পুলিশের তিন শাখার টানাটানি, ৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার হলো লাশ
Published: 19th, April 2025 GMT
শুক্রবার বেলা ১টা। খুলনা থেকে ঈশ্বরদী হয়ে ঢাকায় চলাচলকারী আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পার হচ্ছিল। এ সময় এক নারী ট্রেন থেকে সেতুর নিচে পড়ে মারা যান। ঘটনার পর লাশটি ঈশ্বরদী থানার অধীন পাকশী ফাঁড়ি, রেলওয়ে নাকি নৌপুলিশ উদ্ধার করবে, তা নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়।
পুলিশের এ টানাটানিতে কেটে যায় ৫ ঘণ্টা। ততক্ষণ সড়কে পড়ে ছিল লাশটি। প্রথমে ঘটনাস্থলে পাকশী ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা গেলেও উদ্ধার করেননি। তাদের ভাষ্য, স্থানটি রেলওয়ের হওয়ায় তারা লাশ উদ্ধার করবে। খবর পেয়ে ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থল যায়।
তাদের দাবি, জায়গাটি রেলওয়ের হলেও পদ্মা নদীর সীমানার মধ্যে থাকায় এ দায়িত্ব নৌপুলিশের। তারাও লাশ উদ্ধার না করে চলে যায়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এভাবে সড়কে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার পাশাপাশি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে নৌপুলিশের একটি দল মরদেহটি উদ্ধার করে। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় পুলিশের তিন শাখার দায়িত্ব নিয়ে টানাটানিতে এভাবে ৫ ঘণ্টা পর দুর্ঘটনায় নিহত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে লক্ষ্মীকুণ্ডা নৌপুলিশের একটি দল এটি উদ্ধার করে।
নিহত নারীর কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শনিবার আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে নারীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি রেলওয়ের হলেও যেখানে মরদেহ পড়ে ছিল, সেটি নদী এলাকা বলে জানিয়েছেন ঈশ্বরদী থানার আওতাধীন পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকিউল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি রেলওয়ে অথবা নৌপুলিশের দায়িত্ব।
রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কিশোর কুমার দত্ত বলেন, রেললাইন বা রেল সেতুর ১০ মিটার দূরে যদি কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে তা রেলওয়ে পুলিশের আওতায় থাকে না। তখন তা থানা বা পুলিশের অন্য বিভাগের আওতায় চলে যায়। মরদেহ ১০ মিটারের বেশি দূরত্বে থাকায় এটি উদ্ধারের দায়িত্ব তাদের নয়।
লাশ উদ্ধারের পর ঈশ্বরদী নৌপুলিশের ইনচার্জ ইমরান মাহমুদ তুহিন বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, নারীর মরদেহ থানা পুলিশ বা রেলওয়ে পুলিশ উদ্ধার করবে। পরে জানতে পারি, আমাদের উদ্ধার করতে হবে। তাই বিকেলে নৌপুলিশের একটি দল পাঠানো হয়। ৬টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যমুনা সেতুর যানজট এড়াতে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে যানবাহনের চাপ
ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতি পথে যমুনা সেতু-সংলগ্ন মহাসড়কে তীব্র যানজট। তাই অনেকে পাবনার কাজীরহাট ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। কাজীরহাট-আরিচা ফেরিঘাটে ভোগান্তি ছাড়াই যানবাহন পারাপার হচ্ছে। আগের ৪টি ফেরির সঙ্গে আরও ২টি যুক্ত হওয়ায় এই নৌপথে মোট ৬টি ফেরি চলাচল করছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) ও বাস কাউন্টারগুলোর সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে যমুনা সেতু-সংলগ্ন সড়কে যানজট শুরু হয়। শুক্র ও গতকাল শনিবার যানজট তীব্রতর হয়। এর মধ্যে শনিবারের যানজটে পাবনা-ঢাকা পথে যাতায়াতকারী অনেক বাস আটকে পড়ে। এতে পাবনা, বেড়াসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে ঢাকাগামী বাসের সংকট দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকাগামী বাস ও ব্যক্তিগত ছোট গাড়িগুলো যমুনা সেতুর যানজট এড়াতে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথের ফেরি পারাপার বেছে নেয়। এতে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত কাজীরহাট ফেরিঘাটে ঢাকাগামী বিভিন্ন যানবাহনের চাপ আছে।
বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘আগে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে ৪টি ফেরি চলাচল করত। ঈদ উপলক্ষে এখন আরও ২টি ফেরি বাড়িয়ে মোট ৬টি ফেরি করা হয়েছে। এগুলো হলো ২টি রো রো ফেরি শাহ আলী ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান এবং ৪টি সেমি রো রো ফেরি বাইগার, গৌরী, চিত্রা ও ধানসিঁড়ি। এই ৬টি ফেরি দিয়ে নির্বিঘ্নে যানবাহনের চাপ সামলানো যাচ্ছে। বাসসহ যানবাহনগুলোকে ফেরিঘাটে বেশি দেরি করতে হচ্ছে না।’
কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে ঢাকামুখী আলহামরা পরিবহনের যাত্রী আবু হানিফ বলেন, ফেরিতে ওঠানামা মিলিয়ে আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। আর আরিচা থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেমন যানজট ছিল না। খুব ভালোভাবে ঢাকা পৌঁছাতে পেরেছেন। অথচ আরও দুই ঘণ্টা আগে রওনা দিয়েও তাঁর পরিচিত একটি পরিবারকে যমুনা সেতু-সংলগ্ন সড়কে ৫-৬ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়।
বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি চাপ ছিল শনিবার। আমাদের বেশ বেগ পোহাতে হলেও যানবাহনগুলো ভালোভাবে পার করে দিয়েছি। শনিবার আমাদের এই ঘাট হয়ে ফেরিতে ১০১টি বাস, ৪০১টি ছোট গাড়ি ও ৮০টি ট্রাক পার হয়েছে। আর আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৫টি বাস, ১৬টি ট্রাক, ৪২টি ছোট গাড়ি ও ২০০টি মোটরসাইকেল পার হয়েছে।’
বেড়া ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী আলহামরা পরিবহনের বেড়া শাখার ব্যবস্থাপক বরকত আলী বলেন, ‘যমুনা সেতুর যানজটে আমাদের কয়েকটি বাস এখনো আটকে আছে। এতে নির্ধারিত সময়ে শুধু আমাদের বাসই নয়, অন্য কোম্পানির বাসগুলোও ঢাকার উদ্দেশে ছাড়তে পারছে না। আর কোনো বাস ঢাকা থেকে বেড়া এসে পৌঁছানোর পর সেই বাস এখন থেকে আমরা কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। বতর্মান অবস্থায় এই পথে যাতায়াতে যাত্রীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।’