বিবিসির ‘হিউম্যান প্ল্যানেট’ সিরিজের বিরাট ভক্ত ছিলাম। এই ডকুমেন্টারি সিরিজেরই একটি পর্বে বাজাউ সম্প্রদায়ের মানুষদের সম্পর্কে প্রথম জানি। সমুদ্রেই তাদের বাস। তাদের নির্দিষ্ট কোনো দেশ নেই। এককথায় সমুদ্রের যাযাবর এসব মানুষ জল আর নীল আকাশের মধ্যে নিজস্ব এক জগতে বাস করে। তাঁরা নাকি হাতে তৈরি কাঠের গগলস পরে কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়াই ১৫ মিনিট পর্যন্ত পানির নিচে অবস্থান করে মাছ ধরতে পারে!

তার পর থেকেই নানা সময় বাজাউদের দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি। গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনাটাকে বাস্তব রূপ দেওয়া গেল। দক্ষিণ ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও উপকূলে বিচ্ছিন্নভাবে বাস করে বাজাউরা। বাজাউদের গ্রামে যাওয়ার বিস্তারিত কোনো দিকনির্দেশনা অনলাইনে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এসব গ্রামে ভ্রমণের কোনো প্যাকেজ ট্যুরও এজেন্সিগুলোর নেই। প্রথমে ফিলিপাইনের ম্যানিলা থেকে বাজাউদের গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কয়েক দিনের চেষ্টার পর সেই পরিকল্পনা বাদ দিতে হলো। কারণ, এলাকাটা দুর্গম আর নিরাপত্তাঝুঁকিও আছে। রোমাঞ্চের টানে এই দূর দেশে এসেছি সত্য, কিন্তু নিরাপত্তাঝুঁকি তো আর নিতে পারি না।

বোর্নিও উপকূলে বাজাউদের নুসা তেঙ্গাহ গ্রাম.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’

লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।

রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।

জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।

সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।

মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ