নিরাপত্তা-শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপস নয়
Published: 23rd, April 2025 GMT
রিকশার সঙ্গে মোটর লাগিয়ে স্থানীয় গ্যারেজে তৈরি করা ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন ঢাকার পরিবহনব্যবস্থায় রীতিমতো বিপর্যয়রূপে দেখা দিয়েছে। এ-জাতীয় রিকশা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আগে থেকেই নাজুক অবস্থায় থাকা রাজধানীর ট্রাফিকব্যবস্থা পুরোপুরি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। অবৈজ্ঞানিকভাবে তৈরি হওয়া এ রিকশা দুর্ঘটনারও বড় কারণ। সড়কের শৃঙ্খলা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও জীবিকা—এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে সরকারকে ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাপারে কঠোর ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিকল্প নেই।
প্রায় দুই কোটি মানুষের রাজধানী শহর ঢাকা এমনিতেই বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর। বিগত কোনো সরকারই নাগরিকদের সেবার কথা চিন্তা করে ঢাকায় একটি সুশৃঙ্খল ও নাগরিকবান্ধব গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলেনি। বরং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের হাতে পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে কতিপয় পরিবহন নেতার কাছে নাগরিকেরা জিম্মি হয়ে পড়েন।
একটি আধুনিক নগরে জনসংখ্যার তুলনায় যে পরিমাণ সড়ক থাকা দরকার, সেটা নেই। এরপর আবার এসব সড়কে দ্রুত, মাঝারি, ধীরগতির মিলিয়ে প্রায় ১৮ ধরনের যানবাহন চলাচল করে। নতুন করে ব্যাটারিচালিত রিকশা রাজধানীর সড়কের নৈরাজ্যকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মফস্সল শহর ও গ্রামাঞ্চলে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান জীবিকার একটা বড় অবলম্বন হয়ে উঠেছে। সে তুলনায় ঢাকার শহরে এ-জাতীয় রিকশার দেখা মিলত না বললেই চলে। কিন্তু শুরুতেই কঠোর অবস্থান না নেওয়ায় ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বাড়তে থাকে। গত বছরের মে মাসে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর চালকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তখনকার সরকার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে। এরপর ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় যে শিথিলতা আসে, তার সুযোগে পুরো ঢাকার সড়ক ছেয়ে যেতে থাকে ব্যাটারিচালিত রিকশায়। পরিস্থিতি এখন এমন যে উড়ালসড়কেও রিকশা নিয়ে উঠে পড়ছেন চালকেরা।
ঢাকার সড়কে ঠিক কতসংখ্যক ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে, তার হিসাব কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। কম পরিশ্রমে অপেক্ষাকৃত বেশি উপার্জন করা যায় বলে অনেকেই এ পেশায় ঝুঁকছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যেভাবে কলকারখানা বন্ধ হয়েছে এবং নির্মাণশিল্পসহ অন্য অনেক খাতে কাজের সুযোগ সংকুচিত হওয়ায় অনেকে ঢাকায় এসে জীবিকা হিসেবে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে বেছে নিয়েছেন।
ব্যাটারিচালিত রিকশার মূল সমস্যা এর নিয়ন্ত্রণহীন গতি। ব্রেকিং সিস্টেম-কাঠামো দুর্বল হওয়ায় এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বাহন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরই) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহনের কারণে সারা দেশে ৯০০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫৮২টিই ছিল মারাত্মক। যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য জানাচ্ছে, এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটির সময় মোট যে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে, তার সাড়ে ১৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে হয়েছে।
বর্তমান আর্থসামাজিক বাস্তবতায় হুট করে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা কঠিন। কিন্তু সড়কের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের আপস করার কোনো সুযোগ নেই। গুলশান-বনানীর সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ করতে গেলে গত সোমবার চালকেরা শুধু বিক্ষোভই করেননি, পথচারীদের মারধরও করেছেন, প্যাডেলচালিত রিকশা লেকে ফেলে দিয়েছেন। এ ধরনের নৈরাজ্যকে সরকারকে অবশ্যই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
জীবিকার প্রশ্নটি মাথায় রেখেই এ-জাতীয় রিকশার ব্যাপারে সরকারকে একটা পরিষ্কার সিদ্ধান্তে আসতে হবে। পর্যায়ক্রমে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ হিসেবে মূল সড়কে যাতে এ-জাতীয় অবৈজ্ঞানিক বাহন কোনোভাবে চলতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। তা ছাড়া প্যাডেলচালিত হোক আর ব্যাটারিচালিত হোক—কোন শহরে কত রিকশা চলবে, তা নির্ধারণ করে সব রিকশাকে নিবন্ধনের আওতায় আনাতে হবে। অলিগলিতে যেসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে, সেগুলো যাতে ধাপে ধাপে নিরাপদ করা যায়, তার জন্য বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার নকশা করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ দ র ঘটন র সড়ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
উৎসব ঘুরে প্রেক্ষাগৃহে ‘বাড়ির নাম শাহানা’
কৈশোর পেরোনোর আগেই শাহানাবাড়ির মেয়ে দীপার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর নির্যাতনের জাল ছিঁড়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের পটভূমিতে দীপার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বাড়ির নাম শাহানা।
সত্য কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত বাড়ির নাম শাহানায় দীপা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনান সিদ্দিকা। ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে কমলা কালেক্টিভ ও গুপী বাঘা প্রোডাকশন্স লিমিটেড।
নির্মাণের বাইরে লীসা গাজী লেখক, নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচিত