সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেমের বিষয়ে দুদককে তদন্তের অনুরোধ করেছি: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
Published: 25th, April 2025 GMT
নিজের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু এখন তিনি (মোয়াজ্জেম) মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নন, সুতরাং মন্ত্রণালয় পর্যায়ে এটা তদন্ত করার সুযোগ নেই। তিনি একজন স্বাধীন ব্যক্তিসত্তা। সেই জায়গা থেকে আমরা দুদককে অনুরোধ করেছি যে আপনারা এটা তদন্ত করুন।’
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর হেয়ার রোডে নিজের সরকারি বাসভবনে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। এই সাক্ষাৎকারে আসিফ মাহমুদ সংস্কার, নির্বাচন, রাজনীতি, নিজের মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। পুরো সাক্ষাৎকারটি প্রথম আলোর আগামীকাল শনিবারের ছাপা পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশ করা হবে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদের। অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন তিনি। ১৪ আগস্ট একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিজের এপিএস হিসেবে নিয়োগ দেন আসিফ মাহমুদ। ২১ এপ্রিল মোয়াজ্জেমকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানানো হয়। অবশ্য পরদিন সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পদত্যাগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে ও পরে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ।
আজ আসিফ মাহমুদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রথম প্রজ্ঞাপনে লেখা হয়েছিল যে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পরে শোনা গেল, তিনি পদত্যাগ করেছেন। আসলে বিষয়টি কী?
এই প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংশোধিত প্রজ্ঞাপন এসেছে। পদত্যাগপত্রের কপিটাও হয়তো আপনারা পেয়েছেন। ২৫ মার্চ সম্ভবত পদত্যাগপত্রটা আমাদের মন্ত্রণালয়ে জমা হয়। ঈদের ছুটির পরে পদত্যাগের আবেদনটা গ্রহণ করি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে অব্যাহতির কথাটা লেখা ছিল। সংশোধিত প্রজ্ঞাপন ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা আছে যে পদত্যাগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অব্যাহতি। এখানে একটা “মিসকমিউনিকেশন” হয়েছিল। মোয়াজ্জেমের যখন নিয়োগ হয়, তখনই তিনি আমাকে বলেছিলেন স্থায়ী চাকরির সুযোগ এলে তিনি এই চাকরি (এপিএস) ছেড়ে দেবেন। তাঁর ব্যাংকে চাকরির ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) এগিয়ে আসছে। বিসিএসেরও লিখিত পরীক্ষা সামনে। সেই জায়গা থেকে মোয়াজ্জেম পদত্যাগের আবেদন করেন এবং আমি তা গ্রহণ করি।’
দুদককে অনুরোধ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে তদবির, বদলি–বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আসছে। আপনি কি মনে করেন, এর একটা স্বাধীন তদন্ত হওয়া উচিত? প্রথম আলোর এই প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, ‘তদন্ত হওয়া উচিত এবং তদন্তের জন্য ইতিমধ্যেই আমরা দুদককে (দুর্নীতি দমন কমিশন) বলেছি। যেহেতু এখন তিনি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নন, সুতরাং মন্ত্রণালয় পর্যায়ে এটা তদন্ত করার সুযোগ নেই। তিনি একজন স্বাধীন ব্যক্তিসত্তা। সেই জায়গা থেকে আমরা দুদককে অনুরোধ করেছি যে আপনারা এটা তদন্ত করুন।’
তাঁর মন্ত্রণালয় থেকেও মোয়াজ্জেমের বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছে অভিযোগ চাওয়া হয়েছিল বলে জানান আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘তবে বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ আসলে আমরা পাইনি।.
২১ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবীকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল তদন ত কর উপদ ষ ট দ দকক
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।