খাপড়া ওয়ার্ড দিবস আজ: কম্পরাম সিংহের বাড়িতে একদিন
Published: 24th, April 2025 GMT
আজ ২৪ এপ্রিল। ১৯৫০ সালের এই দিনে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে আরও ছয় রাজবন্দীর সঙ্গে গুলিতে শহীদ হন কমরেড কম্পরাম সিংহ। তখন তাঁর বয়স ছিল ৬৩ বছর। তাঁর বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর পাড়িয়া শালডাঙ্গা গ্রামে। সেই গ্রামে এখনো রয়েছে তাঁর বাড়ি। যে ঘরে ঘুমাতেন, সেই ঘর এখনো আছে। ছোট্ট মাটির ঘর। বাড়িতে ধানের যে গোলা ছিল, এখনো আছে। দুই বছর আগে বাড়ির পাশে তাঁর নামে একটি স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। সব দেখে মনে হলো, কমরেড কম্পরাম সিংহ এখনো আছেন। তাঁর শোবার ঘর, ধানের গোলা, স্মৃতি কমপ্লেক্স সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে।
১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ের লাহিড়ী হাটে জমিদারদের স্বেচ্ছাচারমূলক তোলা আদায়ের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের নেতা ছিলেন কম্পরাম সিংহ, যেটি পরিচিত ছিল তোলাবাটি আন্দোলন নামে। সেবার গ্রেপ্তার হয়ে তিন মাস কারাবন্দী ছিলেন। তোলাবাটি আন্দোলন শেষ না হতেই সমগ্র উত্তরবঙ্গে বর্গাচাষিদের তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়। কম্পরাম সিংহ সেই আন্দোলনে অংশ নেন। এ সময় তাঁর ওপর সরকারি হুলিয়া থাকায় দুই বছর আত্মগোপনে থাকেন। ১৯৪৯-এ তিনি শেষবারের মতো গ্রেপ্তার হন এবং কৃষক নেতা-কর্মীর সঙ্গে রাজবন্দী হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে অন্তরিণ হন। এ সময় রাজবন্দীদের ওপর মুসলিম লীগ সরকারের অত্যাচার-উৎপীড়নের প্রতিবাদে এবং কারাগারে তাঁদের মানবেতর পরিবেশ থেকে মানবিক পরিবেশে উন্নীত করার দাবিতে রাজবন্দীরা যে আন্দোলন করেন, তিনি তাতে নেতৃত্ব দেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর জীবনের পুরো সঞ্চয় কমিউনিস্ট পার্টিকে দান করে যান।
সেদিন রাজশাহী জেলখানার খাপড়া ওয়ার্ডে রাজবন্দীদের ওপর জেল পুলিশের গুলিতে কম্পরাম সিংহের সঙ্গে আরও শহীদ হন হানিফ শেখ, আনোয়ার হোসেন, সুধীন ধর, দিলওয়ার হোসেন, সুখেন্দু ভট্টাচার্য ও বিজন সেন।
তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই ছিলেন সাম্যবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মুক্তিসংগ্রামের সৈনিক। ওই সময় এ ঘটনায় একদিকে যেমন শোষক শ্রেণির অমানবিক হিংস্রতা ও বর্বরতার পরিচয় উন্মোচিত হয়েছিল, তেমনি শোষিত মানুষের মুক্তিসংগ্রামে মহান বীরত্ব, গৌরবময় আত্মত্যাগ ও সর্বোচ্চ মানবিক গুণাবলির প্রকাশ পেয়েছিল।
গত ১৫ মার্চ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় গিয়ে এক কৃষকের কাছ থেকে কম্পরাম সিংহ স্মৃতি কমপ্লেক্সের খবর পাই। গিয়ে দেখি সুন্দর একটা কমপ্লেক্স। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০২৩ সালে এটি নির্মাণ করা হয়।
কম্পরাম সিংহের স্মৃতিবিজড়িত ধানের গোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কমপ ল ক স
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’