গাজায় ছয় লাখ শিশু স্থায়ী পঙ্গুত্বের ঝুঁকিতে
Published: 23rd, April 2025 GMT
চারদিক ঘিরে মারণাস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ইসরায়েলের সেনারা। তাদের রাইফেল, ট্যাঙ্ক ও মর্টার তাক করা গাজার বাসিন্দাদের দিকে। উপত্যকার ২০ থেকে ২২ লাখ বাসিন্দার বের হওয়ার নেই পথ। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্য। এর মধ্যেই থেকে থেকে চলছে বিমান হামলা। গাজার বাসিন্দারা মারা যাচ্ছেন। আর যারা আহত হচ্ছেন, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই তাদের প্রাণ যাচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে হাসপাতাল, ধর্মালয়– কিছুই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না।
গাজায় ইসরায়েলের অন্তহীন এ নৃশংসতায় সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে শিশুরা। অনাহারে তারা হাড্ডিসার। একসময় যে শিশুটি স্কুলে যেত, যার সুন্দর পরিবার ছিল, মা-বাবা, ভাইবোন ছিলেন; সেই শিশুটি এখন খাবারের খোঁজে রাস্তায় ফিরছে। পায়ে জুতা নেই। অনাদরে উশকোখুশকো চুল। ছেঁড়া জামা। ক্ষুধার তাড়নায় তার শোক প্রকাশের ভাষা নেই।
অবরুদ্ধ গাজায় বাড়ছে রোগের প্রকোপ। ওষুধ নেই। হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলের বোমা। গাজা সিটি থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, আহতরা চিকিৎসার অভাবে হাসপাতালে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সেখানে অন্তত ৬ লাখ শিশু পঙ্গুত্বের ঝুঁকিতে। ওষুধের সরবরাহ বন্ধের কারণে পোলিও টিকা প্রবেশ করতে পারছে না, যা উপত্যকার অর্ধেক শিশুকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, পুষ্টি ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে গাজার শিশুরা নজিরবিহীন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
গত ২ মার্চ গাজায় ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ আটকে দেয় ইসরায়েল। এরপর থেকে ক্রমেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার এক দিনে আরও ২৬ জন নিহত ও ৬০ জন আহত হন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫১ হাজার ২৬৬ জনে পৌঁছেছে। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৯১। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯০ জন নিহত ও ৪ হাজার ৯৫০ জন আহত হয়েছেন।
হামলার পাশাপাশি এখন উপত্যকার বাসিন্দাদের ধরে নিচ্ছে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের প্রিজনার্স সোসাইটি জানায়, গাজা থেকে আটক ৬০ ফিলিস্তিনির নাম প্রকাশ করেছে তারা।
সন্তান জন্মকালে স্ত্রীর পাশে থাকতে পারলেন না খলিল
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের সমর্থনে আন্দোলন করে গ্রেপ্তার হওয়া মাহমুদ খলিল সদ্য বাবা হলেও সন্তানের মুখ এখনও দেখতে পারেননি। সন্তান জন্মদানের সময় তাঁকে জামিন দিতে অস্বীকৃতি জানায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলন করায় আদালতের রায়ে মাহমুদ খলিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। এ অবস্থায় আটক কয়েক ফিলিস্তিন সমর্থক শিক্ষার্থী মার্কিন সিনেটরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
যুদ্ধ বন্ধে নতুন প্রস্তাব মিসর ও কাতারের
গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে মঙ্গলবার বিবিসি জানায়, যুদ্ধ বন্ধ করতে নতুন প্রস্তাব পেশ করেছে কাতার এবং মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা। নতুন এ প্রস্তাবে পাঁচ থেকে সাত বছরের স্থায়ী যুদ্ধবিরতির উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া সেখানে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে সব ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি, যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ও গাজা থেকে সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের দেওয়া সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হামাস খারিজ করে দেওয়ার পর নতুন করে প্রস্তাব পেশ করল মিসর ও কাতার। এ প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা করতে হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন নেতা কায়রোতে যাবেন বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইসরায়েল।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।