দিনে সুনসান নীরবতা। রাত নামতেই শুরু মাটি ও বালু কাটা। চলে সারা রাত। এতে হুমকিতে পড়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর বাঁধ। পাশাপাশি হুমকিতে পড়েছে গ্রামীণ সড়ক এবং হাসিমপুর, দয়রামপুর, মহেন্দ্রপুরসহ আশপাশের কয়েক হাজার বিঘা জমি। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক চলাচল।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, অবৈধভাবে মাটি ও বালু কাটার অপরাধে ১৯ এপ্রিল এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবু রাতের আঁধারে মাটি–বালু কাটছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি কামরুল খাঁ (৫৭) ও তাঁর সমর্থকেরা। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, হাসিমপুর বাজারসংলগ্ন পদ্মা নদীর তীর। সেখানে প্রায় ৫০০ মিটার পাকা বেড়িবাঁধ ও ইকোপার্ক। বাঁধ থেকে প্রায় ১০ মিটার দূরে পূর্ব পাশ থেকে কাটা হয়েছে মাটি ও বালু। সেখানে পড়ে আছে তিনটি মাটিকাটার যন্ত্র (ভেকু)। তবে কোনো লোকজন নেই। রাত হলেই শুরু হয় অবৈধভাবে মাটি ও বালু কাটা বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় ব্যক্তি জানালেন, ২০ বছর আগে সরকারিভাবে পদ্মা নদীর তীরে প্রায় ৫০০ মিটার হাসিমপুর বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এখানে কোনো দিন মাটি–বালু কাটার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এবারই প্রথম বিএনপি নেতা কামরুল খাঁ প্রভাব খাটিয়ে মাটি ও বালু কাটছেন। সেদিন জরিমানার পর থেকে দিনে কাজ বন্ধ থাকে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে সারা রাত চলে কাটাকাটি। প্রতি রাতে শতাধিক গাড়ি মাটি ও বালু নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।

মাটি ও বালু কাটার বিষয় স্বীকার করেছেন জগন্নাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি কামরুল খাঁ। তবে পুকুর খনন করার জন্য বৈধভাবে নিজস্ব জমি থেকে মাটি ও বালু কাটা হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, সেদিন ভুল করে এসি ল্যান্ড এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। দিনের বেলা গাড়ি চললে সড়কে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়। সে জন্য রাতে কাটা হচ্ছে। প্রায় এক মাস ধরে চলছে পুকুর খননের কাজ। প্রতি রাতে তিনটি ভেকু দিয়ে মাটি ও বালু কেটে ৪০টি গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি গাড়ি মাটি ও বালু ৩০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।

তবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, প্রতি গাড়ি মাটি ও বালু বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫০ টাকা করে এবং ভেকু ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৩০ টাকা করে।

হাসিমপুর বাঁধ এলাকায় অবৈধভাবে মাটি ও বালু কাটার অপরাধে ১৯ এপ্রিল এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, নিজস্ব মালিকানা হলেও অনুমতি ছাড়া মাটি ও বালু কাটার কোনো সুযোগ নেই। রাতে কাটার বিষয়টি শুনেছেন। দ্রুতই অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন ব এনপ ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।

জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ 

এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ