সেতুর অভাবে দুর্ভোগ তিন উপজেলাবাসীর
Published: 18th, April 2025 GMT
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়নে ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে রয়েছেন তিন উপজেলার মানুষ। দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে একটি সেতুর জন্য প্রহর গুনছে মাহমুদপুরবাসী। দুই যুগ ধরে এই সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের পর বেমালুম ভুলে যান সেতু নির্মাণের সেই প্রতিশ্রুতি।
টাঙ্গাইল শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রায় ২৪টি গ্রাম নিয়ে ৩০ হাজার জনসাধারণের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাহমুদনগর ইউনিয়ন। ধলেশ্বরীতে সেতু না হওয়ায় তিনটি উপজেলা নাগরপুর, সিরাজগঞ্জের চৌহালী ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযাগ বিচ্ছিন্ন। টাঙ্গাইল সদর থেকে নাগরপুর হয়ে চৌহালী যেতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। একটি সেতু নির্মাণ হলেই টাঙ্গাইল সদর থেকে মাহমুদপুর হয়ে চৌহালী যেতে অন্তত ৩০ কিলোমিটার রাস্তা সাশ্রয় হবে। এতে খরচ ও সময়ের সাশ্রয় হবে। তিনটি উপজেলার সংযোগস্থল হবে এই সেতু। মাহমুদনগর ইউনিয়নে মেজর মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিয়াপড়া উচ্চ বিদ্যালয় নামে ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র কারিগরি স্কুল, ১০টি প্রাইমারি স্কুল, একটি ফাজিল ও একাধিক হাফিজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। রয়েছে ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। মাহমুদনগর ও তার আশপাশে রয়েছে অনেকগুলো হাট। যার মধ্যে শাহ্জানী, করিমগঞ্জ, বালিয়াপাড়া, চাঁনবয়রা, কাতুলি হাট অন্যতম। এই অঞ্চলের শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশ। প্রধান পেশা কৃষি। কৃষিপণ্য শহরে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। কৃষকের উৎপাদিত ফসল বর্ষাকালে শহরের হাটে বিক্রি করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
একটি সেতুর জন্য মাহমুদনগর ইউনিয়নের চরবাসীকে দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভরা বন্যার সময় ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হতে গিয়ে অনেকের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। অনেক জরুরি রোগীকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু হয়েছে। ধলেশ্বরী সেতু না থাকায় শুকনো মৌসুমে প্রায় এক কিলোমিটার পথ তপ্ত বালুর পথ হেঁটে পার হতে হয়। তিনটি উপজেলার হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। খেয়াঘাট পার হতে অনেক সময় ব্যয় হয়।
মেজর মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী কামরুন্নাহার লতা আক্তার বলে, ‘বর্ষাকালে নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। এখানে নদীর ওপর সেতু হলে আমাদের খুবই উপকার হবে।’
স্থানীয় কৃষক দানেজ আলী জানান, কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য বাজারে নিতে পারেন না তারা। অনেক খরচ পড়ে। সময়ও লাগে বেশি। সেতুটি হলে তাদের অনেক উপকার হবে।
খেয়াঘাটের ইজারাদার সোবহান মিয়ার ভাষ্য, ২৬ বছর ধরে ইজারা নিয়ে ঘাট চালান তিনি। এখন প্রতি বছর দেড় লাখ টাকা দিতে হয়। তিনটি উপজেলার লোকজন অনেক কষ্ট করে খেয়া পারাপার হয়। বর্ষাকালে তো ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয়। তাঁরও দাবি ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু হলে কষ্ট কমে যাবে।
জনতা ব্যাংকের টাঙ্গাইল কর্পোরেট শাখার এজিএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু না থাকায় আমাদের সমস্যার অন্ত নাই। আমাদের এখানকার কৃষকের সব পণ্য শহরে বিক্রি হয়। সীমাহীন কষ্ট ও অধিক ব্যয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে শহরে পণ্য পরিবহন করা হয়। এই পথ দিয়ে তিনটি উপজেলার মানুষ যাতায়াত করে। অনেক জনপ্রতিনিধি সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভোটের পর ভোট গেছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।’
কথা হয় মাহমুদনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসলাম হোসেন শিকদারের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, এখানে সেতু না থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজারো মানুষ। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের। এখানে সেতু হলে তিন উপজেলাবাসীর ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এই পশ্চিমাঞ্চল চরবাসীর।
টাঙ্গাইলের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, জনগুরুত্ব বিবেচনা করে ইতোমধ্যে সেতুটির পরিমাপ করা হয়েছে। প্রাক্কলন ব্যয় শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অতিদ্রুতই প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল র ম প র হয় র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নরসিংদীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে বৃদ্ধ নিহত
নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার মুরাদনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম মো. ইদন মিয়া (৬০)। তিনি মুরাদনগর এলাকার বাসিন্দা। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে মোস্তাকিম (৩০) ও আবুল হোসেন (৬০) নামের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে গেলে সেখানে বিএনপির দুটি পক্ষকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। একটি পক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী এবং আরেক পক্ষে সদ্য বহিষ্কৃত সদস্যসচিব আবদুল কাইয়ুম মিয়া নেতৃত্ব দেন। মেঘনা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলাসহ নানা অভিযোগে সম্প্রতি দলীয় পদ থেকে বহিষ্কৃত হন আবদুল কাইয়ুম। স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে তাঁর সক্রিয় থাকার বিষয়টি মানতে পারছিল না শাহ আলম পক্ষ।
অভিযোগ আছে, আবদুল কাইয়ুমকে ঠেকাতে শাহ আলম চৌধুরীর ইন্ধন ও হস্তক্ষেপে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের আবার এলাকায় ফেরানোর পরিকল্পনা করা হয়। এর অংশ হিসেবে আজ ভোর পাঁচটার দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে এলাকায় ফিরতে শুরু করে আত্মগোপনে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। এ খবর পেয়ে আবদুল কাইয়ুমের সমর্থকেরা বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষ টেঁটা, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ইদন মিয়াসহ অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে ইদন মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদা গুলশানারা কবীর। তিনি জানান, ইদন মিয়াকে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনায় হয়। ওই সময় তিনি মৃত ছিলেন। মরদেহ এই হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে শাহ আলম চৌধুরী ও আবদুল কাইয়ুম মিয়ার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।