ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মঙ্গলবার যে রক্তপাত ঘটল, সেটি ২০১৯ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে সংঘটিত সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা। হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন।

হামলায় হতাহতের শিকার ব্যক্তিরা সেনাসদস্য বা সরকারি কর্মকর্তা নন। ভারতের অন্যতম সুন্দর নৈসর্গিক দৃশ্যের একটি স্থানে অবকাশ কাটাতে পর্যটক হিসেবে যাওয়া বেসামরিক ব্যক্তি তাঁরা। সেই দিক থেকে এ হামলা নিষ্ঠুর ও প্রতীকী উভয়ই। এটি শুধু মানুষের জীবন লক্ষ্য করেই চালানো হয়নি; বিতর্কিত অঞ্চলটিতে ভারত যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করার ভঙ্গুর ধারণা তুলে ধরার চেষ্টা করছে, তার ওপরও একটি পরিকল্পিত আক্রমণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মীরের ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাস বিবেচনা করলে দেখা যাবে, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই এর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে। তবে উভয়ে আলাদাভাবে কাশ্মীরের দুই অংশ শাসন করে। সর্বশেষ হামলায় ভারতের জবাব কেমন হবে, তা নির্ভর করবে অনেকটাই অভ্যন্তরীণ চাপের ওপরে।

এরই মধ্যে দিল্লি ত্বরিতগতিতে প্রতিশোধমূলক একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আছে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ পানি ভাগাভাগির চুক্তি স্থগিত করা ও কূটনীতিকদের বহিষ্কার।

আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য। তিনি শুধু অপরাধীদের বিরুদ্ধে নয়; ভারতীয় মাটিতে ‘জঘন্য কর্মকাণ্ডের’ পেছনে থাকা মূল পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধেও ‘কঠোর ব্যবস্থা’নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য। তিনি শুধু অপরাধীদের বিরুদ্ধে নয়; ভারতীয় মাটিতে ‘জঘন্য কর্মকাণ্ডের’ পেছনে থাকা মূল পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধেও ‘কঠোর ব্যবস্থা’নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারত সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাবে কি না, সেটি প্রশ্ন নয়; বরং প্রশ্ন হলো, কবে ও কীভাবে এটি হবে এবং এর মূল্য কতটা হতে পারে।

আরও পড়ুনকাশ্মীরে ৩ সন্দেহভাজন হামলাকারীর স্কেচ প্রকাশ করেছে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থা২০ ঘণ্টা আগে

সামরিকবিষয়ক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা সম্ভবত একটা জোরাল প্রতিক্রিয়া দেখতে চলেছি। এটি অভ্যন্তরীণ দর্শক ও পাকিস্তানের ‘খেলোয়াড়’—উভয়ের জন্য একটা ইঙ্গিত দেয়। ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর দুই দেশের মধ্যে প্রতিশোধ গ্রহণের ধরন হয়ে উঠেছে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করা বা বিমান হামলা চালানো।’

‘(ভারত) সরকারের তরফে এখন এর নিচে পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হবে। পাকিস্তান সম্ভবত আগের মতোই প্রতিক্রিয়া জানাবে। ঝুঁকির বিষয় হলো, সর্বদাই উভয় পক্ষের ভুল হিসাব-নিকাশ,’ বলেন রাঘবন।

আমরা সম্ভবত একটি জোরাল প্রতিক্রিয়া দেখতে চলেছি। এটি অভ্যন্তরীণ দর্শক ও পাকিস্তানের ‘খেলোয়াড়’—উভয়ের জন্য একটা ইঙ্গিত দেয়। ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর দুই দেশের মধ্যে প্রতিশোধ গ্রহণের ধরন হয়ে উঠেছে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করা বা বিমান হামলা চালানো।শ্রীনাথ রাঘবন, সামরিকবিষয়ক ইতিহাসবিদ

এর আগে ২০১৬ ও ২০১৯ সালে ভারতের নেওয়া দুটি বড় প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের প্রতি ইঙ্গিত করেন এই ঐতিহাসিক।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উরি হামলায় ১৯ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর নয়াদিল্লি ‘নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি)’ নামে পরিচিত কার্যত সীমান্তে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামে আক্রমণ চালায়। ভারতের দাবি, তারা এ অভিযানে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ‘সন্ত্রাসীদের’ ঘাঁটি নিশানা করেছে।

আরও পড়ুনকাশ্মীর: যে হামলা অনেক কিছু বদলে দিতে পারে২০ ঘণ্টা আগে

আবার ২০১৯ সালে, পুলওয়ামায় হামলায় আধা সামরিক বাহিনীর অন্তত ৪০ সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারত বালাকোটে কথিত সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের এতটা ভেতরে এমন হামলার ঘটনা এটাই প্রথম। পাল্টা বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানও। পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ভারতীয় এক বিমানচালককে কিছু সময়ের জন্য আটক করে পাকিস্তান। দুই পক্ষই শক্তির মহড়া দেখায়, কিন্তু পুরোদমে যুদ্ধ এড়িয়ে যায়।

এ ঘটনার দুই বছর পর ২০২১ সালে নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয় ভারত ও পাকিস্তান। এরপর ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একাধিকবার সশস্ত্র হামলা হলেও যুদ্ধবিরতি অনেকটাই টিকে ছিল।

২০১৯ সালে, পুলওয়ামায় আধা সামরিক বাহিনীর অন্তত ৪০ সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারত বালাকোটে কথিত সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের এতটা ভেতরে এমন হামলার ঘটনা এটাই প্রথম। পাল্টা বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানও। তখন দুই পক্ষই শক্তির মহড়া দেখায়, কিন্তু পুরোদমে যুদ্ধ শুরু এড়িয়ে যায়।

পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, সাম্প্রতিকতম এ হামলায় ভারতীয় বেসামরিক লোকজনকে নিশানা করায় ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ‘নয়াদিল্লি যদি এর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা থাকাকে ধরে নেয় বা অনুমান করে, তবে ভারতের তরফে সামরিক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।’

কুগেলম্যান বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতের জন্য এমন প্রতিক্রিয়া দেখানোর সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হবে রাজনৈতিক। কেননা, ওই হামলার কঠোর জবাব দিতে ভারতের ওপর জনগণের বড় ধরনের চাপ আসবে।’

বিশ্লেষক কুগেলম্যান আরও বলেন, ‘প্রতিক্রিয়া দেখানোর আরেকটি সুবিধা, ভারত যদি সফলভাবে “সন্ত্রাসীদের” নিশানা বানাতে পারে, তবে তা তার প্রতিরোধক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে ও ভারতবিরোধী হুমকি হ্রাস করবে। আর অসুবিধা হলো, প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ গুরুতর সংকট এবং এমনকি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।’

আরও পড়ুনকাশ্মীরে হামলাকারীদের খুঁজতে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর জোরালো অভিযান২৩ এপ্রিল ২০২৫ভারতের সামনে বিকল্প কী

গোপন অভিযানে দায় অস্বীকার করার সুযোগ থাকে। তবে তা প্রতিরোধ–সক্ষমতা দৃশ্যমানভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা, সেটি মেটাতে পারে না। এমনটাই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি। তিনি বলেন, ভারতের সামনে দুটি সম্ভাব্য পথ রয়েছে।

সাম্প্রতিকতম এ হামলায় ভারতীয় বেসামরিক লোকজনকে নিশানা করায় ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ‘নয়াদিল্লি যদি এর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা থাকাকে ধরে নেয় বা অনুমান করে, তবে ভারতের তরফে সামরিক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে’।মাইকেল কুগেলম্যান, পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক

প্রথমত, ২০২১ সালে নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রতিষ্ঠিত যুদ্ধবিরতি ফিকে হয়ে এসেছে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আন্তসীমান্তে গোলাগুলি শুরু করার সবুজসংকেত দিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, ২০১৯ সালের মতো বিমান হামলা বা প্রচলিত ক্রুজ মিসাইল দিয়ে আক্রমণ চালানোর বিষয়ও আলোচনার টেবিলে আছে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই পাল্টাপাল্টি আক্রমণের ঝুঁকি থাকবে।

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ভারতে পাকিস্তানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন বিজেপির কর্মীরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০১৯ স ল র স ল র পর পদক ষ প র জন য ব ষয়ক

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’

জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিরোধী তালিকায় থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত এবং একই অভিযোগে ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার বা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার 

ববির ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় থাকা ইবির ১৯ জন শিক্ষক, ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ‘শাস্তি নির্ধারণ কমিটি’ করবেন উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।

এদিকে একই অপরাধে জড়িত থাকায় ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। যাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে, সেই শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিল করা হবে। আর যারা অধ্যয়নরত, তাদের বহিষ্কার করা হবে।

এর আগে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় অবতীর্ণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণে গত ১৫ মার্চ আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন। 

এই কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও এবং পত্রিকার খবর পর্যালোচনা করে তালিকায় থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নিবর্তনমূলক কার্যকলাপের সংশ্লিষ্টতা পায়।

কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সাময়িক বরখাস্তের তালিকায় থাকা শিক্ষকরা হলেন: ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ ও অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন ও অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম আক্তারুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মিয়া রাশিদুজ্জামান।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিনসহ আরো রয়েছেন, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল ও অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন।

সাসপেন্ড হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকায় রয়েছেন প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন খান ও আব্দুল হান্নান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, একই দফতরের উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সেলিম, প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ড. ইব্রাহীম হোসেন সোনা। 

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শাখা কর্মকর্তা উকীল উদ্দিনসহ তালিকায় নাম রয়েছে ফার্মেসি বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), আইসিটি সেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জে এম ইলিয়াস, অর্থ ও হিসাব বিভাগের শাখা কর্মকর্তা তোফাজ্জেল হোসেন, তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার (ফটোগ্রাফি) শেখ আবু সিদ্দিক রোকন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার মাসুদুর রহমানের।

বহিষ্কার ও সদন বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের বিপুল খান, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের মেহেদী হাসান হাফিজ ও শাহীন আলম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের রতন রায়। 

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের মুন্সি কামরুল হাসান অনিকসহ তালিকায় রয়েছেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের হুসাইন মজুমদার, বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের তরিকুল ইসলাম।

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের মৃদুল রাব্বী, ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের ফজলে রাব্বী, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শাকিল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিমুল খান, আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের কামাল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মাসুদ রানা, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মেজবাহুল ইসলাম বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের তালিকায় রয়েছেন। 

সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের অনিক কুমার, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আব্দুল আলিম, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বিজন রায়, শেখ সোহাগ ও শাওনও এই শাস্তি পেয়েছেন। 

জুলাই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করায় শাস্তি পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের তানভীর ও শেখ সাদি, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মাজহারুল ইসলাম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মনিরুল ইসলাম আসিফ, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মারুফ ইসলাম, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের পিয়াস, বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ফারহান লাবিব ধ্রুব, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের প্রাঞ্জল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের নাবিল আহমেদ ইমন।

ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের রাফিদ, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আদনান আলি পাটোয়ারি, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের লিয়াফত ইসলাম রাকিব এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ইমামুল মুক্তাকী শিমুলও শাস্তির তালিকায় রয়েছেন। 

এদিকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রকাশ্যে বিরোধিতাকারী হিসেবে এই ৬৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও তাদের উস্কানিদাতা এবং পেছন থেকে আন্দোলন দমনকারী অনেকেই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই অভিযোগ অভিযুক্তদেরও। তবে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা/তানিম/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন
  • জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’
  • এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত