রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিন বছর আগে যুদ্ধের শুরুর দিকেই কেবল এই দুই নেতার মধ্যে সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনা ছিল। পরে যুদ্ধের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তা শেষ হয়ে যায়।

গতকাল সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, ‘শান্তি আলোচনার যেকোনো পদক্ষেপকে রাশিয়া সব সময় ইতিবাচকভাবে দেখে। আমাদের আশা, ইউক্রেনের প্রতিনিধিরাও একই ধরনের বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন।’

পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, পুতিন যে সরাসরি আলোচনা করতে চান, সেটার অর্থ এই নয় যে দেশটির বেসামরিক নিশানায় হামলা চালানো বন্ধ করা হবে।

পুতিনের মন্তব্য নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি জেলেনস্কি। তবে সোমবার রাতে নিয়মিত ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ইউক্রেন ‘যেকোনো ধরনের আলোচনার জন্য প্রস্তুত’। কিন্তু তাতে বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাসে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে দু-একটি দেশে সরাসরি ও অনলাইনে কয়েক দফা আলোচনা হয়। যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণা করলে তা বন্ধ হয়ে যায়।

পুতিনের মন্তব্যের পর ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থাকে পেসকভ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বলেছেন বেসামরিক নিশানায় হামলা না চালানোর বিষয়েও আলোচনা সম্ভব। এটা দ্বিপক্ষীয়ভাবে হতে পারে। এর অর্থ হলো ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে দর-কষাকষিসহ সার্বিক আলোচনার প্রসঙ্গ মাথায় রেখে তিনি কথা বলেছেন।’

ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, বেসামরিক অবকাঠামোয় হামলা চালাতে রাশিয়া রাজি হবে কি না, সে বিষয়ে ‘মস্কোর পক্ষ থেকে স্পষ্ট উত্তর’ চায় ইউক্রেন।

এর আগে ইস্টার সানডেতে ঘোষিত পুতিনের স্বল্প সময়ের যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। এমন যুদ্ধবিরতি, যাতে অন্তত ৩০ দিনের জন্য দূরপাল্লার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে বেসামরিক অবকাঠামোতে সব ধরনের হামলা বন্ধ করা হবে।’

আরও পড়ুনজেলেনস্কি বেসামরিক স্থাপনায় ৩০ দিনের জন্য হামলা বন্ধ চান ২২ ঘণ্টা আগে

জেলেনস্কির ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রসঙ্গে পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধারণাটি আমরা “বিশ্লেষণ” করে দেখব। বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা বন্ধ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে.

..তা সুনির্দিষ্ট করা দরকার।’

সাংবাদিকদের কাছে পুতিন চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব দিকের শহর সুমির মধ্যাঞ্চলের একটি বেসামরিক স্থাপনায় হামলার কথা স্বীকার করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের এ ধরনের স্বীকারোক্তি দুর্লভ। রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৫ জন নিহত এবং ১০০ জনের বেশি আহত হন।

পুতিন বলেন, ‘একটি কংগ্রেস হলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার বিষয়টি সবাই আপনারা জানেন। সুমি অঞ্চলে এ হামলা চালানো হয়েছে। এটি একটি বেসামরিক অবকাঠামো, নয় কি? হ্যাঁ, এটি বেসামরিক অবকাঠামো। কিন্তু সেখানে [রাশিয়ার] কুরস্ক অঞ্চলে যারা অপরাধ করেছিল, তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিল।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ