পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা প্রশমনের পক্ষে বাংলাদেশ। বন্ধুপ্রতিম দেশ দুটি চাইলে বাংলাদেশ মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারে। সহায়তা চাইলে করবো। না চাইলে আগ বাড়িয়ে কিছু করতে পারি না।

আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

মো.

তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি চাই। আমরা জানি, বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মহাসম্পর্ক সম্পর্ক আছে। কিন্তু আমরা চাই না, এখানে কোনো বড় কোনো সংঘাত সৃষ্টি হোক, যাতে এটা এ অঞ্চলের মানুষের কোনো বিপদের কারণ না হয়ে উঠতে পারে। ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বিদ্যমান।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাইব, তারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধান করে ফেলুক। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, দু-একটি দেশের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতার প্রস্তাব এসেছে। যেভাবে হোক, মধ্যস্থতার মাধ্যমে হোক, দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হোক, আমরা চাই উত্তেজনা প্রশমিত হোক এবং শান্তি বজায় থাকুক।

ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইরান ও সৌদি আরব ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারে কী না– এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি মনে করি না, এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যস্থতা করার মতো কোনো ভূমিকা নেওয়া উচিত। আমরা চাইব, তারা নিজেরা নিজেরা সমস্যার সমাধান করুক। তারা যদি আমাদের সহায়তা চায়, আপনারা মধ্যস্থতা করুন; তাহলে হয়ত আমরা যাব। কিন্তু তার আগে আমরা আগবাড়িয়ে কিছু করতে চাই না।

চলমান উত্তেজনার কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কী না– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আধুনিক জামানায় সবকিছু সবাইকে কমবেশি প্রভাবিত করে। কাজেই কোনো কিছু আমাদের একটুও প্রভাবিত করবে না, সেটা আমি বলি না। তাদের যেই সংঘাত সেটা আমাদের সরাসরি প্রভাবিত করার কিছু নাই। কারণ, আমরা এতে কোনো পক্ষ নিইনি। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে কোনো সংঘাত বা সম্পর্ক খারাপ হলে প্রভাব পড়ে। তবে তাদের কাছ থেকে আমাদের যদি কোনো স্বার্থ থাকে আমদানি করার, আমরা করব। 

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে উপদেষ্টা জানান, এটা হয়ত নিরাপত্তা নিয়ে যারা সরাসরি কাজ করেন তারা বলতে পারবেন। এই মুহূর্তে আমার কাছে এ রকম কোনো তথ্য নেই।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট আম দ র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ