রেণু-পোনা পাচারে সক্রিয় পাঁচ আড়ত মালিক
Published: 27th, April 2025 GMT
ভোলার চরফ্যাসনে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু পোনা নিধন চলছে অবাধে। উপজেলার ২০ ঘাটে পাঁচ আড়ত মালিকের তত্ত্বাবধানে চলছে অবৈধ এ কার্যক্রম। তাদের অধীনে কাজ করছেন সহস্রাধিক ভ্রাম্যমাণ জেলে ও পাইকার। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে রেণু পোনা নিধন করে পাচার করা হলেও মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে তৎপরতা নেই। ফলে বাগদা ও গলদা পোনা নিধনের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু চক্রটি।
জানা গেছে, পোনা নিধন চক্রের মূল হোতা হিসেবে রয়েছেন আড়ত মালিক মাদ্রাজ এলাকার ইউপি সদস্য রাসেল, পাঁচ কপাট এলাকার মো.
সরেজমিন মেঘনা নদীর পাড়ে গেলে দেখা যায়, তীরে টংঘর নির্মাণ করে জাল ফেলে বাগদা ও গলদা রেণু-পোনা আহরণে ব্যস্ত মো. বাবুল নামে এক জেলে। পাশেই অন্য জেলেরা সংগ্রহ করা পোনা গুণে গুণে ব্যারেলে ভর্তি করছেন। আড়তদারের বেঁধে দেওয়া দামে পাইকাররা এসে সেগুলো নিয়ে যাচ্ছেন।
মো. বাবুল জানান, পেটের দায়ে পাইকার মনিরের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা দাদন নিয়ে বাগদা ও গলদার রেণু শিকার করছি। সে আমার কাছ থেকে ১০০ পোনা ২০ টাকা দরে কিনে নিয়েছে। আমার মতো অসংখ্য জেলে পাইকারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে মেঘনা নদীতে রেণু শিকার করছেন।
আরেক জেলে মো. জসিম উদ্দিন পাইকার জাহাঙ্গীর ও হারুনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দাদন নিয়েছেন। নিজের তিনটি ভাসা জাল দিয়ে প্রতিদিন বাগদা ও গলদার রেণু সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে রোজ ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করছেন। রেণু সংগ্রহের সময় কখনও প্রশাসনকে অভিযান চালাতে দেখেননি বলে জানান উপস্থিত জেলেরা।
পাইকার মনির হোসেন বলেন, আমার অধীনে ২০ জেলে রয়েছেন। তাদের দাদন দিয়ে রাখা হয়েছে। টাকা দেন আড়ত মালিক। আমি জেলেদের কাছ থেকে রেণু সংগ্রহ করে আড়ত মালিক ইউপি সদস্য রাসেলের কাছে দিয়ে আসি। তিনি বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন।
আড়ত মালিক ইউপি সদস্য রাসেল জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ব্যবসা চালাতে হয়। পাইকারদের কাছ থেকে বাগদা ও গলদার রেণু কিনে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চালান করতে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। এতে খুব একটা লাভ থাকে না।
নিয়মিত কেন অভিযান চালানো হয় না– জানতে চাইলে সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। ছোট ছোট জাল নিয়ে ভ্রাম্যমাণ জেলেরা নদীতে বাগদা ও গলদা রেণু শিকারে নেমে পড়ে। অভিযানে যাওয়ার আগেই জেলেরা পালিয়ে যায়। পোনা নিধন বন্ধে অভিযান জোরদার হবে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এ কর্মকর্তা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, মৎস্য অফিস কেন বাগদা ও গলদা রেণু শিকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, এ বিষয়ে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেব। যারা এই ব্যবসায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি জানান, মৎস্য দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রশাসনকে ম্যানেজের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আড়ত ম ল ক কর মকর ত এল ক র ও গলদ মৎস য করছ ন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।