জাহিদুল হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত দুই নারীর অবস্থান জানতে চান আদালত
Published: 23rd, April 2025 GMT
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (পারভেজ) হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত দুই নারীর অবস্থান জানতে চেয়েছেন আদালত। পুলিশ আদালতকে জানিয়েছেন, ওই দুই নারীকে খোাঁজা হচ্ছে।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আজ বুধবার আলোচিত এ হত্যা মামলায় এক আসামির রিমান্ড শুনানির সময় তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এ তথ্য জানতে চান বিচারক।
এ তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি বলেন, আজ জাহিদুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হৃদয় মিয়াজির রিমান্ড শুনানির সময় আসামিপক্ষ থেকে আদালতকে বলা হচ্ছিল, হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত দুই নারীর সঙ্গে হৃদয় মিয়াজির কোনো সম্পর্ক নেই। তখন আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, ওই দুই নারী কোথায়? তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই দুই নারীকে তারা খুঁজছে।
জাহিদুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব হৃদয় মিয়াজিকে (২৩) সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হৃদয় মিয়াজিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। তাতে বলা হয়েছে, জাহিদুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় হৃদয় মিয়াজি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। আসামিপক্ষ থেকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন নাকচ চাওয়া হয়। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত হৃদয় মিয়াজিকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল জাহিদুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিনজনকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত। ওই তিন আসামি হলেন মো.
পুলিশ বলছে, ১৯ এপ্রিল বিকেলে বনানীর প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম ও তাঁর বন্ধু মো. তরিকুল ইসলামের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তার ওপর কয়েকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। পরবর্তী সময়ে হামলায় গুরুতর আহত জাহিদুলকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জাহিদুল ইসলামের ফুফাতো ভাই হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫ থেকে ৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় একটি মামলা করেন।
জাহিদুলের বন্ধু মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ক্যাম্পাসের সামনে জাহিদুল তাঁর দুই বন্ধুকে নিয়ে শিঙাড়া খাচ্ছিলেন। সেখানে আরও দুই নারী শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে ওই দুই নারী শিক্ষার্থীর মনে হয়, জাহিদুল ও তাঁর বন্ধুরা তাঁদের নিয়ে হাসাহাসি করছেন। তাঁরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদুল ও তাঁর বন্ধুরা অস্বীকার করেন। পরে ওই দুই নারী শিক্ষার্থী গিয়ে বহিরাগত তিনজনকে ডেকে আনেন। ওই তিনজন এসে জাহিদুলদের কাছে হাসাহাসির কারণ জানতে চাইলে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নজরে আসে। তাঁরা বিষয়টি মিটমাট করে দেন। একপর্যায়ে বহিরাগত ওই তিন যুবক আরও কয়েকজনকে নিয়ে এসে ফটকের বাইরে অবস্থায় নেন। জাহিদুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক থেকে বের হতেই তারাঁ তাঁকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই দ ই ন র উপস থ ত ল ইসল ম র বন ধ
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।