সময় তখন সকাল সাড়ে এগারটা পেরিয়ে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরের লোহার ব্রিজ সাদা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে নেওয়ার কাজ চলছিল। স্টেডিয়ামের ফটকের বাইরেই টিকিট কাউন্টার বুথ। যেখানে বিক্রি হচ্ছিল আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ প্রথম টেস্টের টিকিট। দাম সর্বনিম্ন ৫০ টাকা। সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা।
সকাল পেরিয়ে দুপুর। দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ম্যাচের আগের দিন স্টেডিয়ামের বাইরের বুখে টিকিট বিক্রির সংখ্যা কোনোমতে ৫০টা ছাড়িয়েছে। যেখানে ৫০০ টাকার বিক্রির হদিস মিলল না। টিকিট বিক্রিতে এতোটা ধস শুধু কি বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ বলেই?
স্বাগতিক শিবিরের এক কর্মকর্তা বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ‘প্রতিপক্ষ যে-ই হোক আগে একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের খেলা দেখতে, তার ভক্তরা চলে আসতেন। এখন সেই এক্স-ফ্যাক্টরটা এই দলে নেই।’ শুধু টিকিট নয়, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা সম্প্রচারের জন্য আগ্রহ নেই কোনো প্রতিষ্ঠানেরও। সেজন্য রাষ্ট্রীয় চ্যানেল বিটিভি এগিয়ে এসে টিভির পর্দায় দেখানে সাদা পোশাকের লড়াই।
আরো পড়ুন:
লিচু ও লাউয়ের নতুন পোকার জাত শনাক্ত সিকৃবির
সিমাগো র্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশ্ন উঠছে, দলে কি সত্যিই তারকা নয়তো একজন এক্স-ফ্যাক্টরের অভাব…নেই বললে আসলে ভুল হবে। দলে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৯৪ টেস্ট খেলা মুশফিকুর রহিম আছেন। তার জন্য এই মাঠের নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে ফুল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এক সমর্থক। সেই সুদিন হয়তো নেই বলেই গ্যালারিতে ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ চিৎকারের জন্য তেমন সমর্থন খুঁজে পাওয়া যাবে না।
দর্শক কিংবা সমর্থকদের অনাগ্রহের পেছনে পারফরম্যান্স বড় কারণ। সবশেষ ১০ টেস্টে সাতটিতেই হার বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে ২০২৪ সালে জিতেনি কোনো ম্যাচ। যে তিনটি ম্যাচ জিতেছে দুটি রাওয়ালপিণ্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে। একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজে কিংসটনে।
দেশের মাটিতে পারফরম্যান্স ভাটার কারণে প্রবল সমালোচনার মুখে ক্রিকেটাররা। পেছনের ব্যর্থতা ভুলে নিরুত্তাপ মঞ্চে নতুন আশায় বুক বাঁধছেন শান্ত অ্যান্ড কোং। তার বিশ্বাস, চলতি সিরিজ থেকেই নতুন এক বাংলাদেশের দেখা মিলবে ২২ গজে।
‘‘এটাই আশা করব সবার কাছে, এ বছরের যেহেতু প্রথম টেস্ট…আমরা যেন শুরুটা ভালো করতে পারি এবং আমি আশা করব যে ব্যাটসম্যানরা খুব ভালোভাবে অবদান রাখতে পারবে। ভুলগুলা অতীতে হয়েছে। কী ভুল হয়েছে সেটাও আমরা জানি। সেগুলো নিয়ে কাজ করেই আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।’’
জয় ভিন্ন শান্ত অন্য কিছু চিন্তা করতে পারছেন না তা তার কথাতেই স্পষ্ট, ‘‘অধিনায়ক হিসেবে আমি চিন্তা করছি যে, আমরা প্রত্যেকটা ম্যাচ জেতার জন্য খেলব। এখানে নিজের ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা আমাদের কারোরই নেই। নতুন কিছু আসলে আমরা চেষ্টা করব এবং এটাও শুরু হবে আগামী কালকে থেকে। আমার মনে হয় যে, ওটার জন্য যে ধরনের মন মানসিকতা প্রস্তুতি থাকা দরকার সেটা খেলোয়াড়রা নিয়েছে। পাশাপাশি আমি আশা করবো যে যারা ম্যানেজমেন্টে আছেন বা যারা ক্রিকেট বোর্ডে আছেন তারাও তাদের সাহায্য করবেন এই বিষয়গুলো নিয়ে।’’
‘‘আমি বিশ্বাস করি যে, যেহেতু আমাদের গত ২০-২২ বছরে টেস্ট ক্রিকেট একই রকম ছিল খুব বেশি উন্নতি হয়নি। এই জায়গাটাতে নিশ্চয়ই আমাদের কোন কিছু পরিবর্তনের দরকার আছ। ওই পরিবর্তনটাই করার আমরা চিন্তা করছি এবং আমি আশা করব যে এই পরিবর্তনটা আমাদের টেস্ট ক্রিকেটে কাজে লাগবে।’’ – যোগ করেন তিনি।
উইকেট থেকে স্পোর্টিং সুবিধা পাওয়ার কথা বললেন শান্ত, ‘‘সিলেটে সবসময় ভালো বাউন্সই থাকে। এরকম উইকেট আমরা আশা করি যে ট্রু বাউন্সটা থাকবে এবং আমি আশা করব যে ম্যাচে এরকম উইকেটই থাকবে।’’
চার বছর পর টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে এসেছে জিম্বাবুয়ে। ২০২০ সালে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি ইনিংসের ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে ষষ্ঠবারের মতো বাংলাদেশে টেস্ট খেলতে এসেছে। এর আগে ২০০১, ২০০৫, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশে এসে টেস্ট খেলেছে তারা। সব মিলিয়ে ১০ টেস্টে আফ্রিকার দলটির জয় দুটিতে।
এবার তাদের ভালো করার সুযোগ দেখছেন দলের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন, ‘‘বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়ের মধ্যে সবসময়ই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। জিম্বাবুয়ের জন্য বাংলাদেশে খেলা একটু কঠিন, কিন্তু আমরা সবসময় মনে করি যে আমাদের (বাংলাদেশের বিপক্ষে) সুযোগ আছে। এই দলের খেলোয়াড়রা ভালো হুমকি তৈরি করতে পারে।"
অতিথিরা বাংলাদেশকে মাঠে দেখে নেওয়ার জন্য ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার কথা বললেন, ‘‘আমরা একটা ভয়হীন মনোভাব আনতে চাই। ছেলেরা বাংলাদেশের কন্ডিশনের সাথে অপরিচিত, কিন্তু দীর্ঘ প্রস্তুতি আপনাকে বাইরে গিয়ে নিজেকে প্রকাশ করার আত্মবিশ্বাস দেয়। আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে টেস্ট ক্রিকেট খেলা উপভোগ করতে চাই।’’
টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য শুধু ভালো ক্রিকেটই নয়, নিজেদের পক্ষে ফল আনা অতি জরুরী। বাংলাদেশ এই সিরিজ থেকে নতুন শুরু করতে চাচ্ছে। জিম্বাবুয়ে সহজেই ছাড় দেবে না। নিরুত্তাপ মঞ্চে ব্যাট-বলের লড়াই শেষে কার মুখে শেষ হাসিটা থাকে সেটা দেখার।
সিলেট/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?