যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চমূল্যের পার্সেল পাঠানো স্থগিত করল ডিএইচএল
Published: 21st, April 2025 GMT
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি চালুর পর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বিভাগে কড়াকড়ি বেড়ে যাওয়ায় বহুজাতিক পণ্য ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ডিএইচএল এক্সপ্রেস ৮০০ ডলারের বেশি দামি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সাময়িকভাবে বন্ধ করছে।
পণ্য দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ডিএইচএল বলেছে, আজ সোমবার থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্বের যেকোনো দেশের প্রতিষ্ঠান থেকে মার্কিন ভোক্তাদের কাছে পাঠানো চালান তারা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখবে।
তবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতর বা ‘বিজনেস টু বিজনেস’–এর আওতায় থাকা চালানগুলো এখনো চালু রাখবে তারা। তবে সেগুলোর ক্ষেত্রেও পণ্য পৌঁছাতে দেরি হতে পারে।
এর আগে ২ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত মূল্যের পণ্য কাগজপত্রের সামান্য ঝামেলা পেরিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারত। তবে চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্পের নতুন শুল্ককাঠামো ঘোষণার পর এ সীমা কমিয়ে আনা হয়।
ডিএইচএল বলেছে, ‘এ পরিবর্তনের ফলে শুল্ক বিভাগে আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা দিনরাত সেগুলো সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
তারা জানিয়েছে, আমরা এ অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তবে উৎস যে দেশেই হোক না কেন, ৮০০ ডলারের বেশি মূল্যের চালান পৌঁছাতে কয়েক দিন দেরি হতে পারে।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা ৮০০ ডলারের কম মূল্যের চালানগুলো আগের মতোই যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাবে এবং ন্যূনতম কাগজপত্রের বাধা পেরিয়ে সেগুলো ছাড় পাবে বলে আশা করছে।
তবে ৮০০ ডলারের কম মূল্যের পণ্যের ওপরও কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে হোয়াইট হাউস। বিশেষ করে চীন ও হংকং থেকে পাঠানো চালানগুলোর ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হচ্ছে। ২ মে এ–সংক্রান্ত আইনি ফাঁকফোকর বন্ধ করে দেবে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে কম মূল্যের পণ্যও শুল্ক ছাড়া আর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না।
‘ডি মিনিমিস’ নামের ওই তথাকথিত নিয়ম বাতিল ফাস্ট ফ্যাশন ব্র্যান্ড শিইন এবং স্বল্প মূল্যের রিটেইল জায়ান্ট টেমুর জনপ্রিয়তায় প্রভাব ফেলবে।
শিইন ও টেমু—উভয়ই এ বিষয়ে সতর্ক করে জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যনীতিমালা ও শুল্ক পরিবর্তনের কারণে তাদের পণ্যের দাম বাড়াবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, চীনে অবস্থানরত ‘অনেক ব্যবসায়ী’ অবৈধ পণ্য লুকিয়ে প্রকৃত তথ্য গোপন করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান।
এক নির্বাহী আদেশে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তাদের এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো ‘সিনথেটিক অপিওয়েডের (রাসায়নিকভাবে তৈরি একধরনের ব্যথানাশক) সরবারহশৃঙ্খলকে মোকাবিলা করা। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এ সংকট তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে চীনের পাঠানো অপিওয়েড।
চীনে বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর মাদকবিরোধী আইন রয়েছে উল্লেখ করে বেইজিং জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের যে ফেন্টানিল সমস্যার কথা বলছে, সেটা তাদের ‘অভ্যন্তরীণ সংকট’।
গত সপ্তাহে হংকং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হংকং থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সমুদ্রপথে পণ্য পাঠানো স্থগিত করা হচ্ছে। ২৭ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী কোনো পণ্য তারা পৌঁছে দেবে না। হংকং পোস্ট দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক আরোপ করেছে, তা অযৌক্তিক, নীপিড়নমূলক ও আপত্তিকর।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’