ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে মঙ্গলবারের রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। এটি ২০১৯ সালের পর সবচেয়ে মারাত্মক জঙ্গি হামলা। বন্দুকধারীদের ওই হামলায় কমপক্ষে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা মনোরম উপত্যকায় ছুটি কাটাতে আসা বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ হামলা বিরোধপূর্ণ এই অঞ্চলে কঠোর পরিশ্রম করে ফেরানো স্বাভাবিক অবস্থার ওপরেও পরিকল্পিত আক্রমণ। খবর বিবিসির
পহেলগামের ঘটনার জবাব দিতে দিল্লি দ্রুত বেশ কয়েকটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধান সীমান্তক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া, একটা গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু নদের পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করা, কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে তাদের দেশত্যাগের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই হামলার ‘কঠোর জবাব’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধেই নয়, ভারতের মাটিতে ‘ঘৃণ্য কাজের’ নেপথ্যে থাকা ‘মাস্টারমাইন্ডদের’ বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাজনাথ।
সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারত সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। এর আগেও ভারত বিমান হামলাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে সামরিক হামলা ছাড়াও আরও কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে ভারত?
সামরিক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা সম্ভবত একটা দৃঢ় প্রতিক্রিয়া দেখতে পাব। কারণ, ২০১৬ ও ২০১৯ সালের পর থেকে এই জাতীয় ঘটনার ক্ষেত্রে প্রতিশোধমূলক যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা হলো আন্তঃসীমান্ত হামলা বা বিমান হামলা।’
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উরি (জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুলা জেলায় অবস্থিত) হামলায় ১৯ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পর কার্যত লাইন-অফ-কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তানে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করেছিল ভারত।
সেই সময় ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তাদের লক্ষ্যবস্তু হলো পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি।
২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলায় আধাসামরিক বাহিনীর অন্তত ৪০ জনের মৃত্যুর পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটের কথিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর সেবারই প্রথম পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালায় ভারত। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাকিস্তানও বিমান হামলা চালিয়েছিল।
বিবাদ বাড়তে থাকে। এই সময় ভারতীয় একজন পাইলটকে কিছুদিনের জন্য আটক করা হয় পাকিস্তানে। তবে দুই পক্ষই নিজেদের শক্তি দেখালেও তারা পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ এড়িয়ে গেছে।
দুই বছর পর ২০২১ সালে তারা নিয়ন্ত্রণ রেখায় ‘সিজ ফায়ার’ বা পরস্পরের সীমান্তে গুলি বন্ধ করতে সম্মত হয়। ভারতশাসিত কাশ্মীরে বিভিন্ন সময় সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা সত্ত্বেও কিন্তু এই শর্ত মূলত বহাল রয়েছে।
পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, সর্বশেষ হামলায় ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করার মতো ঘটনা এবং এতগুলো মানুষের মৃত্যু; পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়ার জোরালো সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। দিল্লি যদিও পাকিস্তানের জড়িত থাকার মাত্রা নির্ধারণ করতে পারে বা নিছকই ধরে নেয় যে তারা (পাকিস্তান) জড়িত- দুই ক্ষেত্রেই। কিন্তু, এই সম্ভাবনা থাকে।’
ভারতের কাছে বিকল্প কী?
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অ্যাট অ্যালবানি’র ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি মনে করেন, কোনো গোপন অভিযান চালানো হলে, দায় অস্বীকার করার সুযোগ থেকে যায়। কিন্তু সেই পদক্ষেপ মানুষকে দেখানোর যে একটা রাজনৈতিক প্রয়োজন রয়েছে, সেটাকে মেটাতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে দুটো সম্ভাব্য পথ খোলা থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
প্রথমত, ২০২১ সালে নিয়ন্ত্রণ রেখায় যে ‘সিজ ফায়ারে’র জন্য দু’পক্ষ সম্মত হয়েছিল, তা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সীমান্তে আবার গুলি চালানোর জন্য সবুজ সংকেত দিতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, ২০১৯ সালের মতো বিমান হামলা বা এমনকি প্রচলিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও সম্ভাব্য পথ হিসেবে ভারতের সামনে খোলা আছে।
তবে তিনি জানিয়েছেন, এ জাতীয় প্রতিটা প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ কিন্তু পাল্টা প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বহন করে, যেমনটা এর আগেও দেখা গেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির গবেষক ক্ল্যারি বলেন, ‘কোনো পথই ঝুঁকিমুক্ত নয়। যুক্তরাষ্ট্রও বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে এবং সংকট ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করতে তারা ইচ্ছুক বা সক্ষম নাও হতে পারে।’
ভারত-পাকিস্তান সংকটের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, দুই পক্ষই পরমাণু শক্তিধর। এই সত্যিটা দুই দেশের পক্ষ থেকে নেওয়া প্রতিটা সিদ্ধান্তের ওপর দীর্ঘ প্রভাব ফেলে। সেটা শুধু সামরিক কৌশল তৈরির সময় নয়, বরং রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
শ্রীনাথ বলেছেন, পারমাণবিক হাতিয়ার একইসঙ্গে বিপজ্জনক এবং নিয়ন্ত্রক (কাউকে বাধা দেওয়া বা নিয়ন্ত্রণে রাখার দিক থেকে)। এটা দুই পক্ষের নীতিনির্ধারকদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য করে। যে কোনো প্রতিক্রিয়া সুনির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করে হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান পাল্টা জবাব দিতে পারে এবং তারপর সেখান থেকে সরে এসে আবার অন্য পথ অনুসরণ করতে পারে।
এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি ইসরায়েল এবং ইরানের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তার কথায়, ‘ইসরায়েল-ইরানসহ একাধিক ক্ষেত্রে আমরা এই একই ধারা লক্ষ্য করেছি। প্রথমে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং পরে তা প্রশমনের চেষ্টা। কিন্তু, একটা ঝুঁকি সবসময়ই থাকে যে, সবকিছু চিত্রনাট্য অনুযায়ী না-ও এগোতে পারে।
কুগেলম্যান বলছেন, যে পুলওয়ামার ঘটনা থেকে নেওয়া একটা ‘শিক্ষা’ হলো ‘প্রতিটা দেশ সীমিত মাত্রায় পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।’
তার কথায়, ‘ভারতের পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়ার রাজনৈতিক ও কৌশলগত সুবিধাগুলোকে চিন্তা করতে হবে গুরুতর সংকট বা সংঘাতের ঝুঁকির মাথায় রেখে।’
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হক্কানি মনে করেন, ২০১৬ সালের মতো সীমিত পরিসরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর বিষয়ে যদি ভারত বিবেচনা করে তাহলে এবার উত্তেজনা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আনোয়ার গারগাশ ডিপ্লোম্যাটিক একাডেমি ও হাডসন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো হুসেন হক্কানি বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের হামলা চালানোর ক্ষেত্রে সুবিধা হলো এগুলোর পরিধি সীমিত। তাই পাকিস্তানকে এর জবাব দিতে হয় না। কিন্তু ভারতের জনসাধারণ দেখানো যায় যে তারা (ভারত) জবাব দিতে একটা পদক্ষেপ নিয়েছে।’
হুসেন হক্কানি আরও বলেন, তবে এ ধরনের হামলার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। এক্ষেত্রে তারা যুক্তি দিতে পারে যে কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই তাদের (পাকিস্তানকে) দোষারোপ করা হচ্ছে।
এখন বিষয়টা হলো, ভারত যে পথই বেছে নেক এবং পাকিস্তান তার যে জবাবই দিক না কেন, প্রত্যেকটা পদক্ষেপই ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
সাম্প্রতিক আবহে উত্তেজনা বৃদ্ধির হুমকি ঘনিয়ে আসছে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীরের ‘ভঙ্গুর শান্তি’ নাগালের আরও বাইরে চলে যাচ্ছে। একসঙ্গে ভারতকে অবশ্যই নিরাপত্তার ব্যর্থতার বিষয়টাও বিবেচনা করতে হবে, যার কারণে এই হামলা হয়েছে।
শ্রীনাথ বলেছেন, পর্যটন মৌসুমের যখন শীর্ষে, তখন এই জাতীয় হামলা চালানো হয়েছে। এটা একটা গুরুতর ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করে। বিশেষত এমন একটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদক ষ প ন ২০১৯ স ল র জন ত ল র পর
এছাড়াও পড়ুন:
১৪ বছরে বদলে যাওয়া জোভান
পরনে জিন্স, গায়ে শার্ট, পায়ে স্নিকার্স। শার্টটি বেশ পুরোনো ডিজাইনের। চুলগুলো এলোমেল। পাতলা গড়নের জোভানের চোখে-মুখে লেগে আছে উচ্ছ্বাস। ফেসবুকে পোস্ট করা দুটো ছবির একটিতে এমন লুকে দেখা যায়। অন্যটি সমকালীন। কোনো একটি নাটকের দৃশ্যের। যাতে আরো বেশি ফিটফাট ও পরিণত জোভানকে দেখা যায়।
অভিনেতা জোভান আহমেদ ছবি দুটো কয়েক দিন আগে নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। ক্যাপশনে লেখেন, “তুমি কুৎসিত নও, তুমি গরীব।” পাশাপাশি উল্লেখ করেন প্রথম ছবিটি ২০১০ সালে তোলা, অন্যটি ২০২৪ সালে। অর্থাৎ মাঝে কেটে গেছে ১৪ বছর। এই ১৪ বছরে পৃথিবী যেমন বদলেছে, তেমনি জোভানের শারীরিক-মানসিক ও অর্থনৈতিক অবস্থারও দারুণ পরিবর্তন হয়েছে। অভিনেতা হিসেবেও নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন।
যার ফলে, জোভানের ছবি দেখে তার ভক্ত-অনুরাগীরাও নস্টালজিয়া হয়ে পড়েছেন। তাদের নানা মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন এই অভিনেতা। ফয়সাল দীপ লেখেন, “তখন সেলাই করা শার্ট খুব জনপ্রিয় ছিল! বড় কলার!” জবাবে জোভান লেখেন, “এটা আমার বানানো শার্ট ছিল।” ইমন লেখেন, “আপনার এই জার্নিতে আমরা পাশে ছিলাম, আছি, থাকব সবসময়ই। আপনার জন্য দোয়া ও ভালোবাসা। আপনি আমার প্রিয় অভিনেতা।” এমন অসংখ্য মন্তব্য শোভা পাচ্ছে কমেন্ট বক্সে।
আরো পড়ুন:
চার বিজয়ীকে ‘প্রিয়জন’র সংবর্ধনা
মামলার গ্যাঁড়াকলে ইরেশ যাকের, শোবিজ তারকাদের ক্ষোভ
২০১১ সালে একটি টিভি বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন জোভান আহমেদ। তার দুই বছর পর আতিক জামানের ‘ইউনিভার্সিটি’ সিরিজে অভিনয় করেন। শাওন গানওয়ালা নাটকে তার ইচ্ছে মানুষ মিউজিক ভিডিওটি ২০১৬ সালে ইউটিউবে পঞ্চম সর্বাধিক দেখা বাংলাদেশি গান।
বাংলালিংকের বিজ্ঞাপন ‘আমি ঘুরি সারা বাংলাদেশ’-এর মাধ্যমে প্রথম আলোচনায় আসেন ফারহান আহমেদ জোভান। এরপর অসংখ্য জনপ্রিয় টিভি নাটক উপহার দিয়েছেন এই অভিনেতা। ২০১৬ সালে ‘অস্তিত্ব’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এটি তার অভিষেক সিনেমা। ২০১৯ সালে ‘মরীচিকা’, ২০২১ সালে ‘পালাই পালাই’ শিরোনামে ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেন জোভান।
ঢাকা/শান্ত