্যাগ
Published: 18th, April 2025 GMT
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গভীর রাতে ‘ম্যানার’ শেখানোর নামে ডেকে নিয়ে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের র্যাগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কৃষি বিভাগের ১৬তম ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে একই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ভুক্তভোগীরা শিক্ষার্থী অভিযোগ এনেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাত ১২টা থেকে আড়াটা পর্যন্ত সিকৃবির পাশের টিলাগড় ইকোপার্ক রোডের আমিরের টঙ-সংলগ্ন সেতুর ওপর কৃষি বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।
আরো পড়ুন:
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সারা দেশে ‘কাফন মিছিল’
কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের সমর্থন ‘ঘৃণাভরে’ প্রত্যাখ্যান
১৬তম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীর নির্দেশে ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফকে দিয়ে ব্যাচের সব ছেলেকে আমিরের টঙে রাত ১২টার পর আসতে বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে তাদের তিন-চারজন করে বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী ১৭তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, "আমাদের ছেলেদের গ্রুপে আরিফ মেসেজ দিয়ে বলে রাত ১২টার পর ভাইদের সঙ্গে দেখা করতে হবে সবাইকে এবং অবশ্যই থাকতে হবে।”
“আমরা ১৭ জন আমিরের টঙ-সংলগ্ন ব্রিজে পৌঁছাতেই আমাদের মোবাইল ১৬তম ব্যাচের ভাইরা জব্দ করে এবং কারো কারো ফোন বন্ধ করে দেন। সেখানে সিনিয়রদের সালাম দেওয়া নিয়ে অনেক অশ্লীল কথা বলেন তারা। কয়েকজনকে এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন, একজনকে ব্যাঙের মতো অঙ্গভঙ্গি করতে বলেন।”
“উচ্চস্বরে চেঁচামেচির জন্য আমাদের মধ্যে অনেকে ভয়ে কাঁপতেছিল। পাশের বসবাসরত এলাকার অনেকেই লাঠি নিয়ে এসেছিল মারামারি ভেবে। তবে ভার্সিটির অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে তারা চলে যায়।”
তিনি আরো বলেন, “ভার্সিটির বড় আপুদের নিয়েও অনেক অশ্লীল কথা বলে আমাদের। ক্লাসে এসে আমাদের সবাইকে কাঁদাবে বলেও হুমকি দেন তারা। আমাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন তারা।”
এই নির্যাতনের যারা জড়িত, তাদের শাস্তি দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে নতুন করে র্যাগিংয়ের শিকার হওয়ার ভয় থেকে তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি। তবে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, র্যাগিংয়ের সময় ১৬তম ব্যাচের প্রায় ২০ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের তথ্য অনুযায়ী, তাদের মধ্যে রয়েছেন, ১৬তম ব্যাচের তানজিম রহমান, সায়েম, নুরুল ইসলাম, রুশাদ, নাফিস ইকবাল, ফুয়াদ তাসনিম, রাকিবুল হাসান, দুর্জয় হাসান, দুর্জয় সরকার, মুস্তাকিম স্বাধীন, মাহবুব নায়েম, মুসা বিন ফয়সাল, ফাহিম, মাহমুদুর হাদী, সামিউল ইফাত তানজিম, মঈন উদ্দিন, শাহরিয়ার ইসলাম।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সিকৃবির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার বলেন, "এই ঘটনার বিষয়ে আমরা অবগত নই। বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং, বুলিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে যারা এমন কাজ করছেন, সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এখানে কোনো পলিটিকাল সংশ্লিষ্টতা থাকলেও ছাড় দেওয়া হবে না।"
ঢাকা/আইনুল/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ১৭তম ব য চ র ১৬তম ব য চ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সচিবালয়মুখী শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের মিছিলে পুলিশের বাধা, সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠিচার্জ
নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা। মিছিলটি প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। এতে রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
আজ রোববার দুপুর সোয়া ১টার দিকে প্রেস ক্লাব সংলগ্ন সচিবালয়ের ৫ নম্বর ফটকের কাছে এ ঘটনা ঘটে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা এনটিআরসিএর (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) আওতায় দ্রুত নিয়োগের দাবিতে প্রেস ক্লাব থেকে সচিবালয়ের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন। তবে সচিবালয় এলাকায় আগে থেকে সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ছিল বলে জানায় পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিছিলকারীরা ব্যারিকেড অতিক্রম করে সচিবালয়ের ফটকের কাছাকাছি চলে গেলে পুলিশ তাদের থামার অনুরোধ করে। আন্দোলনকারীরা সেই অনুরোধ না মানলে পুলিশ প্রথমে পাঁচটি ও পরে আরও দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। এরপর বিক্ষোভকারীরা প্রেস ক্লাব মোড়ে ফিরে অবস্থান নেন।
শাহবাগ থানার পেট্রোল অফিসার জয়নাল আবেদিন সমকালকে বলেন, সচিবালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। সচিবালয়ের দিকে এগোতে চাইলে মিছিলকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তাদের ওপর লাঠিচার্জ কর হয়। এছাড়াও পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।
মিছিলে অংশ নেওয়া এক নিবন্ধনধারী জানান, আমরা বারবার শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানাচ্ছি। অথচ সরকার বারবার তা উপেক্ষা করছে। এনটিআরসিএ ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে যাচ্ছে অথচ আমাদের ১৭তম ব্যাচের সমস্যার সমাধান করছে না। তাই বাধ্য হয়েই আমরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিতে চাই।
তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. ১৭তম ব্যাচের নিবন্ধিত প্রার্থীদের জন্য আপিল বিভাগের রায় অনুসারে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্তত একবার আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে।
২. ১৭তম ব্যাচের বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে।
৩. আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএর সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এখনও আন্দোলনকারীরা প্রেস ক্লাব মোড়ে অবস্থান করছেন। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।