দোকানে লুটপাট শেষে যুবককে গুলি করে পালাল ডাকাত দল
Published: 26th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ডাকাতের গুলিতে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁর নাম মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম (২৮)। তিনি হাটহাজারীর মেখল এলাকার বাসিন্দা। গতকাল শুক্রবার রাত তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আহত শহীদুল ইসলাম সেনাবাহিনীর সৈনিক হিসেবে কর্মরত। আহত অবস্থায় প্রথমে তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমইএচ) নেওয়া হয়েছে।
বাড়ির পাশে একটি মুদিদোকান রয়েছে আহত শহিদুল ইসলামের পরিবারের। দোকানটি তাঁর ভাই রাশেদুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম দেখাশোনা করেন। মুদিদোকানের পাশাপাশি তাঁরা বিকাশ ও নগদের পরিবেশক হিসেবে সেবা দিয়ে আসছেন।
আমিনুল ইসলাম জানান, রাত দুইটার দিকে তিনি দোকান থেকে বাড়িতে চলে যান। এ সময় তাঁর ভাই রাশেদও বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও না–ফেরায় তিনি মুঠোফোনে দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে শুরু করেন। এ সময় দেখতে পান, দোকানে চারজন অস্ত্রধারী যুবক ঢুকে পড়েছেন। এরপর তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে ‘ডাকাত, ডাকাত’ চিৎকার শুরু করলে তাঁর ভাই শহিদুল ইসলাম ঘর থেকে বের হয়ে দৌড়ে দোকানে ঢুকে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে সশস্ত্র ডাকাত দল শহিদুলকে গুলি করলে তিনি লুটিয়ে পড়েন। পরে ডাকাতেরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে গেছেন। আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, দুটি ক্যাশবাক্সে রাখা টাকা এবং দোকানের বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র ডাকাত দল লুট করে নিয়ে গেছে।
ডাকাতির ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, চারজন মুখোশপরা যুবক দোকানটিতে ঢুকে ক্যাশবাক্স থেকে টাকা গুনে নিচ্ছেন। তাঁদের সবার হাতে অস্ত্র। পরে তাঁদের গুলিতে দোকানের ভেতরে লুটিয়ে পড়েন শহীদুল ইসলাম। এরপর ডাকাতেরা পালিয়ে যান।
জানতে চাইলে ডাকাতের গুলিতে ওই যুবক গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাটাহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু কাওসার মোহাম্মদ হোসেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ডাকাতির ঘটনা সত্য। বিস্তারিত পরে জানাবেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।