রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছানো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই যুদ্ধের শেষ চান কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে তাঁর মনে। যদিও এক দিন আগেই চুক্তি নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ শেষে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে ফেরেন ট্রাম্প। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘বেসামরিক এলাকা, শহর ও মফস্‌সলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর কোনো কারণ নেই পুতিনের। এতে আমার মনে হচ্ছে তিনি হয়তো চান না যুদ্ধ শেষ হোক। তিনি শুধু আমার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছেন। তাঁকে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ভিন্নভাবে সামাল দিতে হবে।’

গত কয়েক দিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পুতিনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা একটি পোস্টে তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে লিখেছিলেন, ‘থামুন।’ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ওই মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে শুক্রবার মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। সেদিন ট্রাম্প বেশ আশা জাগিয়ে বলেছিলেন, আলোচনা করার জন্য ‘আজ বেশ ভালো একটি দিন’। রাশিয়া-ইউক্রেন একটি চুক্তি সই করার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

আরও পড়ুনরাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তির খুব কাছাকাছি, বললেন ট্রাম্প২৬ এপ্রিল ২০২৫

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এককাট্টা সমর্থন পেয়ে আসছিল কিয়েভ। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার বদলে উল্টো দেশটির ওপর চড়াও হন তিনি। বারবার সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে।

যদিও এরই মধ্যে যুদ্ধ থামাতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এর অংশ হিসেবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসেছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। ট্রাম্প নিজেও জেলেনস্কির সঙ্গে দুবার বৈঠক করেছেন। এর মধ্যে প্রথমবার ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে। আর দ্বিতীয়বার ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায়—শনিবার।

আরও পড়ুন কুরস্ক ‘পুনর্দখলে’ রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সেনারা, প্রশংসায় মাতল মস্কো২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনপানামা ও সুয়েজ খাল বিনা মাশুলে ব্যবহার করতে চান ট্রাম্প৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ