বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা প্রতিটি ঘরে পৌঁছাতে হবে। এ দায়িত্ব নিতে হবে জেলা ও উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলায় রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃত্তি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যোগ দিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘‘আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনে সক্ষম হলে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব। কেননা আমরা দেশের ২০ কোটি মানুষের সঙ্গে কমিটমেন্ট করেছি।’’

আরো পড়ুন:

রাউজানে যুবদল কর্মীকে মাথায়-বুকে গুলি করে হত্যা

নড়াইলে প্রতিপক্ষের হামলায় বিএনপি নেতার হাত বিচ্ছিন্ন

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সফলতা অর্জন করতে হলে এখনো অনেক পরিশ্রম করতে হবে। আপনাদের অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। যেকোনো মূল্যে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা জন সমর্থনবিরোধী কাজ করবে, তাদের সরিয়ে দিতে হবে। তা নাহলে আমাদের অর্জন বৃথা হয়ে যাবে।’’

তারেক রহমান ভার্চুয়ালি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেওয়া নেতাকর্মী প্রশ্ন ও প্রস্তাবনা শুনে উত্তর দেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু সকাল সাড়ে ১০টায় কুড়িগ্রাম জেলা শহরের আলমাস কমিউনিটি সেন্টারে প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন।

কর্মশালার উদ্বোধনকালে শামসুজ্জমান দুদু বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

ইউনুস অতি সম্প্রতি ডিসেম্বরে নির্বাচন করবেন বলেছিলেন, তারপর আবার মধ্যরাতে সংশোধন করে প্রেসনোট দিয়ে জুনে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়া হোক, এ জন্য আন্দোলনের দরকার নেই।’’

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আরো যোগ দেন বিএনপির  সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু, ড. মাহাদী আমিন, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা প্রমুখ। 

জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের ৬ শতাধিক নেতাকর্মী কর্মশালায় অংশ নেন। তারেক রহমানের বক্তৃতার মাধ্যমে সন্ধ্যায় প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষ হয়।

ঢাকা/সৈকত/বকুল 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।” 

এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক। 

উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”

তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।

আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।” 

চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।” 

চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”

মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ