মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মার্স রোভার পারসিভারেন্স মঙ্গল গ্রহে একটি রহস্যময় খুলি আকৃতির পাথরের ছবি তুলেছে। খুলি আকৃতির পাথরের উৎস সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য মেলেনি। স্কাল হিল নামে অভিহিত রহস্যময় পাথরটি ১১ এপ্রিল পারসিভারেন্স রোভার জেজেরো ক্রেটারের প্রান্তে মাস্টক্যাম–জেড যন্ত্র ব্যবহার করে আবিষ্কার করেছে।

ছবিতে দেখা যায়, পাথরের চারপাশের বেশির ভাগ অঞ্চল হালকা রঙের ও ধূলিময়। খুলি আকৃতির পাথরটি অন্ধকার, কৌণিক ও ক্ষুদ্র গর্তে ঢাকা। নাসা জানিয়েছে, এই ভাসমান পাথরটি দেখতে কিছুটা গাঢ় রঙের। কৌণিক পৃষ্ঠের সঙ্গে চারপাশের হালকা রঙের শিলাস্তরের বিপরীতে স্বতন্ত্র ধরনের পাথরটি। পাথরটিতে কয়েকটি ছোট গর্ত দেখা যায়।

পাথরের উৎস অনিশ্চিত থাকলেও নাসা মনে করেছে, স্কাল হিলের গর্ত ক্ষয় থেকে হয়েছে কিংবা কোনো উল্কার পতনের কারণে তৈরি হতে পারে। নাসা জানিয়েছে, স্কাল হিলের গর্ত পাথরের কণা ক্ষয় বা বাতাসের ঘর্ষণের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে। অতীতে হয়তো স্কাল হিল কাছাকাছি কোনো শিলাস্তর থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েও তৈরি হতে পারে।

নাসার গবেষক দল বিশ্বাস করছে, স্কাল হিলের রং কিউরিওসিটি রোভার কর্তৃক আগে গেইল ক্রেটারে পাওয়া উল্কার রঙের সঙ্গে কিছুটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। কোথা থেকে এই পাথরগুলো এসেছে ও কীভাবে তারা মঙ্গলে অবস্থান করছে, তা নিয়ে ভালোভাবে বোঝার জন্য কাজ করছে নাসা।

এসব পাথরের মধ্য থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্বের উত্তর খুঁজছেন। এ বছরের জানুয়ারিতে নাসার মার্স রিকনস্যান্স অরবিটার (এমআরও) বেশ কিছু নতুন ছবি সংগ্রহ করে। ছবিতে উত্তর গোলার্ধে হিমায়িত বালুর টিলায় ঢাকা মঙ্গলপৃষ্ঠ দেখা যায়। পৃথিবীর টিলার বিপরীতে মঙ্গলের টিলা গতিশীল বলা হচ্ছে। গত বছরের অক্টোবরে একটি নাসা লাল গ্রহ মঙ্গলপৃষ্ঠের বরফ জমাট পানির নিচে প্রাণের সম্ভাব্য আবাস থাকতে পারে বলে জানিয়েছে।

সূত্র: এনডিটিভি

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’

মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’

মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।

শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ