মেট্রোরেলের র্যাপিড পাসও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়, ভোগান্তি যাত্রীদের
Published: 20th, April 2025 GMT
মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধের পাস বা কার্ডের সংকট মেটাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে স্থায়ী কার্ড বা র্যাপিড পাসের সংকট চলছে। ফলে কেনার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্থায়ী কার্ড না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে একক যাত্রার পাস কিনে যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
বর্তমানে মেট্রোরেলে তিন ধরনের কার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে স্থায়ী কার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে র্যাপিড ও এমআরটি (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট) পাস।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্র বলছে, বর্তমানে মেট্রোরেল প্রতিদিন চার লাখের বেশি যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করে। মোট যাত্রীর প্রায় ৬০ শতাংশই র্যাপিড ও এমআরটি পাস ব্যবহার করেন। বাকি ৪০ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করেন একক যাত্রার কার্ড।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করার মতো র্যাপিড ও এমআরটি পাস আছে খুব সামান্য। গতকাল শনিবার পর্যন্ত কয়েক দিনে দেখা গেছে, প্রতিদিনই যাত্রীদের কার্ড কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।
দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার স্থায়ী কার্ডের চাহিদা রয়েছে বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। এমআরটি বা র্যাপিড পাসে যাতায়াত করলে টিকিটের মূল্যে ১০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। এ জন্য স্থায়ী কার্ডের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া স্থায়ী কার্ডে ভ্রমণে ঝক্কিও কম।
জানা গেছে, টিকিট সরবরাহের বিষয়টি সরকারি দপ্তরের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। তবে তারা নিজেরা র্যাপিড কার্ড সংগ্রহ করতে পারে না।
শুরুতে ডিএমটিসিএল প্রকল্পের আওতায় জাপানের নিপ্পন সিগন্যাল কোম্পানি থেকে ৩ লাখ ১৩ হাজার একক যাত্রার এবং ৭ লাখ ২৮ হাজার এমআরটি পাস কেনে। গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত সেগুলো বিক্রি হয়। এরপর তারা আর এমআরটি পাস কিনতে পারেনি।
এমআরটি পাস দিয়ে শুধু মেট্রোরেলে চলাচল করা যায়। কথা ছিল, ঢাকার সব পরিবহনের জন্য একই কার্ড করা হবে। সেটা হবে র্যাপিড পাস।
র্যাপিড পাস সংগ্রহের দায়িত্ব আবার আরেক সরকারি সংস্থা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ)। এই সংস্থার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ডিএমটিসিএল ও ডিটিসিএ দুটিই সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন।
গতকাল দুপুরের দিকে ফার্মগেট স্টেশন থেকে স্থায়ী কার্ড কিনতে গিয়ে ব্যর্থ হন মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রবিউল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর একটি স্থায়ী কার্ড আছে। কিন্তু স্ত্রীর জন্য আরেকটি কার্ড কিনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে কাউন্টার থেকে বলা হয়েছে এখন কার্ড নেই। চলতি মাসের শেষের দিকে কার্ড আসতে পারে।
রবিউল বলেন, এখন তাঁর স্ত্রী একক যাত্রার কার্ড দিয়ে যাতায়াত করছেন। কিন্তু একক যাত্রার কার্ড কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়।
একটিমাত্র কার্ড ব্যবহার করে সব ধরনের গণপরিবহনে ভাড়া পরিশোধের সুবিধা চালু করতে ২০১৫ সালে প্রকল্প নেয় ডিটিসিএ। ‘র্যাপিড পাস’ নামে পরিচিত এ কার্ডের মাধ্যমে রেল, সড়ক ও নৌপথে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানটি ভাড়া আদায় করতে পারবে।
এ বিষয়ে ডিটিসিএর স্লোগান হলো, ‘ওয়ান কার্ড ফর অল ট্রান্সপোর্ট’ (সব পরিবহনে জন্য একই কার্ড)। তবে দেশে মেট্রোরেল ছাড়া অন্য বাহনে সেভাবে র্যাপিড পাস ব্যবহার হচ্ছে না।
ডিটিসিএ ঠিকাদারের মাধ্যমে র্যাপিড পাস সংগ্রহ করে। এরপর তা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে দেয়। ছয় মাস ধরে এভাবেই চলছে। তবে ডিটিসিএর ঠিকাদার সময়মতো কার্ড সরবরাহ করতে পারছে না বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও চাহিদামতো কার্ড পাচ্ছে না।
ডিটিসিএ সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি মাসে প্রাইম পাওয়ার সলিউশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে আড়াই লাখ র্যাপিড পাস সরবরাহের দায়িত্ব দেয় ডিটিসিএ। তারা ইন্দোনেশিয়া থেকে কার্ড আমদানি করে ডিটিসিএকে দেয়। আগামী মাসের মধ্যে তাদের সব কার্ড সরবরাহের কথা। তবে এখন পর্যন্ত মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ১ লাখ ১৮ হাজার র্যাপিড পাস পেয়েছে। তাও কয়েক কিস্তিতে অল্প অল্প করে কার্ড দেওয়া হয়েছে। ফলে তিন-চার মাস ধরে চাহিদামতো র্যাপিড পাস পাচ্ছেন না যাত্রীরা।
ডিটিসিএর কার্ড কেনার দায়িত্বে আছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোতাছিম বিল্লাহ। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, গণমাধ্যমে কথা বলার এখতিয়ার তাঁর নেই। সংস্থার প্রধান কথা বলবেন।
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে সড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহসানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, র্যাপিড পাস কেনার জন্য ডিটিসিএকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কার্ডের সংকটের বিষয়টি তিনি জানেন না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
বর্তমানে ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পথে মেট্রোরেল চলাচল করছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রথম মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়। বাসের চেয়ে খরচ বেশি হলেও মেট্রোরেল জনপ্রিয় হয়েছে। ব্যস্ত সময়ে মেট্রোরেলে ওঠাই কঠিন হয়ে পড়ে।
টিকিট কাটতে লাইনে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকার ভোগান্তিও কম নয়।
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা সায়েদা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর আগের কার্ডটি তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার নতুন কার্ড কিনতে গিয়ে ফেরত আসেন। তিনি বলেন, ‘জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করা হলো ভোগান্তি দূর করতে। এখন সামান্য টিকিট কাটতে ভোগান্তি হচ্ছে। এটা দুঃখজনক।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: একক য ত র র য ত য় ত কর ক র ড ক নত ড ট স এর ব যবহ র সরবর হ পর বহন সরক র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।
ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।
ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’
ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টশুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।
জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং