চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাষির ঘরে পেঁয়াজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খুচরা বাজারে এর দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই আড়তদাররা পেঁয়াজ মজুদ করে এখন ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি মৌসুম শেষে বছরের বাকি সময়ে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ‘মডেল ঘর’ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন চাষিরা। 

পেঁয়াজচাষিদের অভিযোগ, বাজার তদারকিতে গাফিলতি থাকায় ব্যবসায়ী ছাড়াও অনেকেই পাইকারি দামে পেঁয়াজ কিনে অবৈধভাবে মজুদ করেছেন। এখন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়ানো হচ্ছে দাম। 

এদিকে, আকস্মিকভাবে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

চাঁপাইনবাবঞ্জে এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কায় তড়িঘড়ি করে চাষিরা পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেন। সাপ্তাহিক হাট ও কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে পেঁয়াজ কিনেছেন আড়তদাররা। এখন চাষিদের ঘরে পেঁয়াজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আড়তদাররা দাম বাড়িয়েছেন।

সরেজমিনে জেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে রকমভেদে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল। সপ্তাহের মাঝামাঝিতে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে রকমভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। 

চাষিরা জানিয়েছেন, বাম্পার ফলন হওয়ায় বাজারে সরবরাহ বেড়ে যায় পেঁয়াজের। কাঁচামাল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় দ্রুত বাজারজাত করেন তারা। তড়িঘড়ি করে পেঁয়াজ বিক্রি করায় খরচ উঠলেও আশানুরূপ লাভের মুখ দেখেননি চাষিরা। বর্তমানে খুচরা বাজারে বেশি দামে পেঁয়াজ বেচাকেনা দেখে হতাশ তারা। 

শিবগঞ্জ উপজেলার পেঁয়াজচাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে, কিন্তু আশানুরূপ দাম পাওয়া যায়নি। বাজারে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ সরবরাহ থাকার কারণেই এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এবার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনেকেই পেঁয়াজ মজুদ করেছেন। এখন মজুদদাররা ইচ্ছে করেই বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন।

নাচোল উপজেলার চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, চাষির হাত খালি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৌসুম শেষ না হতেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। সিন্ডিকেট করে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। তাই, পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য মডেল ঘর নির্মাণ করা প্রয়োজন। এতে চাষিরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। ফলে, সারা বছরই বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো.

মোমিনুল হক বলেছেন, বর্তমানে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। আমরা সব সময় বাজার তদারকি করে থাকি। আমাদের কাছে অবৈধ মজুদদারের কোনো ছাড় নেই। কোথাও অবৈধ মজুদের খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকি। এবারও তাই করা হবে।

চাষিদের পেঁয়াজ সংরক্ষণে মডেল ঘর নির্মাণের দাবির বিষয়ে কৃষি বিপণন কর্মকর্তা বলেন, পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণে ইতোমধ্যে মডেল ঘর নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। ওই প্রকল্পে এ জেলার নাম না থাকায় মডেল ঘর নির্মিত হয়নি। এখানে মডেল ঘর নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কয়েক জায়গায় আলোচনা করেছি। সরকার চাইলে এখানে মডেল ঘর নির্মাণ করা হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অনেক পরিমাণে রসুন, পেঁয়াজ চাষ হয়। সেজন্য মডেল ঘর নির্মাণ করা খুব প্রয়োজন।

ঢাকা/শিয়াম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরবর হ বগঞ জ হওয় র প ইনব

এছাড়াও পড়ুন:

তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল

সাইপ্রাসে গত সপ্তাহে উন্নতমানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করেছে ইসরায়েল। গত ডিসেম্বর থেকে এ ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার তৃতীয় চালান এটি। তুরস্কের সঙ্গে ক্রমে উত্তেজনা বেড়ে চলার মধ্যে সাইপ্রাসকে এ ব্যবস্থায় সজ্জিত করল ইসরায়েল। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, লিমাসলের বন্দর দিয়ে একটি ট্রাক ‘বারাক এমএক্স’ ব্যবস্থার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে যাচ্ছে। এ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ১৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

সাইপ্রাসের সংবাদমাধ্যম রিপোর্টার জানিয়েছে, বারাক এমএক্স ব্যবস্থার সরবরাহ এখন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরই এটি আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) বহিঃসম্পর্ক বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়। বারাক এমএক্স তৈরি করেছে ইসরায়েলি সংস্থাটি।

আরও পড়ুনইসরায়েলের আগ্রাসন কীভাবে মোকাবিলা করবে তুরস্ক৩০ আগস্ট ২০২৫

গাল লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে সমন্বয় করে এ দ্বীপের উত্তর অংশ মুক্ত করার বিকল্প পরিকল্পনা করতে হবে। এতে তুরস্কের পুনরায় সেনা পাঠানোর পথ বন্ধ হবে, উত্তর সাইপ্রাসের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হবে, গোয়েন্দা ও কমান্ড সেন্টারগুলো গুঁড়িয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তুর্কি বাহিনী সরে যাবে। এর মাধ্যমে সাইপ্রাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

গ্রিসের সঙ্গে একীভূত করার লক্ষ্য নিয়ে সাইপ্রাসে এক অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সেখানে আক্রমণ চালায় তুরস্ক। সেই থেকে দ্বীপটি দুই ভাগে বিভক্ত—দক্ষিণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র ও উত্তরে তুরস্ক-সমর্থিত উত্তর সাইপ্রাস, যা শুধু আঙ্কারার স্বীকৃত।

এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়।

এখন পর্যন্ত আঙ্কারা নতুন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বারাক এমএক্সে রয়েছে উন্নত নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা। এর থ্রিডি রাডার সর্বোচ্চ ৪৬০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কার্যকর, যা দক্ষিণ তুরস্কের একটি বড় অংশের আকাশসীমা আয়ত্তে আনতে পারে।

আরও পড়ুনইসরায়েল ও তুরস্ক কখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?২৪ জানুয়ারি ২০২৫

১৯৯৭ সালে দক্ষিণ সাইপ্রাস রাশিয়ার তৈরি দুটি এস–৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করলে তুরস্কের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। সে সময় আঙ্কারা পুরোদমে সামরিক জবাব দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে সে সংকট মেটে গ্রিস ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে ও সাইপ্রাস বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে শুরু করলে।

এ ব্যবস্থা এস-৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস-৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।আরদা মেভলুতোগলু, তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক

তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতোগলু বলেন, এই ব্যবস্থা এস–৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস–৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।

ইসরায়েলের আশদোদে আইএআই বারাক এমএক্স বিমান প্রতিরক্ষা লঞ্চার। ১২ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে
  • পদ্মায় জেলের জালে ধরা পড়ল ১১ কেজির কাতল