সোনাগাজীতে অস্ত্রসহ যুবক গ্রেপ্তার
Published: 20th, April 2025 GMT
ফেনীর সোনাগাজী থেকে অস্ত্রসহ মিজানুর রহমান (৪০) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। রবিবার (২০ এপ্রিল) ভোরের দিকে উপজেলার চরছান্দিয়া ইউনিয়নের লন্ডনীপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতের পরিবারের দাবি, মিজানুর সোনাগাজী উপজেলা জাতীয় পার্টির অর্থ সম্পাদক ছিলেন। তাদের অভিযোগ, জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী জেঠাতো ভাইরা বাড়ির বারান্দায় অস্ত্র রেখে মিজানুরকে ফাঁসিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, মিজানুর দীর্ঘদিন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে একটি বিস্ফোরক মামলা রয়েছে।
আরো পড়ুন:
গৃহবধূর মরদেহ সড়কে ফেলে পালানোর সময় স্বামী-শাশুড়ি আটক
কটিয়াদী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কারাগারে
গ্রেপ্তার মিজানুরের ছোট ভাই এম ফখরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে প্রতিবেশী জেঠাতো ভাইদের জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করেই আমাদের বাড়ির বারান্দায় অস্ত্র রেখে মিজানুরকে ফাঁসানো হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “প্রশাসন বাড়িতে আসলে মিজানুর নিজেই গেট খুলে তাদের সহযোগিতা করেন। অস্ত্রবাজ হলে তিনি পালিয়ে যেতেন।”
এম ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “মিজানুরকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত ডিবিআর মেমোরি বক্সগুলো খুলে নিয়ে গেছে।”
জাতীয় পার্টির সোনাগাজী উপজেলা কমিটির সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, “মিজানুর আমাদের কমিটির অর্থ সম্পাদক ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন না। শুনেছি, কেউ কেউ তাকে যুবলীগের ক্যাডার বলছেন, আমি সে বিষয়ে অবগত নই।”
সেনাবাহিনীর সোনাগাজী ক্যাম্প ইনচার্জ ক্যাপ্টেন আলিফ আল গনি বলেন, “সুনির্দিষ্ট সংবাদের ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। একটি বন্দুক ও একটি ম্যাগাজিনসহ তাকে (মিজানুর) গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।” সিসিটিভির মেমোরি নেওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ বায়েজিদ আকন বলেন, “যৌথ অভিযানে মিজানুরের বাড়ি থেকে অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ফেনী মডেল থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা রয়েছে। অস্ত্র আইনে নতুন মামলায় তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।” সিসিটিভির মেমোরি জব্দের বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য জানেন না বলে জানিয়েছেন।
ঢাকা/সাহাব/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কেমন হতে পারে ইরানের জবাব
ইসরায়েলের হামলার পর কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুমকিও দিয়েছেন। পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ও ঊর্ধ্বতন সামরিক নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, এই গল্পের শেষ ইরানের হাতেই লেখা হবে। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করা মানে সিংহের লেজ নিয়ে খেলা করা। এই ধরনের হামলার মুখে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রয়োজন অনুভব করতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
পাল্টা হামলায় প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলে ১০০ ড্রোন ছুড়েছে ইরান। প্রতিবেশী দেশ ইরাক জানিয়েছে, ইরানি ড্রোনগুলো তাদের আকাশসীমা অতিক্রম করে ইসরায়েলের দিকে ছুটে গেছে। তবে ইসরায়েল নিজ ভূখণ্ডের বাইরে এসব ড্রোন ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে। জর্দান জানিয়েছে, তাদের দেশে ইরানি ড্রোন বিস্ফোরণের আশঙ্কায় তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, ইসরায়েল ইরানের আবাসিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করেছে। হামলায় নারী ও শিশু নিহত হয়েছে। তিনি এর জবাবে সামরিক ও কূটনৈতিক উভয় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোর অঙ্গীকার করেছেন।
এদিকে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করছে ওয়াশিংটন। তবে ইরানি নেতারা সম্ভবত মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন কেবল এই হামলা সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিল না, বরং গোপনে ইসরায়েলকে সমর্থনও দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা এই হামলায় জড়িত ছিল না। তবে তেহরান মনে করে, হামলাটি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সমন্বিত হামলা। দেশটি এও মনে করে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সম্পূর্ণরূপে মার্কিন সামরিক সরঞ্জামের ওপর নির্ভরশীল।
ইরান ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই বিবৃতিতে ইসরায়েলকে সন্ত্রাসবাদের জন্য অভিযুক্ত করেছে। দেশটি জোর দিয়ে বলেছে, হামলাটি প্রমাণ করে, ইসরায়েল কোনো আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে না। তারা মাতালের মতো প্রকাশ্যে সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানের সমৃদ্ধি, পারমাণবিক প্রযুক্তি ও ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির বিষয়টি বিশ্ব এখন ভালোভাবে অবগত। কারা আগ্রাসী, কোন দেশ এই অঞ্চলের জন্য হুমকিস্বরূপ তাও বিশ্বের দেশগুলো এখন জানে।
ইরান জোর দিয়ে বলেছে, পারমাণবিক বোমা তৈরির কোনো গোপন পরিকল্পনা তাদের কখনও ছিল না। ইরানসহ পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সব দেশের বেসামরিক উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সার্বভৌম অধিকার রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি আছে– এমন কোনো প্রমাণ নেই। চলতি সপ্তাহে দেওয়া আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতিবেদনেও তা নিশ্চিত করা হয়েছে।’ তবে আইএইএ জানিয়েছে, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে করছে কিনা, তা প্রমাণ করা সম্ভব না।
বিশ্লেষণে বল হয়, তেহরান ধারাবাহিকভাবে যুক্তি দিয়ে আসছে, বারাক ওবামার সময় করা চুক্তি অনুসারে তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে আসছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ধারবাহিক আলোচনা করে যাচ্ছে। ইরানের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা জানতেন, ইরানের পদক্ষেপ নিয়ে ইসরায়েল ক্রমশ ক্ষুব্ধ হচ্ছে। তবে আরব কূটনীতিকদের আশা ছিল, ওয়াশিংটন-তেহরান অবশেষে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। তারা মনে করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হামলার অনুমতি ইসরায়েলকে সহসাই দেবে না।
গত ২৩ এপ্রিল ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের চলমান আলোচনায় সন্তুষ্ট নয় ইসরায়েল। তারা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে ইরানের কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিপথগামী করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা পরিষেবাগুলো উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।
তবে আরাগচির এই বক্তব্য ভুল প্রমাণিত করে ইসরায়েল সফল হামলা চালিয়েছে। ইরানের কাছে থাকা রাশিয়ার তৈরি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
ইরানের অর্জন মূলত একটি। তা হলো, সম্প্রতি আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দেশটি সম্পর্ক উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে লেবানন, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরাকে যে প্রক্সি যুদ্ধ চালাচ্ছিল তেহরান, ইসরায়েল সেই প্রতিরক্ষা ভেঙে দিতে সক্ষম হয়। এই অবস্থায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলো যৌথভাবে কোনো সামরিক পদক্ষেপের দিকে অগ্রসর হবে না।