পৃথিবীর আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 23rd, April 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি করার সুযোগ এসেছে। এটি এমন এক চুক্তি, যার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, ঐতিহ্য, ন্যায়বিচার, মর্যাদা এবং সুযোগের ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ একত্রে তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর জন্য আশার এক বাতিঘর হিসেবে দাঁড়াতে চাই। আমাদের বন্ধু ও অংশীদারদের আহ্বান জানাই, অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক চুক্তি পুনর্লিখনের জন্য। পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের ভূমিকা অন্বেষণ করতে, যা প্রান্তিক জনগণের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক।’
গতকাল মঙ্গলবার কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ড.
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এমন এক সময় পার করছি, যেখানে বহুপক্ষীয় হুমকি রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে এবং মানবিক সংকট গভীরতর হচ্ছে। নতুন নতুন নীতিমালা, প্রযুক্তি এবং শাসন পদ্ধতি আমাদের পৃথিবীকে দ্রুত রূপান্তরিত করছে, যা অতীতের অনেক অনুমানকে অচল করে দিচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এখন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। আসুন, আমরা সাহসী হই। ভবিষ্যৎ এমন কিছু নয়, যা আমরা উত্তরাধিকার হিসেবে পাই। এটি এমন কিছু যা আমরা তৈরি করি এবং আমাদের প্রত্যেকেরই এতে ভূমিকা রয়েছে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের উদ্ভাবন, সহমর্মিতা এবং সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের সক্ষমতাও ব্যাপক। কাতার যেভাবে আর্থনা সামিটের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে, তা দেখাচ্ছে কীভাবে একটি দেশ উদ্ভাবন, ঐতিহ্য ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট, সামাজিক বৈষম্য এবং কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ মোকাবিলা করতে পারে।
মঙ্গলবার শুরু হওয়া দু’দিনের এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’।
ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসায় জোর
ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কীভাবে জীবন বদলে দেওয়া সম্ভব, সেই গল্প আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনে শোনালেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বে ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে জীবন বদলে ফেলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
কাতারের আমিরের মায়ের সঙ্গে বৈঠক
কাতারের আমিরের মা এবং কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেখ মোজা বিনতে নাসেরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তারা বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টা কাতার ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারপারসন শেখ থানি বিন হামাদ বিন খলিফা আল-থানির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া তিনি কাতার চ্যারিটির আন্তর্জাতিক অপারেশনস সেক্টরের সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নওয়াফ আবদুল্লাহ আল হাম্মাদির সঙ্গে বৈঠক করেন।
বাংলাদেশ থেকে ৭২৫ সেনাসদস্য নেবে কাতার
কাতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে ৭২৫ জন সেনাসদস্য নেবে। দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সেনাসদস্য নেওয়া শুরু হবে। গতকাল দোহায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। প্রেস সচিব বলেন, ‘কুয়েতে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সেনাসদস্যরা কর্মরত রয়েছেন। একইভাবে কাতারও বাংলাদেশ থেকে নিয়মিতভাবে সেনাসদস্য নিতে চায়। প্রতি তিন বছর পরপর ৭২৫ জন করে সেনাসদস্য নেওয়া হবে, তবে আমরা এই সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
ফিলিস্তিন ও রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্বের উপেক্ষা করা উচিত নয়
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, বর্তমানে সংকটপ্রবণ বিশ্বে যুদ্ধ ও সংঘাত মানুষের অধিকার খর্ব এবং অর্থনীতিকে ব্যাহত করছে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা যে কোনো অর্থবহ ও টেকসই উন্নয়নের মৌলিক পূর্বশর্ত। ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট বিশ্বের উপেক্ষা করা উচিত নয়। আর্থনা সম্মেলনে তিনি বলেন, বিচারহীনতা এবং মানবাধিকারের প্রতি নির্লজ্জ অবজ্ঞা বিশ্বের যে কোনো জায়গায় উন্নয়নের জন্য হুমকি। ফিলিস্তিনে চলমান দুর্দশা কেবল একটি অঞ্চলকে নয়, পুরো মানবতাকে উদ্বিগ্ন করে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এ কারণে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে। সংহতির নিদর্শন হিসেবে সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বৈশ্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের অবশ্যই একত্রিত হতে হবে।
বিদেশি বিনিয়োগ আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় দোহায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতির দিক থেকে প্রচুর সম্ভাবনাময়। বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তরের আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ম জ ক ব যবস স ন সদস য ন ইউন স ব আম দ র র জন য ট কসই
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ, চালক আটক
ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক কলেজছাত্রীকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নবীগঞ্জ-শেরপুর সড়কে রোববার রাতে যাত্রীবাহী বাসে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই ছাত্রীর চিৎকার শুনে স্থানীয় জনতা সড়কের তিনতালাব পুকুর পাড় নামক স্থানে বাসটি আটক করে এবং বাসের ড্রাইভারকে আটক করে সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করে। এসময় বাসের হেলপার পালিয়ে যায়।
পরে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য ওই কলেজ ছাত্রী ও ড্রাইভারকে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
জানা যায়, ঢাকায় একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে ওই ছাত্রী। রোববার সকালে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে একটি বাসে উঠেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি যেতে বানিয়াচং যাওয়ার পথে শায়েস্থাগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে নামার কথা থাকলেও তিনি বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে যান। ফলে বাস তাকে শায়েস্থাগঞ্জে না নামিয়ে শেরপুর বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১০টায় ওই কলেজছাত্রী একটি লোকাল বাসে উঠে। সেই বাসে কয়েকজন যাত্রী ছিল, বাসটি নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি নামক স্থানে পৌঁছালে অন্যান্য যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। এরপর ওই ছাত্রীকে একা পেয়ে বাসের চালক ও হেলপার তাকে বাসে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
এ বিষয়ে ওই ছাত্রী জানায়, তিনি ঢাকায় একটি কলেজে লেখাপড়া করেন। তার পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকে তিনি ঢাকায় ঈদ করেছে। ঈদের ছুটিতে তিনি বাড়ি আসেননি এই জন্য আজকে গ্রামের বাড়িতে আসছিলেন।
বানিয়াচং থানার সেনাক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা কলেজছাত্রী ও বাস চালককে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছি।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি দুলাল মিয়া জানান, ঘটনার পর বাস চালককে আটক করা হয়েছে এবং হেলপার পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে মামলা লেখার কাজ চলছে।