ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র, দায়িত্বশীল সমাধানের আহ্বান
Published: 28th, April 2025 GMT
কূটনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। পরিস্থিতির ‘দায়িত্বশীল সমাধানের’ ন্য কাজ করতে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। কাশ্মীরে পেহেলগামে বন্দুকধারীদের সাম্প্রতিক হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রতি সমর্থন জানালেও প্রকাশ্যে পাকিস্তানের কোনো সমালোচনা করেনি। ভারত ২২ এপ্রিলের ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে ই-মেইল বার্তায় বলেন, ‘এটি একটি চলমান পরিস্থিতি এবং আমরা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা একাধিক স্তরে ভারত ও পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’ নি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে দায়িত্বশীল সমাধানের পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়।’
আরও পড়ুনপাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে পরীক্ষার মুখে ভারতের সামরিক বাহিনী৫ ঘণ্টা আগেমার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পাশে আছে এবং পেহেলগামে হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’ এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও একই কথা বলেছিলেন।
এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ভারত অব্যাহতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান থেকে ২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর পাকিস্তানের গুরুত্ব কিছুটা কমে গেছে। যদিও দেশটি এখনো ওয়াশিংটনের মিত্র।
ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক ও ফরেন পলিসি সাময়িকীর লেখক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, এখন পাকিস্তানের তুলনায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ঘনিষ্ঠ অংশীদার। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ভারত সামরিকভাবে প্রতিশোধ নিতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকতে পারে এবং এতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা না–ও করতে পারে। এমনটি ঘটলে তা ইসলামাবাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
কুগেলম্যান আরও বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ ও গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাসহ বিশ্বজুড়ে অনেক সমস্যা সামাল দিতে হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনকে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সামাল দিতে হতে পারে, বিশেষ করে উত্তেজনার শুরুর সময়ে।
আরও পড়ুনকাশ্মীরে হামলার ছবি দেখে ভারতীয়দের রক্ত ফুটছে: মোদি১৩ ঘণ্টা আগেওয়াশিংটনে কাজ করা পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও হাডসন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো হুসাইন হাক্কানি রয়টার্সকে বলেন, এ মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগ: পাকিস্তান সীমান্তের ওপার থেকে সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটছে কিংবা সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বিশ্বাস, ভারত দেশটির মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চায়। উভয় পক্ষই কয়েক বছর পরপর উত্তেজনায় জড়ায়। এবার পরিস্থিতি শান্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আগ্রহ নেই।
আরও পড়ুনসিন্ধু পানি চুক্তি কী, ভারত কি এটি বাতিল করতে পারে২৬ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’