লিভারপুলের অপেক্ষা, আর্সেনালের সম্ভাবনা, লেস্টারের অবনমন
Published: 21st, April 2025 GMT
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে রোববার ছিল এক রুদ্ধশ্বাস দিন। একদিকে আর্সেনালের জয়ে টাইটেল রেস আরও জমে উঠেছে। অন্যদিকে লিভারপুল জয় পেলেও তাদের শিরোপা জয়ের উৎসব বিলম্বিত হয়েছে। পাশাপাশি গত কয়েক মৌসুম আগেও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দাপট দেখানো লেস্টার সিটি অবনমন হয়ে নেমে গেছে চ্যাম্পিয়নশিপে।
রোববার ইপ্সউইচের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ৪-০ ব্যবধানের জয় তুলে নেয় মিকেল আর্তেতার আর্সেনাল। ম্যাচে লিয়াঁন্দ্রো ট্রোসার্ড দুটি, গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেলি ও ইথান নওয়ানেরি একটি করে গোল করেন।
এই জয়ে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে শিরোপা জয়ের অপেক্ষায় থাকা লিভারপুলের উপর। জার্গেন ক্লপের দল লেস্টার সিটির বিপক্ষে ট্রেন্ট আলেক্সজান্ডার আর্নল্ডের একমাত্র গোলে জয় পেয়েছে। তবুও আর্সেনালের জয় তাদের শিরোপা নিশ্চিতের অপেক্ষা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরো পড়ুন:
আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি গোলরক্ষক হুগো গাত্তি আর নেই
হামজা ও শমিতের পর লাল-সবুজের জার্সি পরতে যাচ্ছেন সান্ডারল্যান্ডের মিচেল
লেস্টার সিটির বিপক্ষের জয়টি যদিও লিভারপুলের শিরোপা জয়ের ক্ষেত্রে খুব বড় কোনো অগ্রগতি আনতে পারেনি, তবে এটি লেস্টারের জন্য ছিল যেন মৃত্যুর ঘণ্টা। এই পরাজয়ে নিশ্চিত হয়েছে, লেস্টার সিটি আগামী মৌসুমে খেলবে না ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে যারা রূপকথার মতো এক গল্প লিখে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তারাই আজ টেবিলের নিচের সারিতে থেকে চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে গেল। এক দশকের মধ্যেই তুঙ্গ থেকে পতনের এ দৃশ্য ফুটবল বিশ্বের জন্য এক করুণ বাস্তবতা।
৩৩ ম্যাচ শেষে লিভারপুল ৭৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে, সমান ম্যাচ থেকে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে আর্সেনাল দ্বিতীয় স্থানে, ৫৯ পয়েন্ট নিয়ে নিউক্যাসল তৃতীয় ও ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি আছে চতুর্থ স্থানে। পয়েন্ট টেবিলে চোখ রাখলে বোঝা যায় লিগের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নাটক জমে থাকবে নিশ্চিত।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল আর স ন ল
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।