শিক্ষাজীবনের শেষের দিক থেকেই চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এতে পরিকল্পনা করে গুছিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। বিষয়ভিত্তিক চাকরির সুযোগ আমাদের দেশে তুলনামূলক কম বলেই শেষ প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়। সরকারি অথবা প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তুতি কীভাবে শুরু করব। বর্তমান সময়ে যে কোনো পরীক্ষায় আগের চেয়ে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়েছে। তা চাকরির পরীক্ষায়ই হোক কিংবা স্কলারশিপ, ফেলোশিপ বা ইউনিভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায়ই হোক। বদলে গেছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ধরন।
পড়ার কৌশল
রিসেন্ট প্রশ্ন আগে পড়বেন। মানে আপনি জব সলিউশন থেকে ২০২৪ সালের প্রশ্নগুলো পড়বেন। এরপর ২০২২, ২০২৩ এভাবে বিগত ১০ বছরের প্রশ্ন মুখস্থ রাখবেন।
প্রথমবার পড়ার সময় আপনি ব্যাখ্যা ছাড়া শুধু সালের প্রশ্নগুলো পড়বেন। অনেকে প্রথমবার ব্যাখ্যাসহ পড়তে গিয়ে ছয় মাসে একটি সালের প্রশ্নই শেষ করতে পারেন না। তখন অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন। আমার সাজেশন হলো, আপনি প্রথমবার ব্যাখ্যা ছাড়া শুধু সালের প্রশ্নগুলো পড়ে শেষ করবেন। দ্বিতীয়বার রিভাইজ করার সময় আপনি ব্যাখ্যাসহ পড়বেন।
জব সলিউশন পড়ার সময় আগে বিগত বছরের বিসিএসের প্রশ্ন পড়বেন এবং বোঝার চেষ্টা করবেন কোন সাবজেক্ট থেকে বা কোন অধ্যায় থেকে কী ধরনের প্রশ্ন আসে।
যেসব প্রশ্ন মনে থাকতে চাচ্ছে না, সেটি আলাদা করে দাগ দিয়ে রাখবেন। যেমন– আপনি বিসিএসের ১০০টি প্রশ্ন একবার রিডিং পড়লেন। যেই ১০০টি প্রশ্ন পড়া শেষ হলো, ঠিক তখনই সেই প্রশ্নগুলো দ্বিতীয়বারের মতো পড়বেন। পড়তে গিয়ে দেখবেন একটু আগেই যে প্রশ্নগুলো পড়লেন, এখনই সেই ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে ছয়টি বা আটটি বা কিছু প্রশ্নের উত্তর পারছেন না। উদাহরণস্বরূপ আপনি আটটি প্রশ্নের উত্তর পারছেন না। তাহলে আপনি ওই আটটি প্রশ্ন আলাদা করে দাগিয়ে রাখবেন এবং সেগুলো তৃতীয়বারের মতো পড়বেন। পুরো জব সলিউশন একবার করে পড়া শেষ হলে আপনি যেগুলো পারতেন না, তৃতীয়বারের মতো পড়তে হয়েছিল সেগুলো আবার একবার পড়বেন। এবার দেখবেন যে বিসিএসের যে আটটি প্রশ্নের উত্তর আপনি পারতেন না এখন এর মধ্যে সবই পারেন, শুধু দুই-তিনটি পারেন না। আপনি কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আগে রিভাইজ করার সময় শুধু এ দু-তিনটি প্রশ্ন পড়বেন। এভাবে পড়লে দেখবেন পুরো জব সলিউশন থেকে আপনি পারেন না– এমন প্রশ্নের সংখ্যা ৫০০-৬০০-এর বেশি হবে না। পরীক্ষার দু’এক দিন আগে শুধু এই কয়টি প্রশ্ন পড়বেন। যে প্রশ্ন আপনি পরীক্ষার দু’এক দিন আগে না পড়লেও উত্তর দিতে পারতেন সেসব প্রশ্ন পড়ে সময় নষ্ট করবেন না।
জব সলিউশন থেকে ৫০০টি প্রশ্ন পড়তে আপনার যদি ৫ ঘণ্টা সময় লাগে, আপনি এ পদ্ধতি অনুসরণ করে সেটি ৩ ঘণ্টায় শেষ করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ আপনি ১০-১৫তম বিসিএসের ৫০০টি প্রশ্ন পড়বেন, শুরুতেই আপনি ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫তম বিসিএসের মুখস্থ প্রশ্নগুলো আগে পড়ে নেবেন। সাধারণ জ্ঞান, বাংলা এসব প্রশ্ন হলো মুখস্থ প্রশ্ন। এখন আপনার পড়া বাকি আছে ১০-১৫তম বিসিএসের গণিত ও ইংরেজি। আপনি যখন ইংরেজি পড়বেন, তখন ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫তম বিসিএসের শুধু ইংরেজিই পড়বেন। এবার যখন গণিত পড়বেন, তখন ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫তম বিসিএসের শুধু গণিতই পড়বেন। এভাবে পড়লে আপনার বিরক্ত লাগবে না, সময়ও কম লাগবে। একসঙ্গে সাধারণ জ্ঞান, গণিত ও ইংরেজি পড়তে গেলে আপনার হয়তো ভালো লাগবে না, পাশাপাশি সময়ও বেশি লাগবে।
সাজেশনভিত্তিক পড়াশোনা করতে হবে। সাজেশনটি এ রকম, পাটিগণিতে ৩ নম্বরের জন্য আপনাকে ছয়টি অধ্যায় করতে হবে। যে স্টুডেন্ট গণিতে দুর্বল সে তো ছয়টি অধ্যায় করতে পারবে না। আমার সাজেশন হলো, যে স্টুডেন্ট ৩৫-৪৪তম বিসিএসের প্রশ্ন দেখেন তিনি জানবেন যে পাটিগণিতে ছয়টির মধ্যে কোন তিনটি অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতি বছর প্রশ্ন আসে। তিনি প্রথমবার গণিত করার সময় ওই তিনটি অধ্যায় করেই পাটিগণিত শেষ করবেন। দ্বিতীয়বার যখন করতে যাবেন তখন তিনি আরও একটি অধ্যায় বাড়িয়ে এবার চারটি অধ্যায় করবেন।
যে টপিক পড়া শুরু করবেন, সেটি শেষ না করে অন্য টপিকে যাবেন না। আমার সাজেশন হলো, আপনি যখন শতকরা শুরু করবেন তখন ওটি শেষ না করে অন্য কোনো সাবজেক্ট পড়তে যাবেন না।
সব বই একবার পড়া শেষ হওয়া মাত্রই আপনি জব সলিউশন পড়া শুরু করবেন। পুরো জব সলিউশন মিলে প্রশ্ন আছে ২৫ হাজারের মতো। ১০-৪৫তম বিসিএসের প্রশ্ন আছে ৪ হাজার ৫০০টি এবং বিগত ১০ বছরের নন-ক্যাডারের প্রশ্ন ২০ হাজারের মতো। অর্থাৎ মোট ২৪ হাজার ৫০০ থেকে ২৫ হাজার প্রশ্ন। প্রতিদিন ৫০০টি এমসিকিউ পড়লে জব সলিউশন শেষ করতে সময় লাগবে ৫০ দিন। প্রতিদিন ৫০০টি না পারলেও সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করলে ঘুমানোর আগে ৩০০টি এমসিকিউ পড়া সম্ভব। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ কর প রথমব র প রস ত ত পর ক ষ র কর র স র র মত ট গণ ত আপন র একব র র সময় করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু, চট্টগ্রামে কোন কলেজে কত আসন
আসন্ন শিক্ষাবর্ষে (২০২৫-২৬) একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে আজ বুধবার। চট্টগ্রামের শিক্ষা বোর্ডের অধীন থাকা পাঁচটি জেলার ২৯০টি কলেজে এবার ১ লাখ ৬৭ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি রয়েছে। এসব জেলায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির মোট আসনের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজারই চট্টগ্রাম জেলায়। এর মধ্যে আবার চট্টগ্রাম নগরের কলেজগুলোতেই আসনসংখ্যা সাড়ে ৫১ হাজারের মতো।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের কিছু কলেজের পক্ষ থেকে আসন বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কলেজে আসন বাড়ানো হতে পারে। এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে। চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক মোহাম্মদ ছরওয়ার আলম বলেন, ‘এখনো আসন বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা কাজ করছি। এটির জন্য আবেদনে কোনো সমস্যা হবে না।’
চট্টগ্রামে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই নজর থাকে নগরের সরকারি কলেজগুলোতে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের পছন্দের ১০টি কলেজের তালিকায় অন্তত ৬টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ও সরকারি কমার্স কলেজে আগ্রহ তুলনামূলক বেশি।
নগরের চকবাজার এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম কলেজে গতবারের হিসাবে আসনসংখ্যা ১ হাজার ৪০। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৬৬০টি ও মানবিকে ৩৮০টি আসন। বিজ্ঞান বিভাগে আবেদনের যোগ্যতা জিপিএ-৫ ও মানবিক বিভাগে সর্বনিম্ন জিপিএ-৪।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ নগরের আগ্রাবাদ এলাকার সরকারি কমার্স কলেজ। যেখানে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের আসনসংখ্যা এক হাজার। আবেদনের যোগ্যতা জিপিএ-৪.৫৬।
নগরের চকবাজার এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম কলেজে গতবারের হিসাবে আসনসংখ্যা ১ হাজার ৪০। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৬৬০টি ও মানবিকে ৩৮০টি আসন। বিজ্ঞান বিভাগে আবেদনের যোগ্যতা জিপিএ-৫ ও মানবিক বিভাগে সর্বনিম্ন জিপিএ-৪।সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ৬৬০, ব্যবসায় শিক্ষায় ৬১৫ ও মানবিকে ৪৫০টি আসন রয়েছে। সরকারি সিটি কলেজে মোট আসনসংখ্যা ২ হাজার ৪০০। এর মধ্যে দিবা শাখায় বিজ্ঞান বিভাগের আসন ৭০০, ব্যবসায় শিক্ষায় ৪০০ ও মানবিকে আসন ৫০০টি। নৈশ শাখায় ব্যবসায় শিক্ষায় ও মানবিকে আসন ৪০০টি করে। দুই কলেজেই আবেদনের যোগ্যতা বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫, ব্যবসায় শিক্ষায় জিপিএ-৪.৫ ও মানবিকে সর্বনিম্ন জিপিএ-৪।
ছাত্রীদের পছন্দের তালিকায় অন্যান্য সরকারি কলেজের পাশাপাশি রয়েছে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ। যেখানে মোট আসন ১ হাজার ৪০০। এখানে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে আসন রয়েছে ৫০০টি করে। আর মানবিকে আসন ৪০০টি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে মোট আসন ৯০০টি এবং আগ্রাবাদ মহিলা কলেজে আসন ১ হাজার ৩২৫টি।
এখনো আসন বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা কাজ করছি। এটির জন্য আবেদনে কোনো সমস্যা হবে না।মোহাম্মদ ছরওয়ার আলম, কলেজ পরিদর্শক, চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডনগরের বাইরে উপজেলাগুলোতেও সরকারি কলেজে আগ্রহ বেশি শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে মোট আসন ১ হাজার ৫০০। একই সংখ্যক আসন রয়েছে সাতকানিয়া সরকারি কলেজেও। তিন বিভাগ মিলিয়ে ১ হাজার ৫৬০টি আসন রয়েছে হাটহাজারী সরকারি কলেজে। বাঁশখালীর সরকারি আলাওল কলেজ ও রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজে মোট আসনসংখ্যা ৯৫০।
জেলার অন্যান্য সরকারি কলেজের মধ্যে পটিয়া সরকারি কলেজে ১ হাজার ২৫০, রাউজান সরকারি কলেজে ১ হাজার ৫০, নিজামপুর সরকারি কলেজে ১ হাজার ২২৫, গাছবাড়ীয়া সরকারি কলেজে ১ হাজার ৩৫০, ফটিকছড়ি সরকারি কলেজে ১ হাজার, চুনতি সরকারি মহিলা কলেজে ৭০০ ও সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজে আসনসংখ্যা ৬৫০।
আজ শুরু হওয়া ভর্তির আবেদন চলবে আগামী ১১ আগস্ট পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে ২০ আগস্ট। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে আবেদন করা যাবে। যাচাই-বাছাই শেষে ভর্তির কাজ হবে ৭ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। আবেদনের বিস্তারিত তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।