টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়নে ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে রয়েছেন তিন উপজেলার মানুষ। দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে একটি সেতুর জন্য প্রহর গুনছে মাহমুদপুরবাসী। দুই যুগ ধরে এই সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের পর বেমালুম ভুলে যান সেতু নির্মাণের সেই প্রতিশ্রুতি।
টাঙ্গাইল শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রায় ২৪টি গ্রাম নিয়ে ৩০ হাজার জনসাধারণের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাহমুদনগর ইউনিয়ন। ধলেশ্বরীতে সেতু না হওয়ায় তিনটি উপজেলা নাগরপুর, সিরাজগঞ্জের চৌহালী ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযাগ বিচ্ছিন্ন। টাঙ্গাইল সদর থেকে নাগরপুর হয়ে চৌহালী যেতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। একটি সেতু নির্মাণ হলেই টাঙ্গাইল সদর থেকে মাহমুদপুর হয়ে চৌহালী যেতে অন্তত ৩০ কিলোমিটার রাস্তা সাশ্রয় হবে। এতে খরচ ও সময়ের সাশ্রয় হবে। তিনটি উপজেলার সংযোগস্থল হবে এই সেতু। মাহমুদনগর ইউনিয়নে মেজর মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিয়াপড়া উচ্চ বিদ্যালয় নামে ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র কারিগরি স্কুল, ১০টি প্রাইমারি স্কুল, একটি ফাজিল ও একাধিক হাফিজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। রয়েছে ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। মাহমুদনগর ও তার আশপাশে রয়েছে অনেকগুলো হাট। যার মধ্যে শাহ্‌জানী, করিমগঞ্জ, বালিয়াপাড়া, চাঁনবয়রা, কাতুলি হাট অন্যতম। এই অঞ্চলের শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশ। প্রধান পেশা কৃষি। কৃষিপণ্য শহরে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। কৃষকের উৎপাদিত ফসল বর্ষাকালে শহরের হাটে বিক্রি করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
একটি সেতুর জন্য মাহমুদনগর ইউনিয়নের চরবাসীকে দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভরা বন্যার সময় ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হতে গিয়ে অনেকের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। অনেক জরুরি রোগীকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু হয়েছে। ধলেশ্বরী সেতু না থাকায় শুকনো মৌসুমে প্রায় এক কিলোমিটার পথ তপ্ত বালুর পথ হেঁটে পার হতে হয়। তিনটি উপজেলার হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। খেয়াঘাট পার হতে অনেক সময় ব্যয় হয়।
মেজর মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী কামরুন্নাহার লতা আক্তার বলে, ‘বর্ষাকালে নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। এখানে নদীর ওপর সেতু হলে আমাদের খুবই উপকার হবে।’
স্থানীয় কৃষক দানেজ আলী জানান, কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য বাজারে নিতে পারেন না তারা। অনেক খরচ পড়ে। সময়ও লাগে বেশি। সেতুটি হলে তাদের অনেক উপকার হবে।
খেয়াঘাটের ইজারাদার সোবহান মিয়ার ভাষ্য, ২৬ বছর ধরে ইজারা নিয়ে ঘাট চালান তিনি। এখন প্রতি বছর দেড় লাখ টাকা দিতে হয়। তিনটি উপজেলার লোকজন অনেক কষ্ট করে খেয়া পারাপার হয়। বর্ষাকালে তো ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয়। তাঁরও দাবি ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু হলে কষ্ট কমে যাবে।
জনতা ব্যাংকের টাঙ্গাইল কর্পোরেট শাখার এজিএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু না থাকায় আমাদের সমস্যার অন্ত নাই। আমাদের এখানকার কৃষকের সব পণ্য শহরে বিক্রি হয়। সীমাহীন কষ্ট ও অধিক ব্যয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে শহরে পণ্য পরিবহন করা হয়। এই পথ দিয়ে তিনটি উপজেলার মানুষ যাতায়াত করে। অনেক জনপ্রতিনিধি সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভোটের পর ভোট গেছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।’
কথা হয় মাহমুদনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসলাম হোসেন শিকদারের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, এখানে সেতু না থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজারো মানুষ। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের। এখানে সেতু হলে তিন উপজেলাবাসীর ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এই পশ্চিমাঞ্চল চরবাসীর।
টাঙ্গাইলের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, জনগুরুত্ব বিবেচনা করে ইতোমধ্যে সেতুটির পরিমাপ করা হয়েছে। প্রাক্কলন ব্যয় শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অতিদ্রুতই প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র ম প র হয় র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শহিদনগর বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠে বাবুলের উঠান বৈঠক

সোমবার বিকাল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ শহিদনগর বায়তুল জান্নাত জামেমসজিদ (প্রাথমিক বিদ্যালয়) সংলগ্ন মাঠে নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বিশিষ্ট শিল্পপতি সমাজসেবক আবু জাফর আহমেদ বাবুল এর পক্ষে শহিদনগর এলাকাবাসী এক উঠান বৈঠকের আয়োজন করে। 

গোগনগর সমাজ কল্যাণ পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদুল ইসলাম'র সঞ্চালনায় ও শহিদনগর বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদের সহ- সভাপতি সুলতান আহমদ'র সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ–৫ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুল।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আপনারা যদি বিএনপির ধানের শীষকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে পারেন, তাহলে শুধু শহীদনগর নয় পুরো নারায়ণগঞ্জে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে, পরিবর্তন হবে নারায়ণগঞ্জে। আমাদের যে প্রত্যাশা, যে চাহিদা তা ছিনিয়ে নিয়ে আসবো।

দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষেই আমি কাজ করবো। মিলেমিশে কাজ করার চেষ্টা করবো। আপনারা সকলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্য, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ তার সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন, তারেক রহমানের জন্য দোয়া করবেন।

তার সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ হল জিয়া ফোরামের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কে এম মজিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক আক্তার হোসেন খোকন শাহ, মো. কবির হোসেন, মো. হৃদয়, জাহাঙ্গীর আলম, তোফাজ্জল হোসেন, সুলতান আহমদ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, শহীদ নগর এলাকা সব সময়ই বিএনপির ঘাঁটি। এখানে সব সময়ই ধানের শীষ প্রতীক জয়লাভ করে থাকে। আমরা বাবুল ভাইয়ের পক্ষে থেকে সবসময় ধানের শীষের পক্ষে কাজ করে যাব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শহিদনগর বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠে বাবুলের উঠান বৈঠক