গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি ওষুধ মজুত করে নষ্ট করার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কমিটি গঠনের পর তদন্তকাজ শুরু হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ‘কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: ওষুধ রোগীদের না দিয়ে বিক্রির পরিকল্পনা, সরকার বদলে ওলটপালট’ শিরোনামে গতকাল সোমবার (২১ এপ্রিল) রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর পরই একটি তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ঢাকা বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা.

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন উপপরিচালক ডা. আজিজ, ডা. হারুনুর রশীদ এবং সহকারী পরিচালক ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার। তারা মঙ্গলবার থেকেই মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন।

ঘটনার পরপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামান্না তাসনীম পরিদর্শনে যান। তিনি বলেন, ‘‘ওষুধের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। সরকারি নির্দেশেই আমি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। তদন্ত চলছে, রিপোর্ট হাতে এলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’

এই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে বর্তমান ইউএইচএফপিও ডা. মো. হাবিবুর রহমান এবং সাবেক ইউএইচএফপিও ডা. মামুনুর রহমানকে দায়ী করা হচ্ছে। ডা. মামুনুর ২০২২ সালের ১৪ মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত এই কমপ্লেক্সে দায়িত্বে ছিলেন। তবে তিনি দায় চাপিয়েছেন হাসপাতালের সাবেক স্টোর সহকারী আব্দুর রাজ্জাকের ওপর।

হাসপাতালের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ওষুধগুলো একাধিক কক্ষে এলোমেলোভাবে পড়ে ছিল। এর মধ্যে কিছু ওষুধ ২০২১ সালেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়, অথচ সেগুলো এখনো সরানো হয়নি।

প্রতিদিন শত শত রোগী বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধের আশায় হাসপাতালে আসেন। অভিযোগ রয়েছে, ওষুধগুলো সময়মতো বিতরণ না করে ইচ্ছাকৃতভাবে মজুত রাখা হয়, কিছু ক্ষেত্রে বিক্রির উদ্দেশ্যে। বিক্রি সম্ভব না হওয়ায় ওষুধগুলো পড়ে থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের অব্যবস্থাপনা নতুন নয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন যথাযথ হলে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কমবে।

তারা আরো জানান, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রশাসনিক গাফিলতি, জবাবদিহিতার অভাব এবং দুর্নীতির একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত হবে শুধু দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নয়, ওষুধ সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থার ওপর নতুন নজরদারি কাঠামো তৈরি করা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা/রফিক/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কমপ ল ক স ব যবস থ সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ