চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের একাদশ কেমন হবে, এ নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাননি প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। তবে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, হয় তিন পেসার নয়তো তিন স্পিনার নিয়ে মাঠে নামবে টাইগাররা।

সিলেট টেস্টে বাংলাদেশ খেলেছিল তিন পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে। তবে চট্টগ্রামের উইকেট ও কন্ডিশন ভিন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে পরিবর্তন আশা করছেন অনেকেই। তবে বাড়তি স্পিনার খেলানো হবে কিনা, সে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গেছেন সিমন্স।

ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘হয় তিন পেসার দুই স্পিনার, নয়তো তিন স্পিনার দুই পেসার। এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। সিদ্ধান্ত পরে নেব।’

চট্টগ্রামের উইকেট নিয়ে আশাবাদী সিমন্স। তার ভাষায়, ‘উইকেট হার্ড ও ফ্ল্যাট। আশা করি আমরা এর ফায়দা নিতে পারব। যদি একটু টার্ন পাই, তাহলে সেটা আমাদের জন্য ভালো হবে।’

পাঁচ বোলার খেলানোর সিদ্ধান্ত অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন ক্যারিবীয় কোচ। ‘টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ বোলার থাকা চাই। আমাদের অলরাউন্ডার মিরাজ আছে। যদিও গত ম্যাচে রান করতে পারেনি, তবে এখানে তার টেস্ট সেঞ্চুরির অভিজ্ঞতা আছে।’

নাহিদ রানার পিএসএলে চলে যাওয়া নিয়ে সিমন্স বলেন, ‘শক্তি হারিয়েছি বলব না। গতি হারিয়েছি বলতে পারেন। রানার চলে যাওয়ার ফলে। এখানে স্কিলড বোলারও আছে। চট্টগ্রামের স্লো উইকেটে ওরাও ভালো করতে পারবে।’

চট্টগ্রাম টেস্টে পেস ইউনিটে হাসান মাহমুদ, খালেদ আহমেদ ও তানজিম সাকিবে ভরসা রাখছেন কোচ। বলেছেন, ‘আমাদের স্কিলে ফোকাস করতে হবে। হাসান ৫ উইকেট নিয়েছে পাকিস্তানে, বেশি একটা পার্থক্য নয়। খালেদ ভালো করছে, সাকিব তরুণ এখনও। আমার মনে হয় এখানেও আমাদের ভালো পেসার রয়েছে।’

ওপেনিং সমস্যা নিয়েও খোলামেলা মন্তব্যে সিমন্স বলেন, ‘ওয়ানডে বা ঘরোয়া লিগ থেকে সরাসরি টেস্টে আসাটা আদর্শ নয়। তবে আমরা ওপেনিং ঠিক করতে কাজ করছি, এটা চলমান প্রক্রিয়া।’

ফিল্ডিংয়ে ডিরেক্ট হিট ও রানআউটের ঘাটতি নিয়েও স্পষ্ট মন্তব্য সিমন্সের, ‘সবাই চায় বেশি বেশি ডিরেক্ট হিট হোক। আমরা এই জায়গায় কাজ শুরু করেছি। সামনে এর উন্নতি দেখতে পাবেন।’

২৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট মাঠে গড়াবে। সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে জিম্বাবুয়ে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ ল স মন স আম দ র স মন স উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রম অধিকার ও সুস্থ কর্মপরিবেশ

আজ মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী মেহনতি মানুষদের স্মরণ করিবার দিন। তৎসহিত সকল শ্রমজীবী মানুষের জন্য মর্যাদাকর জীবন নিশ্চিতকরণের সংগ্রামে নূতন শপথ গ্রহণের দিন।

মে দিবস বিশ্বের শ্রমিকদের সংহতি যদ্রূপ বৃদ্ধি করিয়াছে, তদ্রূপ তাহাদিগকে অধিকার সচেতনও করিয়াছে; প্রেরণা জোগাইয়া চলিয়াছে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে। মে দিবস বাংলাদেশসহ বিশ্বের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়া স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশসমূহের জন্য বিপুল প্রেরণার উৎসরূপে কাজ করিয়াছে।

তাহারই প্রতিফলনস্বরূপ এই সকল দেশে ছুটিসহকারে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়। উন্নত দেশসমূহ এই দিবসে পৃথক ছুটির ব্যবস্থা না করিলেও উহার প্রভাব উপেক্ষা করিতে পারে নাই। তাই ভিন্ন প্রকারে সেই সকল দেশেও দিবসটি পালিত হয়। আন্তর্জাতিকভাবে আজিকে শ্রমমান লইয়া যে আলোচনা হয়, জাতীয় ন্যূনতম মজুরিসহ শ্রমিকের বহু অধিকার আজিকে যে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বহু দেশে কার্যকর হইয়াছে, উহারও পশ্চাতে রহিয়াছে মে দিবসের চেতনা। তবে ইহা সত্য, বাংলাদেশে ঘটা করিয়া দিবসটি পালিত হইলেও মজুরি ও কর্মপরিবেশ প্রশ্নে খামতি সীমাহীন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতসমূহে শ্রমিকদের জন্য এক প্রকার আইনি আশ্রয় থাকিলেও বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে উহার লেশমাত্র নাই। শেষোক্ত খাতে কোটি কোটি শ্রমিক উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও অন্যান্য অধিকার হইতে বঞ্চিত। 

এই বৎসর শ্রমিক দিবস এমন সময়ে উপস্থিত, যখন গণঅভ্যুত্থানের ফসলস্বরূপ দেশে নূতন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে। সেই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসাবে শ্রম খাতের সংস্কারেও উদ্যোগী। তাহাদের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে প্রতিবেদনও দাখিল করিয়াছে, যথায় দেশের সাড়ে সাত কোটি শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার-সংক্রান্ত একগুচ্ছ সুপারিশ রহিয়াছে। প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়োজিত সকল শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ ন্যূনতম মানদণ্ডরূপে বিবেচিত হইবে– কমিশনের এই সুপারিশ যুগান্তকারী বলিয়া আমরা মনে করি। উপরন্তু কমিশন ইহাও বলিয়াছে, কোনো খাতের মজুরি কাঠামো নির্ধারণে পরিবারে একক উপার্জনকারী হিসাবে বিবেচনায় লইয়া এমন পরিমাণ নির্ধারণ করিতে হইবে, যাহাতে শ্রমিক তাঁহার পরিবারের প্রয়োজন মিটাইতে পারেন।

বিভিন্ন খাতের শ্রমিকের মজুরি তিন বৎসর অন্তর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণ, মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য আপৎকালীন তহবিল, ট্রেড ইউনিয়ন করিবার শর্ত শিথিল, স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস এবং স্থায়ী শ্রম কমিশন প্রতিষ্ঠা-সংক্রান্ত সুপারিশসমূহও প্রণিধানযোগ্য। একটা সময় ছিল যখন শ্রমিক আন্দোলন বলিতে কারখানা ভাঙচুর ও সম্পদ ধ্বংস বোঝাইত। পরিণামে নিজের রুটি-রুজি লইয়া শ্রমিকদেরই টানাপোড়েনে পড়িতে হইত। ইহার সমাধান দিয়াছিল ট্রেড ইউনিয়ন প্রথা। দুর্ভাগ্যবশত এই দেশে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার বিগত দশকসমূহে ক্রমশ জটিল রূপ ধারণ করে। উহার সহিত সুস্থ ধারার শ্রমিক আন্দোলনও বিরল হইয়া পড়ে।

আমাদের বিশ্বাস, শ্রম সংস্কার কমিশনের ট্রেড ইউনিয়ন-সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ আলোর মুখ দেখিলে শ্রমিক-মালিক উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা হইবে। সর্বোপরি দেশের বিকাশমান শিল্প খাত হইবে লাভবান। উৎপাদন ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তিরূপে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে উদ্যোক্তার যদ্রূপ অবদান, তদ্রূপ শ্রমিকেরও অবদান ব্যাপক। তাই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণে আর কোনো অবহেলা নহে। এইবারের মে দিবসে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে এই অঙ্গীকার গ্রহণ করিবে– ইহাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা সমকালের পক্ষ হইতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে মে দিবসের অভিনন্দন জানাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ