শুক্রবার বেলা ১টা। খুলনা থেকে ঈশ্বরদী হয়ে ঢাকায় চলাচলকারী আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পার হচ্ছিল। এ সময় এক নারী ট্রেন থেকে সেতুর নিচে পড়ে মারা যান। ঘটনার পর লাশটি ঈশ্বরদী থানার অধীন পাকশী ফাঁড়ি, রেলওয়ে নাকি নৌপুলিশ উদ্ধার করবে, তা নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়।

পুলিশের এ টানাটানিতে কেটে যায় ৫ ঘণ্টা। ততক্ষণ সড়কে পড়ে ছিল লাশটি। প্রথমে ঘটনাস্থলে পাকশী ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা গেলেও উদ্ধার করেননি। তাদের ভাষ্য, স্থানটি রেলওয়ের হওয়ায় তারা লাশ উদ্ধার করবে। খবর পেয়ে ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থল যায়।

তাদের দাবি, জায়গাটি রেলওয়ের হলেও পদ্মা নদীর সীমানার মধ্যে থাকায় এ দায়িত্ব নৌপুলিশের। তারাও লাশ উদ্ধার না করে চলে যায়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এভাবে সড়কে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার পাশাপাশি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। 

সন্ধ্যা ৬টার দিকে নৌপুলিশের একটি দল মরদেহটি উদ্ধার করে। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় পুলিশের তিন শাখার দায়িত্ব নিয়ে টানাটানিতে এভাবে ৫ ঘণ্টা পর দুর্ঘটনায় নিহত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে লক্ষ্মীকুণ্ডা নৌপুলিশের একটি দল এটি উদ্ধার করে। 
নিহত নারীর কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শনিবার আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে নারীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি রেলওয়ের হলেও যেখানে মরদেহ পড়ে ছিল, সেটি নদী এলাকা বলে জানিয়েছেন ঈশ্বরদী থানার আওতাধীন পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকিউল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি রেলওয়ে অথবা নৌপুলিশের দায়িত্ব।

রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কিশোর কুমার দত্ত বলেন, রেললাইন বা রেল সেতুর ১০ মিটার দূরে যদি কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে তা রেলওয়ে পুলিশের আওতায় থাকে না। তখন তা থানা বা পুলিশের অন্য বিভাগের আওতায় চলে যায়। মরদেহ ১০ মিটারের বেশি দূরত্বে থাকায় এটি উদ্ধারের দায়িত্ব তাদের নয়।

লাশ উদ্ধারের পর ঈশ্বরদী নৌপুলিশের ইনচার্জ ইমরান মাহমুদ তুহিন বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, নারীর মরদেহ থানা পুলিশ বা রেলওয়ে পুলিশ উদ্ধার করবে। পরে জানতে পারি, আমাদের উদ্ধার করতে হবে। তাই বিকেলে নৌপুলিশের একটি দল পাঠানো হয়। ৬টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মরদ হ মরদ হ র লওয়

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ভিপিএনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেটের পাশাপাশি ওয়েবসাইটে প্রবেশের বিকল্প মাধ্যম ভিপিএন বা ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ে থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল।

তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘দ্য লংগেস্ট সাইলেন্স: ইন্টারনেট শাটডাউনস ডিউরিং বাংলাদেশ’স ২০২৪ আপরাইজিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে।

ডিজিটালি রাইটের গবেষণায় গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ২২ দিন ইন্টারনেট বন্ধের (শাটডাউনের) ঘটনাকে পাঁচ ধাপে ভাগ করা হয়েছে। এরপর প্রতি ধাপে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ও ধরন কেমন ছিল, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ডিজিটালি রাইটের গবেষক তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই ধাপে ইন্টারনেট সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট হয়েছিল। প্রথমবার ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই এবং দ্বিতীয়বার ৫ আগস্ট। এ দুই ধাপে মোবাইল ডেটা ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। ফোর-জিকে টু-জিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। পাশাপাশি ফিল্টারিং প্রযুক্তি ও ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দিয়ে ইন্টারনেটের গতি ধীর করে দেওয়া হয়েছিল।

সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক বৈশ্বিক সংস্থা ‘ওপেন অবজারভেটরি অব নেটওয়ার্ক ইন্টারফেয়ারেন্স’র সহযোগিতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

সময় ও অন্তর্ভুক্ত এলাকার আওতার বিবেচনায় ২২ দিন ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনাকে বাংলাদেশে অন্যতম ব্যাপক ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

প্রতিবেদনে ইন্টারনেট শাটডাউন ও নানা মাত্রায় নিয়ন্ত্রণকে সময়ভিত্তিক পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন প্রথম ধাপ জুলাই ১৫-১৭, দ্বিতীয় ধাপ জুলাই ১৮-২৩, তৃতীয় ধাপ জুলাই ২৪-৩১, চতুর্থ ধাপ আগস্ট ১-৩ ও পঞ্চম ধাপ আগস্ট ৪-৫।

ভিপিএনের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু হয় ২৪ জুলাই। এ সময় প্রোটন ভিপিএন, নর্ড ভিপিএন ও টানেলবিয়ারের মতো অ্যাপগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ভিপিএন হলো নিরাপদ ও গোপন পথে ওয়েবসাইটে প্রবেশের উপায়, যা ব্যবহারকারীর অবস্থান ও ডেটা গোপন রাখে। বিশেষ করে ব্লকড করে দেওয়া ওয়েবসাইটে প্রবেশে এগুলো ব্যবহার করা হয়।

প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, সারা দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে ব্রডব্যান্ড সংযোগের গতি নিয়ন্ত্রণ ও সুনির্দিষ্ট কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কোনো ধরনের সরকারি নির্দেশ ও ঘোষণা ছাড়াই তা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবা বন্ধেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর থেকে এসব নির্দেশনা এসেছিল।

ডিজিটালি রাইটের গবেষণা থেকে জানা গেছে, ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করতে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (আইএসপি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এবং মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে সরকার থেকে মৌখিক ও অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু হওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৪ জুলাই রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলন বেগবান হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোবাইল ডেটার প্রবাহকে ধীরগতির করে দেওয়া হয়। ১৫ জুলাই সকাল থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি দুর্বল করে দেওয়া হয়। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ১৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১৬ জুলাই থেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেটকে বাধাগ্রস্ত করা হয়।

সহিংসতার তীব্রতা বাড়তে থাকলে ১৮ জুলাই থেকে দেশব্যাপী ইন্টারনেট শাটডাউন শুরু করে সরকার। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর ওই দিন দিবাগত রাত ১টা ২৯ মিনিটের দিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যা ২৩ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

২৪ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভিপিএন, মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ডের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১ থেকে ৩ আগস্টের মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া, ভিপিএন বাধাগ্রস্ত করা ও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। ৪ থেকে ৫ আগস্ট সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করা হয়েছে ডিজিটালি রাইটের প্রতিবেদনে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ