টাঙ্গাইল দেলদুয়ার উপজেলায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক মৎস্য চাষী খুন হয়েছেন। আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে দেলদুয়ার উপজেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ডুবাইল এলাকায় অটো রিকশার গতিরোধ করে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

তবে পুলিশ বলছে, ছিনতাইকারীরা তাকে ছরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। কিন্তু পরিবার বলছে, পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

নিহত মৎস্য চাষীর নাম সাইফুল আলম। তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সাকরাইল পশ্চিমপাড়ার সাব্বির আহমেদের ছেলে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অটোরিকশা চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, সাইফুল ভাই সাকরাইল বাজারে স্টেশনারী দোকান করেন এবং পুকুর লিজ নিয়ে মাছের চাষ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে আমাকে বলেন, রাত ৩টার দিকে আমার অটোযোগে হ্যাচারি থেকে মাছের পোনা আনার জন্য মির্জাপুরে যাবেন। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে স্থানীয় জেলে মদন রাজবংশীকে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা হই। রাত সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ডুবাইল নামকস্থানে আসলে তিনটি মোটরসাইকেল আমাদের গতিরোধ করে। আমাদের দিকে অস্ত্র ধরে টাকা-পয়সা যা আছে দিতে বলে। সাইফুল ভাই টাকা দেওয়ার জন্য বের করতেছে, এমন সময় একজন তার পেটে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তার কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও আমাদের তিনজনের মোবাইল ফোন নিয়ে তারা চলে যায়।

চালক শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, এদিকে সাইফুলের পেট থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আমরা কি করব বুঝতে পারছিলাম না। পরে আমার কাছে থাকা গামছা দিয়ে তার পেট বেঁধে দেই। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাকে দ্রুত টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৫টার সময় তার মৃত্যু হয়। 

নিহতের বড় ভাই শফিউল আজম উৎপল বলেন, আমার ভাই পুকুর লিজ নিয়ে ব্যবসা করতো। তার কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল কিনা আমাদের জানা নেই। ছিনতাই করার সময় সে তো টাকা দিয়েই দিছে। তাহলে কেন তাকে ছুরিকাঘাত করা হবে। বিষয়টা আমাদের কাছে সন্দেহ মনে হচ্ছে। তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেব খান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ছুরিকাঘাতের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওসি বলেন, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই শফিউল আজম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ক ঘ ত কর আম দ র ছ নত ই

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ