টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে হামলায় ফজল হক (৫৫) নামের যুবদলের সাবেক এক নেতা নিহত হয়েছেন। আজ রোববার সকালে উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের বংশীনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনায় ফজল হকের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৪৫) ও ছেলে মনিরুজ্জামান (২৫) আহত হয়েছেন। তাঁদের মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত ফজল হক বাঁশতৈল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ছিলেন। পেশায় ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ফজল হক আজ বিকেলে ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল।

পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত ব্যক্তির স্বজন এক নারীকে আটক করেছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪৭ বছর আগে ফজল হকের দাদি তাঁকে বংশীনগর মৌজায় ৫৫ শতক জমি দলিল করে দেন, যা তাঁর ফুফাতো ভাই প্রয়াত মজিবুর রহমানের ছেলে পারভেজ মিয়া ভোগ করছিলেন। সম্প্রতি ফজল হক বিষয়টি জানতে পেরে ওই জমি দখল নিতে যান। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গ্রাম্য মাতব্বরদের নিয়ে একাধিক বৈঠকও হয়, তবে কোনো সমাধান না হওয়ায় তিনি টাঙ্গাইলের আদালতে মামলা করেন। এ ছাড়া জমির চারপাশে কাঁটাতারের বেড়াও দেন।

আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে পারভেজ মিয়া প্রায় ৩০ লোকসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া খুলতে যান। এতে ফজল হক বাধা দিলে পারভেজ ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন। এ সময় ফজল হকের স্ত্রী, ছেলেসহ পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে এলে তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয়। গুরুতর অবস্থায় তাঁদের কুমুদিনী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ফজল হককে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। আইনিপ্রক্রিয়া শেষে নিহত ব্যক্তির মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।

জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ 

এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ