দিনাজপুরের বিরল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুর তিন দিনেও মামলা হয়নি। তাঁর মৃত্যুর ঘটনাটি অনেকেই রহস্যজনক মনে করলেও পরিবার জানিয়েছে ভিন্ন কথা। এদিকে এ ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘সংখ্যালঘু’ বা ‘হিন্দু হত্যা’ উল্লেখ করে প্রচারিত সংবাদের বিষয়ে পরিবার কিছু বলতে চায়নি।

ভবেশ চন্দ্র বিরল উপজেলার শহরগ্রাম ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের মৃত তারকানন্দ রায়ের ছেলে। পরিবার জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মোটরসাইকেলে চারজন এসে তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। তবে এ সময় ভবেশকে জোর জবরদস্তি করা হয়নি। নিজের ইচ্ছাতেই তিনি মোটরসাইকেলে উঠে চলে যান। রাত ১০টার দিকে মোবাইল ফোনে পরিবারকে জানানো হয়, ‘পান-বিড়ি খাওয়ার পর ভবেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে ভ্যানে বাড়ির পাশের ফুলবাড়ী হাটে পাঠানো হয়েছে।’ পরে পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়ে ভবেশকে অচেতন অবস্থায় পান। 

ভবেশকে যখন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়, তখন গ্রাম্য চিকিৎসক কৃষ্ণ কান্ত তাঁর রক্তচাপ মাপেন। তিনি জানান, অসুস্থতার সময় ভবেশের চোখ-মুখ বন্ধ ছিল। রক্তচাপ ছিল ওপরে ৭০ এবং নিচে নীল। পরে কৃষ্ণ কান্তের পরামর্শে তাঁকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

এদিকে ভবেশের মৃত্যুকে ‘হত্যা’ বলতে নারাজ পরিবার। রোববার তাঁর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। এর পর মৃত্যুর ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ কিংবা অপমৃত্যু মামলা করার সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে পরিবার। ভবেশের ছেলে স্বপন বলেন, ‘বাবার মৃত্যু অস্বাভাবিক। তবে অসুস্থ হয়ে, নাকি আঘাতের মাধ্যমে তিনি মারা গেছেন, সেটি এখনও নিশ্চিত না।’

ভবেশের স্ত্রী সান্ত্বনা রানী জানান, সেদিন রতন, আতিকসহ চারজন তাঁর স্বামীকে মোটরসাইকেলে নিয়ে যান। ভবেশ কীভাবে মারা গেছেন, তা এখনও সঠিকভাবে বলতে পারছেন না সান্ত্বনা। 

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবল চন্দ্র রায় জানান, ভবেশ এই পরিষদের সহসভাপতি। তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। 

শনিবার রাতে বিরল থানার ওসি আব্দুস সবুর জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। ঘটনার রাতেই নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন করেছে পুলিশ। লাশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এর পর পুলিশ নিজ উদ্যোগে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালে পাঠায়। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফাত হুসাইন বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিবেশী রতন, আখতারুল ইসলাম, রুবেল ইসলা ও মুন্নার সঙ্গে দুটি মোটরসাইকেলে করে ভবেশ নাড়াবাড়ি হাটে যায়। তাদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য থাকলেও তারা নিয়মিত একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। তারা মাঝেমধ্যে একসঙ্গে মাদকসেবন করতেন। মাদকের কারণে ভিকটিম ভবেশের অনেক সম্পত্তি খোয়া গেছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাজারে চা ও ধূমপান করার পর  মাথা ঘুরে বসে পড়েন ভবেশ। খয়ের, চুন ও কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খেয়েছিল। এ সময় দোকানের একটি খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে পড়েন। সেখান বসাই ধরাধরি করে পল্লি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, এই মৃত্যুর ঘটনায় কেউ কোনো মামলা করতে আসেনি, অভিযোগও দেয়নি। ময়নাতদন্ত হয়েছে, প্রতিবেদন এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এছাড়া পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। কিছু পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম

উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে  ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ