নিজের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু এখন তিনি (মোয়াজ্জেম) মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নন, সুতরাং মন্ত্রণালয় পর্যায়ে এটা তদন্ত করার সুযোগ নেই। তিনি একজন স্বাধীন ব্যক্তিসত্তা। সেই জায়গা থেকে আমরা দুদককে অনুরোধ করেছি যে আপনারা এটা তদন্ত করুন।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর হেয়ার রোডে নিজের সরকারি বাসভবনে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। এই সাক্ষাৎকারে আসিফ মাহমুদ সংস্কার, নির্বাচন, রাজনীতি, নিজের মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। পুরো সাক্ষাৎকারটি প্রথম আলোর আগামীকাল শনিবারের ছাপা পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশ করা হবে।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদের। অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন তিনি। ১৪ আগস্ট একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিজের এপিএস হিসেবে নিয়োগ দেন আসিফ মাহমুদ। ২১ এপ্রিল মোয়াজ্জেমকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানানো হয়। অবশ্য পরদিন সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পদত্যাগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে ও পরে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ।

আজ আসিফ মাহমুদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রথম প্রজ্ঞাপনে লেখা হয়েছিল যে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পরে শোনা গেল, তিনি পদত্যাগ করেছেন। আসলে বিষয়টি কী?

এই প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংশোধিত প্রজ্ঞাপন এসেছে। পদত্যাগপত্রের কপিটাও হয়তো আপনারা পেয়েছেন। ২৫ মার্চ সম্ভবত পদত্যাগপত্রটা আমাদের মন্ত্রণালয়ে জমা হয়। ঈদের ছুটির পরে পদত্যাগের আবেদনটা গ্রহণ করি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে অব্যাহতির কথাটা লেখা ছিল। সংশোধিত প্রজ্ঞাপন ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা আছে যে পদত্যাগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অব্যাহতি। এখানে একটা “মিসকমিউনিকেশন” হয়েছিল। মোয়াজ্জেমের যখন নিয়োগ হয়, তখনই তিনি আমাকে বলেছিলেন স্থায়ী চাকরির সুযোগ এলে তিনি এই চাকরি (এপিএস) ছেড়ে দেবেন। তাঁর ব্যাংকে চাকরির ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) এগিয়ে আসছে। বিসিএসেরও লিখিত পরীক্ষা সামনে। সেই জায়গা থেকে মোয়াজ্জেম পদত্যাগের আবেদন করেন এবং আমি তা গ্রহণ করি।’

দুদককে অনুরোধ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে তদবির, বদলি–বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আসছে। আপনি কি মনে করেন, এর একটা স্বাধীন তদন্ত হওয়া উচিত? প্রথম আলোর এই প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, ‘তদন্ত হওয়া উচিত এবং তদন্তের জন্য ইতিমধ্যেই আমরা দুদককে (দুর্নীতি দমন কমিশন) বলেছি। যেহেতু এখন তিনি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নন, সুতরাং মন্ত্রণালয় পর্যায়ে এটা তদন্ত করার সুযোগ নেই। তিনি একজন স্বাধীন ব্যক্তিসত্তা। সেই জায়গা থেকে আমরা দুদককে অনুরোধ করেছি যে আপনারা এটা তদন্ত করুন।’

তাঁর মন্ত্রণালয় থেকেও মোয়াজ্জেমের বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছে অভিযোগ চাওয়া হয়েছিল বলে জানান আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘তবে বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ আসলে আমরা পাইনি।.

..দুদক স্বাধীন সংস্থা। আমরা অনুরোধ করেছি, তারা এটা তদন্ত করুক। শুধু এটা নয়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার একান্ত সচিবের ব্যাপারেও আমরা তদন্ত করতে বলেছি।’

২১ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবীকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল তদন ত কর উপদ ষ ট দ দকক

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা

আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’

স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।

ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’

আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ