বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কিনা, তা নিয়ে নানা শঙ্কার খবর আসছে। প্রতি বছর এই শঙ্কা থাকে, লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয় না। এর পেছনে কিছু সাধারণ কারণ থাকলেও এলাকাভেদে এর ভিন্নতা আছে। তবে দিনের শেষে ফলাফল– চাষির দীর্ঘশ্বাস।
দেশে বোরো ধানের ৪৭ শতাংশ উৎপাদন করেন ক্ষুদ্র চাষিরা। ৩৩ শতাংশ চাষি নগদ টাকায় জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করেন, আর ২৬ শতাংশ ভাগচাষি। উৎপাদন খরচ বেশি আর দাম কম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই তিন ধরনের চাষি। তারা মূলত ঋণ করে ও পারিবারিক অর্থ বিনিয়োগ করে ধান চাষ করেন। এর পর উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বেচে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সরকার প্রতি বছর যে চাল সংগ্রহ করে, তাতে মূলত চালকল মালিকরা লাভবান হন।
এসব কারণে প্রতি বছর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তলানিতে থাকে। উপজেলা শহরের খাদ্যগুদামে গিয়ে কৃষকরা ধান বিক্রির ধকল পোহাতে চান না। তাই সরকার নির্ধারিত মূল্যের অনেক কম দামে ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করে দেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রাজ্যভেদে কৃষিপণ্যের সরকারি সংগ্রহের পরিমাণ হচ্ছে মোট উৎপাদনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। উৎপাদন খরচের ওপর তারা ২০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা যোগ করে সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। যদিও কৃষকদের দাবি থাকে ৫০ শতাংশ মুনাফার।
আমাদের দেশে কৃষিকাজে খরচ বেশি, মুনাফা কম। মূল্যস্ফীতির চাপও গ্রামেই বেশি, এতে নাকাল অবস্থায় কৃষক। তাদের চিকিৎসার অভাব, শিক্ষার অভাব। মাঠে তাদের সাপে ছোবল দেয়, বজ্রপাতেও মারা যায়। কিন্তু তার কোনো প্রতিবিধান সচরাচর হয় না। সরকারি সাহায্য-সহায়তার ক্ষেত্রেও তাদের হিস্যা কম। বাংলাদেশের একজন কৃষক বছরে কৃষি উপকরণ ভর্তুকি পায় মাত্র ৯০০ টাকা। চীনে এর পরিমাণ ২০ হাজার টাকা। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও বলিভিয়ায় কৃষকপ্রতি ভর্তুকির পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। এ বঞ্চনার কথা সবার অনুধাবন করা দরকার। বৈষম্যবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা দরকার আমাদের গরিব ও নিরীহ কৃষকদের।
সরকার যদি খাদ্য সংগ্রহের পুরোটা ধান হিসেবে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কিনে নেয়, তাহলে তা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের জন্য ভালো হবে। সরকারি গুদামগুলোতে কৃষক ধান বিক্রি করতে গেলে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ধানের আর্দ্রতা নিয়ে। কৃষকের বড় অংশ সাধারণত ভেজা ধান বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। কিন্তু সরকার ১৪ শতাংশের বেশি আর্দ্রতা থাকলে তা কিনতে চায় না। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে আর্দ্রতা অনুযায়ী ধানের দাম ঠিক করা যেতে পারে।
সরকার চালকলগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ধান সেখানে ভাঙাতে পারে। দেশের বেশির ভাগ বড় চালকলে ধান শুকানোর আধুনিক ব্যবস্থা আছে। ধানের আর্দ্রতা বেশি হলে চালকল মালিক দ্রুত তা সরকারি গুদাম থেকে নিয়ে যাবেন। আর আর্দ্রতা কম থাকলে সরকার তা গুদামে রেখে দিয়ে সুবিধামতো সময়ে ভাঙানোর ব্যবস্থা করবে।
কৃষকের কাছ থেকে ধান সরাসরি কিনতে পারলে সেটা খুবই ভালো কাজ হবে। তাহলে কৃষক দাম পাবেন। কিন্তু তার আগে এত ধান, এত কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কেনার মতো অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রথমেই গুদামগুলোকে উন্নত করতে হবে। ভবিষ্যতে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে অটোরাইস মিলেও বিনিয়োগ করার কথা ভাবতে হবে।
লেখখ : ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দুই মাস ফ্রিজে রাখার পর মামুনের মাথায় খুলি পুনঃস্থাপন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার মাথায় খুলি প্রায় দুই মাস ফ্রিজে সংরক্ষণ করার পর সফলভাবে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) চট্টগ্রাম পার্কভিউ হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে খুলি পুনঃস্থাপন করেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মামুন মিয়ার মাথায় সফলভাবে অপারেশন করা হয়েছে। তিনি এখন সুস্থ আছেন।
গত ৩০ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন মামুন মিয়া।
চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশের পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ টি এম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, চবিতে সংঘর্ষের দিন গুরুতর আহত অবস্থায় মামুন মিয়াকে পার্কভিউ হাসপাতালে আনা হয়েছিল। সেই থেকে তিনি এখানে চিকিৎসাধীন আছেন। অপারেশনের সময় তার মাখার খুলি খুলে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় দুই মাস পর সফল অপারেশনের মাধ্যমে শনিবার মামুনের মাথার খুলি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন।
গত ৩০ আগস্ট তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়। এতে মামুনসহ চবির অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হন। মাথায় মারাত্মক আঘাতের কারণে মামুনের মাথার খুলি খুলে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
ঢাকা/রেজাউল/রফিক