চট্টগ্রাম টেস্টে তিন পেসার নাকি তিন স্পিনার, যা বললেন সিমন্স
Published: 27th, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের একাদশ কেমন হবে, এ নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাননি প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। তবে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, হয় তিন পেসার নয়তো তিন স্পিনার নিয়ে মাঠে নামবে টাইগাররা।
সিলেট টেস্টে বাংলাদেশ খেলেছিল তিন পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে। তবে চট্টগ্রামের উইকেট ও কন্ডিশন ভিন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে পরিবর্তন আশা করছেন অনেকেই। তবে বাড়তি স্পিনার খেলানো হবে কিনা, সে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গেছেন সিমন্স।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘হয় তিন পেসার দুই স্পিনার, নয়তো তিন স্পিনার দুই পেসার। এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। সিদ্ধান্ত পরে নেব।’
চট্টগ্রামের উইকেট নিয়ে আশাবাদী সিমন্স। তার ভাষায়, ‘উইকেট হার্ড ও ফ্ল্যাট। আশা করি আমরা এর ফায়দা নিতে পারব। যদি একটু টার্ন পাই, তাহলে সেটা আমাদের জন্য ভালো হবে।’
পাঁচ বোলার খেলানোর সিদ্ধান্ত অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন ক্যারিবীয় কোচ। ‘টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ বোলার থাকা চাই। আমাদের অলরাউন্ডার মিরাজ আছে। যদিও গত ম্যাচে রান করতে পারেনি, তবে এখানে তার টেস্ট সেঞ্চুরির অভিজ্ঞতা আছে।’
নাহিদ রানার পিএসএলে চলে যাওয়া নিয়ে সিমন্স বলেন, ‘শক্তি হারিয়েছি বলব না। গতি হারিয়েছি বলতে পারেন। রানার চলে যাওয়ার ফলে। এখানে স্কিলড বোলারও আছে। চট্টগ্রামের স্লো উইকেটে ওরাও ভালো করতে পারবে।’
চট্টগ্রাম টেস্টে পেস ইউনিটে হাসান মাহমুদ, খালেদ আহমেদ ও তানজিম সাকিবে ভরসা রাখছেন কোচ। বলেছেন, ‘আমাদের স্কিলে ফোকাস করতে হবে। হাসান ৫ উইকেট নিয়েছে পাকিস্তানে, বেশি একটা পার্থক্য নয়। খালেদ ভালো করছে, সাকিব তরুণ এখনও। আমার মনে হয় এখানেও আমাদের ভালো পেসার রয়েছে।’
ওপেনিং সমস্যা নিয়েও খোলামেলা মন্তব্যে সিমন্স বলেন, ‘ওয়ানডে বা ঘরোয়া লিগ থেকে সরাসরি টেস্টে আসাটা আদর্শ নয়। তবে আমরা ওপেনিং ঠিক করতে কাজ করছি, এটা চলমান প্রক্রিয়া।’
ফিল্ডিংয়ে ডিরেক্ট হিট ও রানআউটের ঘাটতি নিয়েও স্পষ্ট মন্তব্য সিমন্সের, ‘সবাই চায় বেশি বেশি ডিরেক্ট হিট হোক। আমরা এই জায়গায় কাজ শুরু করেছি। সামনে এর উন্নতি দেখতে পাবেন।’
২৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট মাঠে গড়াবে। সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে জিম্বাবুয়ে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ ল স মন স আম দ র স মন স উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।