তাঁর শারীরিক উপস্থিতি ছিল না অনুষ্ঠানে। তবে তাঁর উপস্থিতি ছিল আরও ব্যাপক বিপুল বিস্তারে। ‘নতুন করে পাব বলে’ নামে অনুষ্ঠান হলো তাঁকে স্মরণ করে, তাঁরই হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ছায়ানট মিলনায়তনে। তিনি সন্‌জীদা খাতুন। বাংলাদেশের সংস্কৃতির অন্যতম বিনির্মাতা, সংগীতজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, সংগঠক সন্‌জীদা খাতুনকে স্মরণ করে যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ছায়ানট, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, নালন্দা উচ্চবিদ্যালয়, কণ্ঠশীলন ও ব্রতচারী।

গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে’ সম্মেলক কণ্ঠে গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্যের পরিবেশনা দিয়ে। মঞ্চ সাজানো হয়েছিল অনাড়ম্বর, কিন্তু শুচিস্নিগ্ধ সজ্জায়। সবুজ গাছ আর ফুল দিয়ে। মঞ্চের নেপথ্যে বড় ডিজিটাল পর্দায় একের পর এক হচ্ছিল পরিস্ফুটিত সন্‌জীদা খাতুনের তারুণ্যের কাল থেকে বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবির পর ছবি।

সংগীতজ্ঞের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে গান তো থাকবেই। সেই সঙ্গে আরও ছিল তাঁর না থাকার শূন্যতার বোধ, তিনি যে চেতনার আলো জ্বালিয়ে গেলেন, তা প্রাণে প্রাণে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়। তাঁর জীবনী আলোচনা, তাঁর নিজের লেখা থেকে পাঠ, তাঁর নিজের গাওয়া গান, স্মৃতিচারণা, কবিতা আবৃত্তি, গীতি-আলেখ্যর সমন্বয়ে সাজানো টানা তিন ঘণ্টার অনুপম পরিবেশনা। সন্‌জীদা খাতুন তাঁর জীবিতকালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানগুলো বরাবরই ত্রুটিহীন ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার রীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা থাকল তাঁর অনুপস্থিতিতেও। অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা থেকে পরিবেশনা অবধি, যাঁরাই যে কাজে ছিলেন সবাই যেন নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন এই অনুষ্ঠানে।

প্রথম পরিবেশনার পর ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা.

সারওয়ার আলী বললেন, ‘আমরা যেন এক মহিরুহের ছায়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি। সংস্কৃতির মধ্যমে সর্বজনের মধ্যে বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণের অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তিনি। সেই কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।’ সব বাধা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে সন্‌জীদা খাতুনের দেখিয়ে যাওয়া পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানালেন তিনি।

এরপর সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হলো ‘পান্থ তুমি পান্থ জনের সখা হে’। সন্‌জীদা খাতুনের জীবনী তুলে ধরেন জয়ন্ত রায়। এরপর মঞ্চ আঁধার করে নেপথ্যে সন্‌জীদা খাতুনের ছবি রেখে পরিবেশন করা হলো তাঁর রেকর্ড করা গান ‘এখনো গেল না আঁধার’। ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ে শোনালেন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণা করে সন্‌জীদা খাতুনের লেখা ‘একুশ আমাকে ভাষা দিয়েছে’।

ছায়ানটের উপদেষ্টা মফিদুল হক আলোচনা করলেন সন্‌জীদা খাতুনের বহুমাত্রিক জীবন ও কর্ম নিয়ে। তিনি বললেন, শিক্ষা, গবেষণা, সংগঠন পরিচালনাসহ বহুবিধ কাজে সন্‌জীদা খাতুন আত্মনিয়োগ করলেও গান নিয়েই মূলত তিনি পথ চলেছেন। গানের ভেতর দিয়েই সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করেছেন। মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন মঙ্গলের চেতনা। ষাটের দশকে আইয়ুব খানের কঠিন সামরিক শাসনের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন করেছেন তিন দিনের অনুষ্ঠান করে। সেই সূত্রে ছায়ানট ও পরে রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখে নববর্ষের অনুষ্ঠান। বাঙালি সংস্কৃতির জাগরণে তাঁর ভূমিকা অম্লান থেকে যাবে।

আলোচনার পর তানিয়া মান্নান গেয়েছেন ‘মালা হতে খসে পড়া’। কণ্ঠশীলনের জহিরুল হক আবৃত্তি করেন ‘পুরস্কার’ কবিতার অংশবিশেষ। এভাবেই একক ও সম্মেলক গান,  ব্রতচারীর গান, আবৃত্তি পাঠ, স্মৃতিচারণার পরিবেশনা দিয়ে এগিয়েছে অনুষ্ঠান।

নালন্দার শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেছে সন্‌জীদা খাতুনের প্রবন্ধ অবলম্বে গীতি-আলেখ্য ‘সবারে বাস রে ভালো’। ত্রপা মজুমদার পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধকালের স্মৃতিচারণা করে সন্‌জীদা খাতুনের লেখা, তাঁর সংস্কৃতি ভাবনা নিয়ে প্রবন্ধ পড়েছেন সুমনা বিশ্বাস। স্মৃতিচারণা ও গান করেছেন লিলি ইসলাম। একক গান পরিবেশন করেছেন রোকাইয়া হাসিনা নীলি, মহিউজ্জামান চৌধুরী, খায়রুল আনাম শাকিল, ইফফাত আরা দেওয়ান, শারমিন সাথী ইসলাম, প্রমীলা ভট্টাচার্য, এ টি এম জাহাঙ্গীর, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, বুলবুল ইসলাম ও লাইসা আহমদ লিসা।

সম্মেলক কণ্ঠে ‘শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে’ গানটির পর জাতীয় সংগীত দিয়ে শেষ হয়েছিল স্মৃতি ও শ্রদ্ধার এই অনন্য আয়োজন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ছ য় নট ন কর ছ পর ব শ কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

যে জীবন মানুষের উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়: ববিতা

চিরসবুজ অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার ববিতা। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। আজ ৭১ বছর পূর্ণ করলেন সত্তরের দশকের অন্যতম সেরা এই অভিনেত্রী। জন্মদিন উপলক্ষে গত বছর একটি সাক্ষাৎকার দেন ববিতা। এ আলাপচারিতায় জীবনবোধ নিয়ে কথা বলেন এই শিল্পী।

জীবন নিয়ে ববিতা বলেন, “যে জীবন মানুষের কোনো উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়। মরে গেলে আমার ছেলে অনিক আমাকে অনেক মিস করবে। একমাত্র ছেলে তো, ওর কথা খুব ভাবি। ভক্তরা আমাকে কতটুকু মনে রাখবেন, জানি না।”

একটি ঘটনা উল্লেখ করে ববিতা বলেন, “এই জীবনে একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছে। অনেক শিল্পীকে তা দেওয়া হয়নি, হোক তা ভারতে কিংবা বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে আমাকে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের মেয়র আজীবন সম্মাননা দিয়েছেন। সেদিন আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ সম্মান দিয়েছেন, ৬ আগস্টকে ‘ববিতা ডে’ ঘোষণা করেছেন। তার মানে আমি বেঁচে না থাকলেও দিনটা উদযাপিত হবে। এটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।”  

আরো পড়ুন:

বধূবেশে অভিষেক কন্যা

জসীম পুত্রের মৃত্যু: ভাই রাহুলের আবেগঘন পোস্ট

মৃত্যুর কথা স্মরণ করে ববিতা বলেন, “তবে কবরে একা থাকার কথা ভাবলে হঠাৎ কেমন যেন লাগে। আরেকটা বিষয়, আমি অনেক দিন বেঁচে থাকতে চাই না। অসুখ–বিসুখে কষ্ট পেয়ে, বিছানায় পড়ে বাঁচতে চাই না। আমি কারো বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না।” 

কারণ ব্যাখ্যা করে ববিতা বলেন, “চারপাশে অনেক আত্মীয়স্বজনকে দেখেছি, দিনের পর দিন বিছানায় অসুস্থ হয়ে কষ্ট পেয়েছেন। যারা একা থাকেন, তাদের জন্য এই কষ্ট যেন আরো বেশি। তাই সব সময় এটা ভাবি, কখনোই যেন অন্যের বোঝা না হই।” 

সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছা ববিতার কখনো ছিল না। পরিচালক জহির রায়হানের ‘সংসার’ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও প্রথমে রাজি হননি। পরে মা আর বোনের পীড়াপীড়িতে অভিনয় করেন। তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন। মুক্তির পর সিনেমাটি সুপারফ্লপ হয়। 

পরিচালক জহির রায়হান আবারো ‘জ্বলতে সুরজ কে নিচে’ উর্দু সিনেমার নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করতে বললে প্রথমে রাজি হননি ববিতা। তখন বয়স মাত্র ১৪। কিন্তু সিনেমার বেশির ভাগ শুটিং হওয়ার পরও শিল্পীদের শিডিউল মেলাতে না পারায় সিনেমাটি আর শেষ করা হয় না। 

এরপর জহির রায়হান ববিতাকে নিয়ে বাংলা সিনেমা বানান। মুক্তির পর সিনেমাটি সুপারহিট হয়। অভিনয় করার ইচ্ছা না থাকলেও সিনেমা হিট হওয়ায় আবারো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। এরপর ‘স্বরলিপি’, ‘পিচঢালা পথ’, ‘টাকা আনা পাই’ সিনেমায় জুটি বাঁধেন রাজ্জাক-ববিতা। প্রতিটি সিনেমাই সুপারহিট।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিরাজ–কৃষ্ণাতে ম্যাচে ফিরল ভারত
  • ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবারও হতাশায় ডুবিয়ে এগিয়ে গেল পাকিস্তান
  • জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ভিপিএনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল
  • রূপ নয়, সাহস দিয়ে জয় করা এক নায়িকা
  • টানা দুই জয়ের পর এবার হার বাংলাদেশের যুবাদের
  • ভারতের অর্থনীতি মৃত, ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন: রাহুল
  • হেনরির ৬ উইকেটের পর দুই ওপেনারে নিউজিল্যান্ডের দিন
  • অসুখবিসুখে কষ্ট পেয়ে, বিছানায় পড়ে বাঁচতে চাই না: ববিতা
  • নিশ্ছিদ্র দাপটে উরুগুয়েকে উড়িয়ে ফাইনালে ও অলিম্পিকে ব্রাজিল
  • যে জীবন মানুষের উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়: ববিতা