বাড়ির বসত ঘরের সীমানা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে শফিউল আলম (৬৪) নামের এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার বিকালের দিকে হাটহাজারী উপজেলার ২ নং ধলই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডস্থ তিতাগাজীর বাড়িতে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে নিহত শফিউল আলমের পনের বছর বয়সী সন্তানও।

নিহত শফিউল আলম ওই বাড়ির মৃত সুলতান আহমদের পুত্র। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন শফিউল আলম তার সন্তান রবিউলকে নিয়ে নিজ ঘরের কাজ করছিলেন। বিকালের দিকে একই বাড়ির মো.

সেলিম ও তার পুত্র সজীব উদ্দিন হঠাৎ দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে শফিউল আলমসহ তার সন্তান রবিউলকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। পরে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক শফিউল আলমকে মৃত ঘোষণা করে এবং রবিউল আলমের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে রেফার করেন।

খবর পেয়ে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে মডেল থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চমেক মর্গে প্রেরণ করে।

সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মো. মহিন উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে ওই ওয়ার্ডে ইউপি সদস্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। কখনো উভয়পক্ষের কোনো রকম অভিযোগ পাইনি, শুনিওনি। আজ হঠাৎ কেনো কী কারণে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো বুঝে আসছে না। তারা সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই। নিহতের পরিবার থানায় মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।

হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। অপরাধী যেই হোক দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে পুলিশ অপরাধীদের ধরতে অভিযান শুরু করে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ রিপোর্ট লেখা সময় রাত ৮টা পর্যন্ত ওই এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে বলেও জানা গেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত

এছাড়াও পড়ুন:

লবণশ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে

দেশে প্রায় ৪০ হাজার কৃষক পরিবার এবং ৫৫ হাজার দক্ষ শ্রমিক সরাসরি লবণ উৎপাদনে যুক্ত। আরও ৫ লাখের বেশি শ্রমিক এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে লবণ খাত দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই খাতের কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

‘দেশে লবণ খাতে কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় পরামর্শ সভা’ শিরোনামে সভাটির আয়োজন করে আইজেক প্রকল্প। আইজেক প্রকল্পের পূর্ণ নাম হচ্ছে ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর উইমেন অ্যান্ড ইয়ুথ ইন কক্সবাজার। কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বে ইনোভিশন কনসালটিং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ১৮৫ জন শ্রমিক ও কৃষককে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ৪৪৪ জনকে চিকিৎসাসহায়তা দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে ২টি হাসপাতাল ও ৬টি লবণ কারখানার সঙ্গে আইজেক প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান লবণকে ‘সাদা সোনা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য, অন্তর্ভুক্তিকরণ, ক্ষুদ্রঋণ ও আধুনিক প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে লবণ খাতকে শক্তিশালী করব।’ তিনি লবণশ্রমিকদের শ্রম অধিকার আইনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুনির হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সহায়তা দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে আরও সচেতনতা এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।

সভায় লবণচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা পানিশূন্যতা, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও অনিশ্চিত আয়ে ভুগি। আমাদের নিয়মিত চিকিৎসা ও নিরাপত্তা প্রয়োজন।’

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইনোভিশন কনসালটিংয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী শহীদ হাসান ফেরদৌস। আইএলও কক্সবাজার সাব অফিসের প্রধান রুচিকা বেহল লবণ চাষ ও আইজেক প্রকল্প নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ, বিসিকের লবণ বিভাগের প্রধান সরওয়ার হোসেন, ইনোভিশনের পোর্টফোলিও পরিচালক তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব‍্যবসায় কৌশল ও ইএসজি প্রধান ফিরোজ আলম তালুকদার, এসিআই লিমিটেডের ব‍্যবসায় ব‍্যবস্থাপক জিসান রহমান, প্রিটি কম্পোজিট টেক্সটাইলসের নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মাহবুব কামরান, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আবেদ আহসান সাগর, আইএলওর কারিগরি বিশেষজ্ঞ জনসন, আইএলওর ইআইএস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সাদ গিলানি।  

বক্তারা বলেন, লবণের বিশুদ্ধতা বাড়ানো এবং লবণভিত্তিক শিল্পের আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি। কাঁচা লবণের বিশুদ্ধতা ও আর্দ্রতা সমস্যা দূর করতে কাঠামোগত অদক্ষতার সমাধান প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ