চারদিক ঘিরে মারণাস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ইসরায়েলের সেনারা। তাদের রাইফেল, ট্যাঙ্ক ও মর্টার তাক করা গাজার বাসিন্দাদের দিকে। উপত্যকার ২০ থেকে ২২ লাখ বাসিন্দার বের হওয়ার নেই পথ। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্য। এর মধ্যেই থেকে থেকে চলছে বিমান হামলা। গাজার বাসিন্দারা মারা যাচ্ছেন। আর যারা আহত হচ্ছেন, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই তাদের প্রাণ যাচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে হাসপাতাল, ধর্মালয়– কিছুই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না। 

গাজায় ইসরায়েলের অন্তহীন এ নৃশংসতায় সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে শিশুরা। অনাহারে তারা হাড্ডিসার। একসময় যে শিশুটি স্কুলে যেত, যার সুন্দর পরিবার ছিল, মা-বাবা, ভাইবোন ছিলেন; সেই শিশুটি এখন খাবারের খোঁজে রাস্তায় ফিরছে। পায়ে জুতা নেই। অনাদরে উশকোখুশকো চুল। ছেঁড়া জামা। ক্ষুধার তাড়নায় তার শোক প্রকাশের ভাষা নেই। 

অবরুদ্ধ গাজায় বাড়ছে রোগের প্রকোপ। ‍ওষুধ নেই। হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলের বোমা। গাজা সিটি থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, আহতরা চিকিৎসার অভাবে হাসপাতালে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সেখানে অন্তত ৬ লাখ শিশু পঙ্গুত্বের ঝুঁকিতে। ওষুধের সরবরাহ বন্ধের কারণে পোলিও টিকা প্রবেশ করতে পারছে না, যা উপত্যকার অর্ধেক শিশুকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, পুষ্টি ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে গাজার শিশুরা নজিরবিহীন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।

গত ২ মার্চ গাজায় ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ আটকে দেয় ইসরায়েল। এরপর থেকে ক্রমেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার এক দিনে আরও ২৬ জন নিহত ও ৬০ জন আহত হন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫১ হাজার ২৬৬ জনে পৌঁছেছে। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৯১। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯০ জন নিহত ও ৪ হাজার ৯৫০ জন আহত হয়েছেন। 

হামলার পাশাপাশি এখন উপত্যকার বাসিন্দাদের ধরে নিচ্ছে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের প্রিজনার্স সোসাইটি জানায়, গাজা থেকে আটক ৬০ ফিলিস্তিনির নাম প্রকাশ করেছে তারা। 

সন্তান জন্মকালে স্ত্রীর পাশে থাকতে পারলেন না খলিল

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের সমর্থনে আন্দোলন করে গ্রেপ্তার হওয়া মাহমুদ খলিল সদ্য বাবা হলেও সন্তানের মুখ এখনও দেখতে পারেননি। সন্তান জন্মদানের সময় তাঁকে জামিন দিতে অস্বীকৃতি জানায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলন করায় আদালতের রায়ে মাহমুদ খলিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। এ অবস্থায় আটক কয়েক ফিলিস্তিন সমর্থক শিক্ষার্থী মার্কিন সিনেটরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। 

যুদ্ধ বন্ধে নতুন প্রস্তাব মিসর ও কাতারের

গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে মঙ্গলবার বিবিসি জানায়, যুদ্ধ বন্ধ করতে নতুন প্রস্তাব পেশ করেছে কাতার এবং মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা। নতুন এ প্রস্তাবে পাঁচ থেকে সাত বছরের স্থায়ী যুদ্ধবিরতির উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া সেখানে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে সব ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি, যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ও গাজা থেকে সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের দেওয়া সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হামাস খারিজ করে দেওয়ার পর নতুন করে প্রস্তাব পেশ করল মিসর ও কাতার। এ প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা করতে হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন নেতা কায়রোতে যাবেন বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইসরায়েল। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র প রস ত ব

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে  জুলাই সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে: আলী রীয়াজ  

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, কমিশনের বৈঠকে একমত হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কমিশন ‘অনুঘটক’ হিসেবে ভূমিকা রাখবে। প্রয়োজন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য কমিশন আবার বসবে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের শেষ দিনের আলোচনার শুরুতে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ।

রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে  জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘সনদের দুটি অংশ। একটি অংশে ঐকমত্যের বিষয়সমূহ এবং অন্য অংশে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

শিগগিরই সনদ চূড়ান্ত করা যাবে বলে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব দ্রুত চূড়ান্ত সনদ প্রস্তুত করে আপনাদের হাতে তুলে দিতে। এর ভিত্তিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও করা হবে।’

আজকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে—সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগ সম্পর্কিত বিধান, সংসদের উচ্চকক্ষের গঠন, সংসদ সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি ও এখতিয়ার, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি।

রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আপনারা যে সব বিষয়ে একমত হয়েছেন, সেগুলো বাস্তবায়নের পথ আপনারা নিজেরাই তৈরি করতে পারবেন। সেখানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে অনুঘটকের কাজ করবে।’

আলোচনার শুরুতে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার আজ শেষ দিন। আজ যেসব বিষয় আলোচিত হবে, তার অধিকাংশই সিদ্ধান্তের বিষয়। বিশেষ করে যেসব দায়িত্ব আপনাদের পক্ষ থেকে আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আপনাদের জানানো হবে।

আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘কিছু অনালোচিত বিষয়ের আলোচনা হবে। আর সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহা হিসাবরক্ষক এবং ন্যায়পালসহ কিছু বিষয়ে আলোচনার ফ্লোর থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আগেই ছয়টি কমিশনের সুপারিশের সার-সংক্ষেপ রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে একমত হওয়া গেছে। যার একটি তালিকা দলগুলোর হাতে আছে। এ ছাড়া যেসব বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৬ ঘণ্টা আগে

আলী রীয়াজ জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমতের সুযোগ ছিল এবং আছে। আজকের আলোচনায় যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে দলগুলো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে পারবে।

আলী রীয়াজ আশা প্রকাশ করেন, আজকের মধ্যে আলোচনা পর্বের সমাপ্তি টানা সম্ভব হবে। আলোচনা শেষে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি দল।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

আরও পড়ুন১২ মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ২৯ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনপ্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের খসড়া আজকালের মধ্যে পাবে রাজনৈতিক দলগুলো: আলী রীয়াজ২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ