প্রতিবছর একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে দ্য জনস হপকিনস সেন্টার ফর বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজাইনিং। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগের একটি প্রতিষ্ঠান। এবারের প্রতিযোগিতায় তিনটি বিভাগে অংশ নেয় দুই শর বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৪০টি দল।

সুখবর হলো, প্রতিযোগিতার ‘ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক’ বিভাগে হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, ক্যালটেকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হারিয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি দল। কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীর দলটির নাম নিওস্ক্রিনিক্স।

যেভাবে অংশ নেওয়া

১৭ এপ্রিল দুপুরে ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আধভেজা হয়ে পৌঁছালাম বুয়েটে। নিওস্ক্রিনিক্সের পাঁচ সদস্য ফাহমিদা সুলতানা, এইচ এম শাদমান, সাদাতুল ইসলাম, মো.

হাসনাইন আদিল ও পৃথু আনানকে ক্যাফেটেরিয়াতেই পাওয়া গেল। শুরুর গল্পটা বললেন ফাহমিদা, ‘জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রতিযোগিতায় প্রতিবছরই বুয়েটের বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তাঁদের কাছ থেকেই এই প্রতিযোগিতার খবরটা প্রথম পাই। প্রতিযোগিতাটি যেহেতু গণস্বাস্থ্যবিষয়ক এবং আমাদের কয়েকজনের গণস্বাস্থ্য গবেষণার আগ্রহ আছে, তাই আবেদন করি। আবেদনের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমাদের একটি প্রস্তাবনা জমা দিতে হয়।’

আরও পড়ুনবুয়েটে প্রথম শাফিন বললেন, ‘১৬-১৭ ঘণ্টা পড়া লাগবে না’২২ জুন ২০২৩কী ছিল প্রস্তাবনায়

সহজ করে বললে প্রাথমিক পর্যায়েই স্তন ক্যানসার শনাক্ত করার এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে নিওস্ক্রিনিক্স। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন নারী নিজেই স্তন ক্যানসারের লক্ষণ বা সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পারবেন। ফাহমিদার নিজের পরিবারেও স্তন ক্যানসারের রোগী থাকায় বছর দুয়েক আগেই তিনি এমন একটি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবছিলেন। পরে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন হাসনাইন আদিল ও সাদাতুল ইসলাম।

শুরুতে হাসনাইন অ্যাপটির ইউআই (ইউজার ইন্টারফেস) বা ফ্রন্টএন্ড এবং সাদি অ্যাপটির প্রোগ্রামিং বা ব্যাকএন্ডের কাজ করেছেন। এরপর দলে যুক্ত হন এইচ এম শাদমান ও পৃথু আনান। শাদমান এই প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করেছেন। পৃথু সামলেছেন স্তনের স্ক্রিনিং বা ছবি তোলার যন্ত্র তৈরির দায়িত্ব। পরিকল্পনা ও উপস্থাপনা দিয়ে পুরো কর্মযজ্ঞকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ফাহমিদা। শুধু এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করেই যে তাঁরা কাজ করেছেন, তা নয়। সাদাতুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগেও একটি দেশীয় প্রতিযোগিতায় আমাদের এই প্রযুক্তির প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে কোনো স্বীকৃতি সেভাবে আসেনি। তবে যথেষ্ট পর্যালোচনা পেয়েছিলাম। ফলে নিজেদের ত্রুটিগুলো দূর করে পরের প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয়েছে।’

জানুয়ারিতে প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার পর ১০ মার্চ প্রতিযোগিতার ফাইনালিস্ট নির্ধারিত হয়। ‘ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক’ বিভাগের ছয় ফাইনালিস্টের মধ্যে নিওস্ক্রিনিক্সের সঙ্গে বুয়েটের অন্য একটি দলও ছিল। ১২ এপ্রিল অনলাইনে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই জানানো হয় বিজয়ীদের নাম।

প্রাথমিক পর্যায়েই স্তন ক্যানসার শনাক্ত করার এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে নিওস্ক্রিনিক্স।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ