প্রান্তিক তাঁতিদের ভরসার জায়গা ‘ফেব্রিক লাগবে’
Published: 21st, April 2025 GMT
আর্থিক অনটনের কারণে এসএসসি পাসের পর ছেলেকে আর পড়াতে চাইলেন না বাবা আবুল কাশেম তালুকদার। মালয়েশিয়ায় পাঠাতে জমি বিক্রি করে দালালকে টাকাও দিলেন। কিন্তু ছেলে পড়াশোনা করতে চায়। ছেলে বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকবে ভেবে মায়ের মনও সায় দিচ্ছিল না। সে জন্য এক রাতে মা আসমা আক্তার ছেলেকে বললেন, ‘তুই চুপি চুপি মামার বাড়ি চলে যা।’
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মামার বাড়িতে থেকে কলেজে পড়াশোনা শুরু হলো ছেলেটির। তবে মামার নির্দেশ ছিল, সকালে-বিকেলে তাঁর মুরগির ব্যবসায়ে বসতে হবে। সেভাবেই চলছিল। কিছুদিন পর সহপাঠীরা তাঁকে মুরগির ব্যাপারী বলে খ্যাপাতে লাগল। তখন উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনায় ইস্তফা দিয়ে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হলেন। অন্যের বাসায় জায়গির থেকে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেন।
কুমিল্লার দাউদকান্দির এই ছেলে এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। তাঁর নাম মো.
ফেব্রিক লাগবে প্ল্যাটফর্মে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার তাঁতি ও ব্যবসায়ী তাঁদের পণ্য বিক্রি করতে যুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ী ক্রেতার সংখ্যা সাড়ে ৭ হাজার। প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে বর্তমানে বছরে ১০-১২ কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হয়।
নাজমুল ইসলাম ও তাঁর ফেব্রিক লাগবে প্ল্যাটফর্ম নতুন করে আলোচনায় এসেছে চলতি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে। এতে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন শ্রেণিতে চার প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। ইনোভেশন বা উদ্ভাবন শ্রেণিতে পুরস্কার পায় ফেব্রিক লাগবে লিমিটেড। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাত থেকে পুরস্কার নেন ফেব্রিক লাগবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মো. নাজমুল ইসলাম।
উত্তর বাড্ডায় ফেব্রিক লাগবের কার্যালয়ে গত বুধবার নাজমুল ইসলামের সঙ্গে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের দীর্ঘ আলাপ হয়। তিনি বলেন, ‘ফেব্রিক লাগবে প্রান্তিক তাঁতি, ক্ষুদ্র বস্ত্রকল ও তৈরি পোশাক কারখানার ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে।’
পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা
কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০০৪ সালে ঢাকায় চলে আসেন নাজমুল ইসলাম। চাকরি নেন নাভানা পাওয়ার জেনারেশনে। বেতন ১৩ হাজার টাকা। চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিতে মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (তড়িৎ যন্ত্র প্রকৌশল) ভর্তি হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ মেটাতে প্রায়ই বন্ধুদের নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলে যেতেন নাজমুল ইসলাম। সেখান থেকে আনারস, কলা, আম ইত্যাদি ফল নিয়ে এসে ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিক্রি করতেন। তাতে যে মুনাফা হতোম তা দিয়ে কয়েকটি দেশও ঘোরেন।
বছর দেড়েক কাজ করার পর চাকরি ছেড়ে মালয়েশিয়া থেকে সার্জিক্যাল গ্লাভস আমদানি শুরু করেন নাজমুল ইসলাম। ২০১২ সালে নরসিংদীতে নুসাইবা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে বস্ত্র কারখানা স্থাপন করেন। শুরুতে স্থানীয় বাজারের জন্য কাপড় তৈরি করলেও পরে প্রচ্ছন্ন রপ্তানির জন্য আলাদা কারখানা করেন।
ফেব্রিক লাগবে প্ল্যাটফর্মে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার তাঁতি ও ব্যবসায়ী তাঁদের পণ্য বিক্রি করতে যুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ী ক্রেতার সংখ্যা সাড়ে ৭ হাজার।করোনাকালে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের অনেকের রপ্তানি ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। নাজমুল ইসলামেরও আড়াই কোটি টাকার কাপড়ের রপ্তানি আদেশ বাতিল করে দেয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। তাতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর। এ রকম অবস্থায় লোকসান কিছুটা কমানো যায় কি না, সে চিন্তা থেকে কাপড় বিক্রির উদ্দেশ্যে পুরান ঢাকার ইসলামপুরে যান। তিনি কাপড়ের যে দাম চাচ্ছিলেন, তার ধারেকাছেও দিতে চাচ্ছিলেন না সেখানকার পাইকারেরা। তখন যেন চোখে অন্ধকার দেখেন এই তরুণ ব্যবসায়ী।
নাজমুল ইসলাম বললেন, ‘মার্কেটের বারান্দায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। মাথায় তখন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল, এভাবে আমি কাপড় বিক্রি করতে পারব না। আমার এমন কিছু করতে হবে, যাতে হাজার হাজার ক্রেতার সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করা যায়। আমি তৎক্ষণাৎ আমার লোকজনকে বললাম, কাপড় বেচা হয়ে গেছে। তোমরা সবাই ট্রাকে কাপড় তোলো।’ তিনি বলেন, ‘এরপর প্রায় তিন মাস শুধু পরিকল্পনা করেছি। তারপর জমানো টাকা নিয়ে ওয়েবসাইট বানানোর কাজে নেমে পড়ি।’
ফেব্রিক লাগবের পথচলা
ওয়েবসাইট করতে গিয়েও বেশ ঝক্কির মধ্যে পড়েন নাজমুল ইসলাম। প্রথমে কয়েক মাস কাজ করার পর একটি প্রতিষ্ঠান তা ছেড়ে দেয়। তখন আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ শেষ করেন। তারপর প্রান্তিক তাঁতিদের মধ্যে ফেব্রিক লাগবে প্ল্যাটফর্মকে পরিচিত করতে নরসংদী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান। তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যও অনেক টাকা বিনিয়োগ করেন। অবশেষে ২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি ফেব্রিক লাগবে যাত্রা শুরু করে।
ফেব্রিক লাগবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি প্রচলিত ই-কমার্স থেকে কিছুটা আলাদা। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতার আলাদা আইডি থাকে। বিক্রেতা (ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান) তাঁর উৎপাদিত পণ্য সুতা, কাপড় কিংবা অন্য কোনো পণ্যের ছবিসহ অন্যান্য তথ্য আপলোড করেন। ব্যবসায়ী সেই পণ্য কিনতে চাইলে প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমেই দর-কষাকষি করতে পারেন। এভাবে ফেব্রিক লাগবের মাধ্যমে বেচাকেনা হয়ে থাকে।
এর বাইরে ক্ষুদ্র তাঁতিদের ন্যায্য দামে সুতার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ফেব্রিক লাগবে। কারণ, ক্ষুদ্র তাঁতিরা অল্প পরিমাণে সুতা কেনেন। কিন্তু স্পিনিং মিল অল্প সুতা বিক্রি করে না। সে জন্য ফেব্রিক লাগবে বিভিন্ন স্পিনিং মিল থেকে বিপুল পরিমাণ সুতা কেনে। তারপর সেই সুতা তাঁতিদের কাছে বিক্রি করে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের পর এখন প্রতিটি উপজেলায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরির কাজ করছেন নাজমুল ইসলাম। বললেন, ‘প্রান্তিক তাঁতিদের পণ্য আমরা উপজেলায় পৌঁছে দিতে চাই। এ জন্য উপজেলা পর্যায়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি করব। পুরো কাজটি আমরা ডিজিটাল মাধ্যমে করব। নতুন এই প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ পেলে কাজটি সহজ হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড জ ট ল প ল য টফর ম ব যবস য় র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে
দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।
বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’
কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি।
এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’।
বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়।
মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন।
বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।
শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ
রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে।
প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে।