গাজীপুরে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোরে প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পড়ে থাকার ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সরকারি খরচে বরাদ্দ পাওয়া ওষুধ বিনামূল্যে রোগীদের মাঝে বিতরণ না করে সেগুলো গোপনে স্টোরে জমা করে রাখা হয় অন্যত্র বিক্রির উদ্দেশ্যে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের ফলে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।    

প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ সময় পাওয়া যায় না বলে রোগীদের অভিযোগ রয়েছে। অথচ রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতালের স্টোরে গিয়ে দেখা যায়, দামি এন্টিবায়োটিক, ইনজেকশন, এনেসথেশিয়া, সর্দি-কাশির ওষুধসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসামগ্রী স্টোরে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। 

কাপাসিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় গৃহবধূ জোসনা বেগম বলেন, ‘‘আমি গত এক বছরে কয়েকবার এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি। কিন্তু একবারও তারা ওষুধ দেয়নি। অথচ আজ শুনলাম ওষুধ গুদামে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। এটা কি আমাদের সঙ্গে মশকরা নয়?’’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা.

মো. হাবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে জানান, তিনি মাত্র এক মাস আগে যোগ দিয়েছেন। ফলে তার পূর্বে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ওষুধগুলোর দায় তার নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমি যোগদানের পর সব রোগীকে সিজারিয়ানসহ সব অপারেশনের ওষুধ এখান থেকেই দিয়েছি। যেসব ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ, সেগুলো আমার যোগদানের আগেই নষ্ট হয়েছে।’’

তবে সাবেক ইউএইচএফপিও এবং বর্তমান গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মামুনুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘স্টোরের দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার সময় কোনো হিসাব দিয়ে যাননি। ফলে অবশিষ্ট ওষুধ কী পড়ে ছিল জানা যায়নি।’’ 

হাসপাতালের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘এসব ওষুধ রোগীদের না দিয়ে অন্যত্র বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় পাচার করা সম্ভব হয়নি।’’

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘গরিব মানুষের প্রাপ্য ওষুধ মজুদে রেখে নষ্ট করে ফেলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দীর্ঘ তিন বছর কাপাসিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করেছেন ডা. মামুনুর রহমান। এ সময় অধিকাংশ ওষুধের মেয়াদ শেষ হয় এবং রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব স থ য কমপ ল ক স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ