থানার ওসির ‘ঘুষ’ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল
Published: 19th, April 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শনিবার সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ভিডিওতে দেখা যায়, এনায়েত হোসেন একটি লিখিত আবেদনের সঙ্গে দেওয়া টাকা নিয়ে বলছেন– ‘কম টাকা দিলে সম্মান থাকে।’ এর পর তিনি টাকাসহ আবেদনটি নিজের ড্রয়ারে রেখে দেন। ভিডিওতে ওসির সামনে আড়াইহাজারের খাগকান্দা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বেলায়েত হোসেনকে দেখা যায়।
ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেন এনায়েত হোসেন। খাগকান্দা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বেলায়েত হোসেন ও মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাসুম শিকারীকে দুই পাশে বসিয়ে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে আসা ভিডিওর ঘটনা পাঁচ-ছয় মাস আগের। মারামারির ঘটনায় খাগকান্দা ইউনিয়নের এক নারী অভিযোগ দিলে বিষয়টি মীমাংসার জন্য বিএনপি নেতা বেলায়েত হোসেনকে দায়িত্ব দিই। তিনি ঘটনাটি মীমাংসা করলেও বাদীর জন্য ক্ষতিপূরণ আনেননি।’
ওসির ভাষ্য, পরে আমি বিবাদীদের ডেকে দুই-আড়াই হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে আবেদনপত্রের সঙ্গে দিতে বলি। তাদের টাকা আমি সবার সামনে ড্রয়ারে রেখে পরে বাদীকে দিয়েছি। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এখন ঘটনাটি ছড়ানো হচ্ছে।
বিএনপি নেতা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ওসি দায়িত্ব দেওয়ার পর আমি বিবাদ মীমাংসা করেছি। পরে তিনি বাদীকে দেওয়ার জন্য বিবাদীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমাদের সামনে ড্রয়ারে রাখেন। এখন ফেসবুকে যা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে ওসি দাবি করেন, আড়াইহাজার থানায় মামলা, জিডি ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য কোনো টাকা দিতে হয় না। তবে ভিডিওতে শাহীন সিকদার নামে ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, টাকা না দেওয়ায় আমার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ ১২ দিন আটকে রেখেছিলেন ওসি এনায়েত হোসেন। পরে দুই হাজার টাকা দিয়ে পেয়েছি।
ঊর্মি ইসলামের মন্তব্য, ‘এই ওসি অনেক বিপজ্জনক। টাকা না দেওয়ায় দুটি মিথ্যা মামলায় তিনি আমার স্বামীকে এক জেল খাটাচ্ছেন।’ এসব অভিযোগও মিথ্যা এবং বানোয়াট দাবি করেন এনায়েত হোসেন।
এদিকে গত বুধবার ওসির অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ ডাকযোগে পাঠিয়েছেন উপজেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাউদ্দিন মোল্লা এবং জিসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী আনোয়ার আক্তার বেবী।
ওসি এনায়েতের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে দুটি কমিটি হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের
ডিআইজি ও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার কমিটিগুলো করেছেন বলে জানা গেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র জন য ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।