ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের মারুফ মোল্লা স্থানীয়দের কাছে এখন ‘আকাশজয়ী’ নামে পরিচিত। দারিদ্র্য আর সীমিত সুযোগের মধ্যে নিজ ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি তৈরি করেছেন প্যারাগ্লাইডার। যা দিয়ে তিনি পাখির মতো আকাশেও উড়েছেন। মারুফের এই অসাধারণ কৃতিত্ব এখন গ্রামজুড়ে আলোচনার বিষয়।
ছোটবেলা থেকেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতেন মারুফ। দারিদ্র্যের কারণে পড়ালেখা বন্ধ হলেও থামেনি তার স্বপ্নের যাত্রা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউবের ভিডিও দেখে আর স্থানীয়ভাবে জোগাড় করা যন্ত্রপাতি দিয়ে মাত্র কয়েক মাসের পরিশ্রমে তিনি তৈরি করেছেন প্যারাগ্লাইডার। মারুফের উদ্ভাবনী মন শুধু প্যারাগ্লাইডারে সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি ইতোমধ্যে তৈরি করেছেন ইয়ারকুলার এবং হাত-পা ঘামানো সমস্যা সমাধানের ইলেকট্রিক্যাল থেরাপি মেশিন।
প্রথমবার আকাশ ছোঁয়ার মুহূর্তটি জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা বলে জানান মারুফ। তিনি বলেন, “স্বপ্ন আর সাহস থাকলে অসম্ভব বলে কিছুই নেই।” প্যারাগ্লাইডার তৈরিতে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, খেজুরতলা গ্রামের একটি ফসলের মাঠে মারুফের আকাশে ওড়ার দৃশ্য দেখতে ভিড় জমিয়েছেন গ্রামবাসী। শুরুতে পরিবারের বকাবকি ও প্রতিবেশীদের সন্দেহের মুখেও তিনি দমেননি।
মারুফের মা সামেলা বেগম বলেন, “আমার ছেলের এই কীর্তি অতুলনীয়। আমি ভাবতেই পারিনি আমার ছেলে এমন অসাধারণ কিছু করবে। একসময় যারা ওর কাজ নিয়ে সন্দেহ করত, এখন তারাই প্রশংসায় মুখর।”
গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, “মারুফের এই কাজ আমাদের গ্রামের জন্য গর্বের বিষয়। ওর মতো তরুণরা আমাদের অনুপ্রেরণা। মারুফ এখন গ্রামবাসীর কাছে আকাশজয়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।”
মারুফের স্বপ্ন এখন আরো বড়। তিনি একজন দক্ষ প্যারাগ্লাইডার হয়ে বাংলাদেশের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চান। পাশাপাশি, সরকারি সহযোগিতা পেলে তিনি তার প্যারাগ্লাইডার বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে চান।
মারুফ বলেন, “আমি চাই আমার এই উদ্ভাবন দেশের কাজে আসুক। সরকারের সহায়তা পেলে আমি আরো বড় কিছু করতে পারব।”
মারুফের প্রশংসা করে স্থানীয় সমাজকর্মী ফারুক হোসেন বলেন, “তিনি (মারুফ) প্রমাণ করেছেন, অর্থের অভাব স্বপ্নের পথে বাধা নয়। মারুফের এই গল্প তরুণদের জন্য উৎসাহের উৎস। আমরা আশা করি, সরকার তার পাশে দাঁড়াবে।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’