আজ ২৪ এপ্রিল। ১৯৫০ সালের এই দিনে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে আরও ছয় রাজবন্দীর সঙ্গে গুলিতে শহীদ হন কমরেড কম্পরাম সিংহ। তখন তাঁর বয়স ছিল ৬৩ বছর। তাঁর বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর পাড়িয়া শালডাঙ্গা গ্রামে। সেই গ্রামে এখনো রয়েছে তাঁর বাড়ি। যে ঘরে ঘুমাতেন, সেই ঘর এখনো আছে। ছোট্ট মাটির ঘর। বাড়িতে ধানের যে গোলা ছিল, এখনো আছে। দুই বছর আগে বাড়ির পাশে তাঁর নামে একটি স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। সব দেখে মনে হলো, কমরেড কম্পরাম সিংহ এখনো আছেন। তাঁর শোবার ঘর, ধানের গোলা, স্মৃতি কমপ্লেক্স সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে।

১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ের লাহিড়ী হাটে জমিদারদের স্বেচ্ছাচারমূলক তোলা আদায়ের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের নেতা ছিলেন কম্পরাম সিংহ, যেটি পরিচিত ছিল তোলাবাটি আন্দোলন নামে। সেবার গ্রেপ্তার হয়ে তিন মাস কারাবন্দী ছিলেন। তোলাবাটি আন্দোলন শেষ না হতেই সমগ্র উত্তরবঙ্গে বর্গাচাষিদের তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়। কম্পরাম সিংহ সেই আন্দোলনে অংশ নেন। এ সময় তাঁর ওপর সরকারি হুলিয়া থাকায় দুই বছর আত্মগোপনে থাকেন। ১৯৪৯-এ তিনি শেষবারের মতো গ্রেপ্তার হন এবং কৃষক নেতা-কর্মীর সঙ্গে রাজবন্দী হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে অন্তরিণ হন। এ সময় রাজবন্দীদের ওপর মুসলিম লীগ সরকারের অত্যাচার-উৎপীড়নের প্রতিবাদে এবং কারাগারে তাঁদের মানবেতর পরিবেশ থেকে মানবিক পরিবেশে উন্নীত করার দাবিতে রাজবন্দীরা যে আন্দোলন করেন, তিনি তাতে নেতৃত্ব দেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর জীবনের পুরো সঞ্চয় কমিউনিস্ট পার্টিকে দান করে যান।

সেদিন রাজশাহী জেলখানার খাপড়া ওয়ার্ডে রাজবন্দীদের ওপর জেল পুলিশের গুলিতে কম্পরাম সিংহের সঙ্গে আরও শহীদ হন হানিফ শেখ, আনোয়ার হোসেন, সুধীন ধর, দিলওয়ার হোসেন, সুখেন্দু ভট্টাচার্য ও বিজন সেন।

তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই ছিলেন সাম্যবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মুক্তিসংগ্রামের সৈনিক। ওই সময় এ ঘটনায় একদিকে যেমন শোষক শ্রেণির অমানবিক হিংস্রতা ও বর্বরতার পরিচয় উন্মোচিত হয়েছিল, তেমনি শোষিত মানুষের মুক্তিসংগ্রামে মহান বীরত্ব, গৌরবময় আত্মত্যাগ ও সর্বোচ্চ মানবিক গুণাবলির প্রকাশ পেয়েছিল।

গত ১৫ মার্চ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় গিয়ে এক কৃষকের কাছ থেকে কম্পরাম সিংহ স্মৃতি কমপ্লেক্সের খবর পাই। গিয়ে দেখি সুন্দর একটা কমপ্লেক্স। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০২৩ সালে এটি নির্মাণ করা হয়।

কম্পরাম সিংহের স্মৃতিবিজড়িত ধানের গোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কমপ ল ক স

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ